অনিশ্চয়তার মুখে শাহমখদুম মেডিকেল কলেজের ৪২ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন

Spread the love
Print Friendly, PDF & Email
image_pdfimage_print

জন্মভূমি নিউজ ডেক্স

রাজশাহীর বেসরকারী শাহমখদুম মেডিকেল কলেজের ৪২ জন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এই ৪২ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৭ জন নবম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তাঁরা ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছেন। অন্য পাঁচজন শিক্ষার্থী অষ্টম ব্যাচের। তাঁরা ভর্তি হয়েছেন ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে।

প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত নয়টি ব্যাচে শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে শাহমখদুম মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না করায় প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) নিবন্ধিত হতে পারেনি। রাজশাহী মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠানটিকে অধিভুক্ত করেনি। এর ফলে প্রথম থেকে সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা মাইগ্রেশন নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে গিয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন।

এই শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পরে প্রতিষ্ঠানটি একরকম বন্ধ হয়েই পড়ে ছিল। পরে এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে আসেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের জিল্লার রহমান। পরে সব সমস্যা কেটে গেছে জানিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ আবার অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করে। একজন অবসরপ্রাপ্ত সচিবকে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেখে শিক্ষার্থীরাও ভর্তি হতে শুরু করেন। এভাবে পরের বছর নবম ব্যাচেও শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।

কলেজের শিক্ষার্থী ইশতিয়াকুল হাসান এমবিবিএস প্রথমবর্ষে ভর্তি হয়েছেন ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে। প্রথমবর্ষ, দ্বিতীয় বর্ষ শেষে গত ১৩ নভেম্বর ভিত্তিমূলক পরীক্ষায় বসার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু তা হয়নি। তাই তৃতীয় বর্ষে ওঠা হয়নি ইশতিয়াকুলের। তিনি এখন প্রথম বর্ষেই পড়ে আছেন।

তিনি জানান, মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের তৃতীয় বর্ষে উঠতে হলে প্রথম ও দ্বিতীয়বর্ষের একসঙ্গে ভিত্তিমূলক পরীক্ষা দিতে হয়। কলেজ যে বিশ^বিদ্যালয়ের অধিভুক্ত, সেই বিশ^বিদ্যালয় এই পরীক্ষা নিয়ে থাকে। শাহমখদুম মেডিকেল কলেজ এখনও রাজশাহী মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হতে পারেনি। তাই গতবছর এই পরীক্ষায় অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বসতে পারেননি। তখন তাদের বলা হয়েছিল, পরের বছর তারা অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গেই ভিত্তিমূলক পরীক্ষা দিতে পারবেন। কিন্তু গত ১৩ নভেম্বর সারাদেশে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ভিত্তিমূলক পরীক্ষা হয়ে গেছে। শাহমখদুমের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নিতে পারেননি। তাই অষ্টম ও নবম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এখনও প্রথম বর্ষেই পড়ে আছেন।

এখন তারা কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করছেন। ইতোমধ্যে ২২ জন শিক্ষার্থী আদালতে ২২টি মামলা করেছেন। তাঁরা অন্য প্রতিষ্ঠানে মাইগ্রেশনের দাবি জানাচ্ছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সাড়া দিচ্ছে না।

মাইগ্রেশনের দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রাজশাহীর খড়খড়ি এলাকায় কলেজে অবস্থান করেন প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক। শিক্ষার্থী ইশতিয়াকুল হাসান বলেন, ‘আমরা প্রত্যেক শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে ১৪ থেকে ১৮ লাখ টাকা দিয়েছি কলেজ কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু তারা আমাদের ভিত্তিমূলক পরীক্ষায় বসানোর ব্যবস্থা করতে পারেনি। এখন আমরা অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যেতে চাইলে তারা আমাদের ছাড়পত্রও দিচ্ছে না।’

শিক্ষার্থীরা জানান, মাইগ্রেশন করতে হলে কলেজ কর্তৃপক্ষের একটা চিঠি লাগে। নিজেদের দুর্বলতার কথা স্বীকার করে নিয়ে শিক্ষার্থীদের অন্য কোথাও ভর্তির সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে এই চিঠি লেখা হয় মন্ত্রণালয়ে। কলেজ কর্তৃপক্ষ এই চিঠি দিচ্ছে না। বিষয়গুলো নিয়ে মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসতে চেয়েছিলেন কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান স্বাধীন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এলেও স্বাধীন আসেননি। তাই শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা কলেজের শিক্ষক ডা. ফাতেমা সিদ্দিকাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে ফাতেমা সিদ্দিকা কথা দেন যে শিক্ষার্থীদের যে কোন প্রয়োজনে তিনি পাশে থাকবেন। এ ব্যাপারে তাঁর কাছ থেকে ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে লিখিত প্রতিশ্রুতিও আদায় করা হয়েছে। পরে তাঁকে কলেজ থেকে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।

ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা এই কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। জামায়াত-শিবিরকে অর্থায়ন করার অভিযোগে সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়ে তিনি কারাগারে যান। তখন কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়। তবে প্রতিষ্ঠানটিতে তিনি এখনও শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন।

যোগাযোগ করা হলে ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা বলেন, ‘আমি এই কলেজের অধ্যক্ষ ছিলাম। কোন আর্থিক সুবিধা না নিয়েই রাজশাহীতে একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাতে এখানে যোগ দিই। কিন্তু সমস্যাগুলোর সমাধান হয়নি। এখন আমি অধ্যক্ষ নই। তবে শিক্ষক হিসেবে রয়েছি। আমি যেহেতু অধ্যক্ষ ছিলাম, তাই শিক্ষার্থীরা আমাকেই ধরেছিল। আমি বলেছি, তাদের প্রয়োজনে তারা যে কোন সময় আমাকে পাবে। কোথাও যদি আমার স্বাক্ষর লাগে, আমি সেটাও দেব।’

মঙ্গলবারের ঘটনা নিয়ে ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বসা নিয়ে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান স্বাধীন আদালতে থাকার কারণে কলেজে আসতে পারেননি। তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন যে, আবার একটা সময় ঠিক করে বসবেন। তিনি আসতে পারবেন না। কিন্তু ততক্ষণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা চলে আসেন।’

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান স্বাধীনকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। শিক্ষার্থীরা প্রতারণার অভিযোগে যে ২২টি মামলা করেছেন তার প্রতিটিতেই স্বাধীনকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অধ্যক্ষ হিসেবে ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা ও চেয়ারম্যান হিসেবে সাবেক সচিব জিল্লার রহমানকে আসামি করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *