সুকমল চন্দ্র বর্মন কালাই উপজেলা প্রতিনিধি :
সহপাঠীদের সঙ্গে শ্রেণিকক্ষ মাতিয়ে রাখতো নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরেফিন রহমান সিয়াম। পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় ক্লাস শেষ করে সংসারের কাজে সহয়তা করতো। কিন্তু এখন তার সব চাঞ্চল্য চার দেয়ালের মাঝে আবদ্ধ। ঘুরতে হচ্ছে হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে। প্রতি মাসে গিলতে হচ্ছে প্রায় ৭০ হাজার টাকার ওষুধ।
নিয়মিত নিতে হচ্ছে রক্ত। এভাবে জীবন বাঁচানোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ১৬ বছর বয়সের আরেফিন রহমান সিয়াম।
বিরল অ্যাপ্লাষ্টিক অ্যানিমিয়া বা অবর্ধক রক্ত সল্পতা। এ অবস্থায় বনমেরু ট্রান্সপ্লান্ট করা না গেলে মৃত্যু তার অবধারিত বলেছেন চিকিৎসকরা। বনমেরু ট্রান্সপ্লান্ট করতে খরচ হবে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। কিন্তু সিয়াম নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হওয়ায় সেই সাধ্য নেই। যা সঞ্চয় ছিল সব চিকিৎসা বাবদ ব্যয় করে আজও সুস্থ্য হয়নি সিয়াম। তার সুস্থ্যতার জন্য গত ২৫ মাসে ৩২ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়েছে। এখন প্রতিমাসে রক্ত দেওয়া ছাড়াও ঔষধের জন্য খরচ হচ্ছে ৭০ হাজার টাকা।
কালাই পৌরশহরের পৌরপাড়া মহল্লার আশিকুর রহমানের বড় ছেলে আরেফিন রহমান সিয়াম, কালাই উপজেলায় অবস্থিত ওমর কিন্ডারগার্টেন স্কুল এন্ড ওমর গার্টেন একাডেমির নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
সিয়াম অসুস্থ হয় ২০২২ সালে। শরীরে তার রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। চিকিৎসার জন্য তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত বছরের আগষ্ট মাসে হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান ডা. সুরঞ্জিত সরকার তিতাস সিয়ামের অবর্ধক রক্তশূন্যতা রোগ শনাক্ত করেন। এটি একটি বিরল রক্তব্যাধি। যাতে শরীর প্রয়োজনীয় সংখ্যক রক্তকণিকা উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। এরপর ঢাকা, রংপুর এবং ভারতের ভেলোর সিএমসি সহ একাধিক হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরিক্ষার পর সেখানকার চিকিৎসকগণও সিয়ামের শরীরে একই রোগ শনাক্ত করেন। দুই দেশের চিকিৎসকগণ দ্রুত সময়ের মধ্যে সিয়ামের বনমেরু ট্রান্সপ্লান্টের পরামর্শ দিয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। রক্তের প্লাটিলেট ১৫ হাজার এবং হিমোগেগ্লোবিন মাত্র ৬। বর্তমানে ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালের হেমাটোললজি বিশেষজ্ঞ ডা. কর্ণেল মো: মোস্তাফিল করিম সিয়ামের চিকিৎসা করছেন।
সিয়ামের বাবা একজন জুতা ব্যবসায়ী। কালাই মসজিদ মার্কেটে তার দোকান আছে। সেই দোকানের আয় দিয়েই তাদের সংসারের খরচ চলতো। কিন্তু দোকানের মালামাল বিক্রি করে এবং ধারদেনা করে এ পর্যন্ত সিয়ামের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে তার খরচ হয়েছে ৩২ লক্ষাধিক টাকা। এখন ছেলে সিয়ামের বনমেরু ট্রান্সপ্লান্ট করার মত সামর্থ্য তার নেই। তাই ছেলেকে বাঁচাতে বিত্তবান সহৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে তিনি সহযোগিতার আহবান জানিয়েছেন।
সিয়ামের বাবা আশিকুর রহমান বলেন, ছেলের চিকিৎসার জন্য এখনো প্রতিমাসে ৭০ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হয়। ছয় শতকের বসতভিটা আর একটি জুতার দোকানই আমার সম্বল। যা কিছু ছিল সবই ব্যয় করেছি। এখন আমি নিঃস্ব। তারপরও ছেলেকে সুস্থ্য করতে পারিনি। এখন কিভাবে ছেলের চিকিৎসা ব্যয় মেটাবো ভেবে পাচ্ছি না। বনমেরু ট্রান্সপ্লান্ট করতে দেশে ২৫ থেকে ৩০ লাখ এবং ভারতে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা খরচ হওয়ার কথা চিকিৎসকগণ জানিয়েছেন। সিয়ামকে বাঁচাতে হলে দ্রুত বনমেরু ট্রান্সপ্লান্ট করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ অবস্থায় আর কোন উপায় না পেয়ে ছেলেকে বাঁচাতে সরকার ও সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের কাছে আর্থিক সহযোগিতার আকুতি জানিয়েছেন।
সাহায্য পাঠানো যাবে:
আশিকুর রহমানের অগ্রণী ব্যাংকের কালাই শাখার সঞ্চয়ী হিসেব নাম্বার: ০২০০০১৮৮৪০৬৯৩,
বিকাশ নং: ০১৭৫৩২৬২৯১০
নগদ নং: ০১৭২৫-৭৩৩৫৫৫ (সিয়ামের বাবা)