বাঘা প্রতিনিধি।
রাজশাহীর বাঘায় মাদক বিরোধী অভিযানে র্যাব সদস্যদের উপর হামলা চালানোর ঘটনা ঘটেছে। এ সময় হামলাকারীরা র্যাব-৫ এর অভিযানিক দলের সদস্যদের এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি,ধাক্কা ধাক্কি করে বসতবাড়ির ভেতরে ঢুকায়ে গেট আটকায়ে আবদ্ধ করে হ্যান্ডকাপ, র্যাব জ্যাকেট, সরকারি রেইনকোট ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটায়।
এ ঘটনায় গত ১০ সেপ্টেম্বর র্যাব-৫ এর ডিএডি ইমরান আলী বাদি হয়ে বাঘা উপজেলার বারশতদিয়াড় গ্রামের রাজা ইসলামকে প্রধান আসামী করে তার বোন রুপালি, স্ত্রী বৈশাখী, পিতা আরমান আলী, রাহেলা মেম্বর সহ ৩৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০০/১৫০ জনের বিরুদ্ধে বাঘা থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নম্বর-৫ তারিখ ১০ /০৯ / ২০২৪।
এদিকে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে র্যাবের দায়ের করা মামলায় ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন – আলাইপুর (গাবতলীপাড়া) গ্রামের মৃত আব্দুল সাত্তারের ছেলে মোঃ জিবরুল মীর(৪২), উপর আতার পাড়া গ্রামের মৃত জয়নাল সরকার ছেলে মোঃ বেল্লাল আলী (৩৫), বারশত দিয়ার গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে মোঃ জয়নাল আবেদীন (৩৫), মহদিপুর গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে মোঃ জামাল হোসেন (৫০), আলাইপুর নাপিত পাড়া গ্রামের মৃত দোস্তুল আলীর ছেলে মোঃ রাকিব আলি (৩০), মহদিপুর গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে মোঃ হৃদয় আলী (১৯), উপর আতারপাড়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে মোঃ শাকিল আহমেদ ( ১৮), বারশত দিয়ার গ্রামের মেহেরুল ইসলামের ছেলে মোঃ বেল্লাল হোসেন (২৫), ভানুকর গ্রামের মৃত কলিম উদ্দিন মন্ডলের মোঃ নজরুল ইসলাম (৫০), আলাইপুর গ্রামের দলিল মন্ডলের ছেলে মোঃ মিনজুল, কেশবপুর গ্রামের মৃত ইয়াদ আলী শেখের ছেলে মোঃ রেজাউল শেখ (৫৮), মহদিপুর সবজি পাড়া গ্রামের এনামুল হকের মোঃ বাদল আলী (৩৬), মহদিপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত জান মোহাম্মদের ছেলে মোঃ ফজলু হক (৩৫),মহদিপুর সবজি পাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে মোঃ রিপন (৪২), আলাইপুর গাবতলীপাড়া গ্রামের ছেলে মোঃ আব্দুর রহমান মোঃ রুবেল (৩২), উপর আতারপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে মোঃ আবুল কালাম (৩৫) থানা বাঘা জেলা রাজশাহী কে র্যাব-৫ গ্রেফতার করে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সোমবার ০৯ সেপ্টেম্বর রাতে মাদক দ্রব্য উদ্ধার, নিয়মিত মামলার আসামী গ্রেপ্তার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে অফিসার ও ফোর্সসহ চারঘাট ট্রাফিক মোড়ে অবস্থাকালে জানতে পারেন মাদক ব্যবসায়ী রাজা ইসলামের বসতবাড়িতে সেসহ কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী ফেন্সিডিল মজুদ রেখে বিক্রয়ের জন্য অবস্থান করছে। এ খবরে রাত্রি সাড়ে ১০টায় সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সসহ মোটরাসাইকেল, পিকআপ ভ্যানে ঘটনাস্থল এলাকায় পৌছে আনুমানিক ১কিলোমিটার দুরে পিকআপ পার্টিকে রেখে সঙ্গীয় মোটরসাইকেল পার্টিকে নিয়ে রাজা ইসলামের বাড়ির কাছাকাছি পৌছেন। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ২জন ব্যক্তিকে আটকানোর চেষ্টা করেন এবং ১জনকে নাম জিজ্ঞাসা করলে তার নাম রাজা ইসলাম বলে জানায়। র্যাবের পরিচয় প্রদান করে তার বাড়িতে ফেন্সিডিল মজুদ আছে কিনা , জিজ্ঞাসাবাদ করতেই বৈধ সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও আক্রমন করার উদ্দেশ্য সোরগোল করে বলে কয়েকদিন আগে আমার বড় ভাইকে ৮৫০ বোতল ফেন্সিডিলসহ ধরেছে, আজকে আবার এসেছে। তোমরা কে কোথায় আছো এগিয়ে এসো। এরা পাইছে কি? এদেরকে ধরো।
