নিজস্ব প্রতিবেদক
বর্ষা মৌসুমে শুরু থেকেই প্রতি রাতে মাছ শিকার করে তা আবার সকালে মুখে মাছের পাতিল বহন করে বাজারে বিক্রি এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে প্রতিদিন। মাছ বিক্রির অর্থ দিয়ে দুই সন্তান নিয়ে জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিবন্ধী লিটন (৩৫)। লিটন উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের উচলীকাশিমপুর গ্রামের আমজাদ মন্ডলের ছেলে।
জীবন যুদ্ধে পরাজয় নয়, বিজয়ী হতে শত কষ্টের মধ্যেও জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া লিটন দুই পা প্রতিবন্ধী। এ ভাবেই পিতার সংসারে বেড়ে উঠার পর পারিবারিক জীবন গড়তে বিয়ে করেন পাশর্^বর্তী চাপড়া গ্রামের এক নারীকে। তাদের দাম্পত্ত জীবনে জন্ম নেয় ২ ছেলে। বড় ছেলে নাবিউল (১০) এক মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। সে মাদ্রাসাতেই অবস্থান করে।
ছোট ছেলে নূরনবী বয়স ৩ বছর পিতার সাথেই সর্বত্র চলাফেরা করে। তিনি কেবলমাত্র দুই হাতের উপর ভর দিয়ে চলাফেরা করেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস প্রায় দুই বছর পূর্বে দুই সন্তানকে রেখে স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যান পিতৃলয়ে। এদিকে পিতার সংসার থেকে পৃথক হওয়ার কারনে সন্তান দু‘টির প্রতিপালন তাকেই করতে হচ্ছে।
এবারে জীবন সংগ্রামে পরাজিত হয়ে কারো কাছে হাত পাতা নয়। বরং নিজের রোজগার দিয়ে জীবিকা নির্বাহে আত্নপ্রত্যয়ী হয়ে উঠেন লিটন। তাই তিনি এ বর্ষা মৌসুমে ছোট একটি নৌকা ও একটি জাল কিনে শুরু করেন মাছ শিকার ও বিক্রি। প্রায় দিনই তিনি ছোটডাঙ্গা বাজারে তার সারা রাতের শিকারকৃত মাছ পাতিলে নিয়ে ওই পাতিল মুখে করে নিয়ে বাজারে আসেন। যে দৃশ্যটি সম্প্রতি ক্যামরাবন্দি এ প্রতিবেদকের হাতে।
মাছ বিক্রির যে অর্থ হয় তা দিয়ে কোনমতে দুই সন্তান নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। এ ছাড়া অন্য মৌসুমে বাড়িতে হাঁস মুরগি প্রতিপালন করেন। সেগুলো বিক্রি করেও জীবিকা নির্বাহ করেন লিটন। উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে তিনি সুধুমাত্র প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়ে থাকেন। তাও আবার হ্যাকারদের চক্রে পড়ে সেই টাকাটাও খোয়া যায় মাঝে মধ্যে।
সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান এসএম মামুন বলেন, প্রতিবন্ধী লিটন খুবই মানবেতর জীবন যাপন করেন। আমরা পরিষদের পক্ষ থেকে যে কোন সুযোগ সুবিধা আসলে তাকে দেয়ার চেষ্টা করি। উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সোহেল রানা বলেন, তার চলাফেরার জন্য অতিদ্রুত একটি ট্রাইসাইকেররে ব্যবস্থা করা হবে এবং প্রতিবন্ধী সংক্রান্ত সকল সুযোগ সুবিধা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাকে দেয়া হবে।