মোঃ মাসুদ নরসিংদী ,
চলতি মাসে হঠাৎই যেন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে নরসিংদী জেলা।অবৈধ অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে গুলি করে টাকাও মানুষের জীবন নিয়ে নিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে এসব অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে বা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে।আইন-শৃঙ্খলার এ ধরনের ব্যাপক অবনতি দেখে সাধারণ মানুষ এখন অনেকটাই ভীত হয়ে পড়েছেন।মাত্র ১৩ দিনের মধ্যে তিনটি ঘটনা নজিরবিহীন আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়েছে নরসিংদী জেলায়।
চলতি মাসের ৪ তারিখ রায়পুরায় মোবাইল ব্যাংকিং(নগদ)এর দুই কর্মীকে প্রকাশ্যে গুলি করে ৬০ লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।যেই ঘটনা বাংলা সিনেমা কেও হার মানিয়েছে।রায়পুরার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের হাসনাবাদ সংলগ্নে ১০ নং ব্রিজের কাছে এই ছিনতাই এর ঘটনা ঘটে।এই ঘটনায় গুলিবদ্ধ হন নগদের সুপারভাইজার পলাশ উপজেলার চরনগরদী এলাকার রশিদ পাঠানের ছেলে দেলোয়ার হোসেন(৫০)এবং একই উপজেলার ইছাখালী গ্রামের মৃত আমির চান মিয়ার ছেলে নগদের মাঠকর্মী শাহিন মিয়া(২৫)।এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার বা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার বা টাকা উদ্ধার কিছুই করতে পারেনি পুলিশ।
অন্যদিকে নরসিংদী সদরে প্রকাশ্যে দিবালোকে এক ইউপি সদস্যকে গুলি করে এবং পরে জবাই করে নিশংসভাবে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।ঘটনা ঘটিয়ে বীরদর্পে চলে যায় তারা।১৫ এপ্রিল সোমবার দুপুরে মাধবদী থানার আমদিয়া ইউপি সদস্য রুবেল(৪০) কে বৈয়াম বেলাবো যাওয়ার পথে পাকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে পাঁচ ছয় জন সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে গুলি করে ও জবাই করে হত্যা করে তাকে।অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।এই ঘটনায় একেবারে হতবাক হয়ে যায় সাধারণ মানুষ।প্রচন্ড ভয় এবং আতঙ্ক নিয়ে চলছে জেলাবাসী।এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার বা অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
তার ঠিক দুইদিন পরেই রায়পুরায় ঘটে আর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। ১৭ এপ্রিল রায়পুরায় ভোরে দুই পক্ষের প্রকাশ্যে গোলাগুলি হয়।এতে নিহত হয় একজন এবং গুলিবিদ্ধ হয় একজন।রায়পুরার নিলিক্ষা ইউনিয়নের সোনাকান্দি গ্রামের আমিরবাদ নামক স্থানে এই ঘটনা ঘটে।গুলিবিদ্ধ হয়ে জয়নাল ভূঁইয়ার ছেলে সাগর ভুইয়া (২০)নিহত হয় এ সময় মোঃ হান্না(১৭) এক তরুণ পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়।অসংখ্য বাড়িঘর ভাঙচুর হয়।বিবাদে জড়িয়ে পড়ে অনেকেই।এই ঘটনায়ও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে পুলিশ।এত গোলাগুলি হলেও কাউকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
এসব বিষয়ে জানতে মোবাইলে ফোন দিলে নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন,আমি তো চড়ে আসছি পরে কথা বলি!!পরবর্তীতে একাধিক বার তাকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
অল্প দিনের ব্যবধানে এই তিনটি ঘটনা নাড়া দিয়েছে নরসিংদীবাসীকে।সাধারণ মানুষ মনে করছেন সন্ত্রাসীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে নরসিংদী।পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।সন্ত্রাসীরা ইচ্ছা করলেই যেকোন ঘটনা ঘটাতে পারছে।ঘটনা ঘটিয়ে নিরাপদে চলেও যেতে পারছে।এরই মধ্যে বইতে শুরু করেছে উপজেলা নির্বাচনের হাওয়া।যেভাবে নরসিংদী জুড়ে রাম রাজত্ব কায়েম করেছে সন্ত্রাসীরা সামনে ঘটতে পারে আরো বড় ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা।তাই নরসিংদীতে সন্ত্রাসীদের অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধে অধিকতর উচ্চ পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা কামনা করছেন সাধারণ মানুষ।