এসময় সংঘবদ্ধ জনতা দেশীয় লাঠি, লোহার রড,ধারালো হাসুয়াসহ মামলার বাদি,তার সঙীয় এলএস সোহাগ হোসেন,এএসআই নজরুল ইসলামল্যাঃ কর্পোঃ জাহদুর রহমান,দুলাল হোসেন,নায়েক আফছার আলী, কনেস্টবুল মিজানুর রহমানের উপর অতর্কিত হামলা করে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি,ধাক্কা ধাক্কি করে বসতবাড়ির ভেতরে ঢুকায়ে গেট আটকায়ে আবদ্ধ করে রাখে। মুঠোফোনে বিষয়টি জানানোর পর,মোটরসাইকেল ও পিকআপ পার্টির সদস্যগন তাদের উদ্ধারের জন্য যুক্ত হয়।রাজা ইসলামের পিতা আরমান আলী বলে এর আগে এক ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছেন, এই ছেলেকে নিয়ে যেতে দিবনা বলে অজ্ঞান হওয়ার ভান করে শুয়ে পড়ে। এ সময় রাজা ইসলামসহ তার বোন,মা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে কিলঘুষি মারে। আরমান মারা গিয়েছে বলে গুজব ছড়ায় রাহেলা মেম্বর । অন্যান্য আসামীরা সঙীয়দের মারধর করে ৪ জোড়া চায়না হ্যান্ডকাপ,২টি র্যাব জ্যাকেট, ২টি সরকারি রেইনকোট ছিনিয়ে নেয়। পরে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে। পরে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন আহত র্যাব সদস্যরা।
স্থানীয়রা জানান, মাদক ব্যবসায় জড়িত সন্দেহে সাদা পোষাকে আসা র্যাব সদস্যরা রাজা ইসলামকে মারধর করে। সোরগোল শুনে গ্রামের লোকজন আগায়ে যায়। ঘটনার প্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ জনতার নিয়ম বহির্ভুত আচরণে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। আরমান আলী নামে একজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল বলে জানান স্থানীয় রবিউল আওয়াল।
রাজা ইসলাম বলেন, বছর খানেক আগে তিনি সৌদি থেকে বাড়িতে এসে গ্রামের হাবিবুর এর মোড়ে মুদি ব্যবসা শুরু করেছেন। সোমবার রাতে ২টি মোটরসাইকেলে সিভিল পোষাকধারি তিনজন ব্যক্তি দোকান থেকে ১০০ থেকে ১৫০ ফিট দুরে চাইপাড়া এলাকায় নিয়ে বলে তুই মাদক ব্যবসা করিস,মাদক কোথায় আছে বল। আমি মাদক ব্যবসা করিনা বলতেই সেখানে তারা মারধর করে। বাড়িতে তল্লাশির সময় পিতা,মাতা স্ত্রী ,বোনকে লাঞ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি তার। হামলা চালিয়ে র্যাব সদস্যদের মারধরের বিষয়ে বলেন,কারা কি করেছে তা জানিনা।
মনিগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হেলাল উদ্দীন রিয়াল জানান, বিষয়টি বাঘা থানা পুলিশকে জানানোর পর, সেনাবাহিনী , বিজিবি,পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তাদের নিয়ে যান। পরে দিন হ্যান্ডকাপ, র্যাব জ্যাকেট, সরকারি রেইনকোট,স্টিক লাঠি,১টি হেড ফোন থানায় জমা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো ব্যাগের ভেতরে পাওয়া গেছে বলে জানান।
মারধর ও লাঞ্চিতের অভিযোগ অস্বিকার করে মামলার বাদি ইমরান আলী বলেন, মাদকের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে সরকারি কাজে বাঁধা প্রদান করেছে সেখানকার জনগন। তার দাবি,র্যাব অন্যায়ভাবে কিংবা আক্রোশমূলক কোন কাজ করেনি।
বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু সিদ্দিক বলেন, র্যাবের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় ১৬জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।