স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, গাজীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধদের অনেকের শরীরের ৯০-১০০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের সবার অবস্থাই আশঙ্কাজনক। গতকাল সন্ধ্যায় হাসপাতালে ভর্তি দগ্ধদের দেখতে এসে এ কথা জানান তিনি। শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে পূর্ণবয়স্ক পাঁচজন ও শিশু সাতজন চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
এর আগে বিকাল সাড়ে ৫টায় উপজেলার মৌচাক তেলিরচালা টপস্টার এলাকায় এ ঘটনায় নারী-শিশুসহ অন্তত ৩৫ জন দগ্ধ হয়েছেন।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন জানান, তেলিরচালা এলাকায় শফিক খান তার বাসার জন্য একটি গ্যাস সিলিন্ডার আনেন। পরে সিলিন্ডারটি চুলার সঙ্গে লাগানোর সময় গ্যাস লিক হতে থাকে। ভয় পেয়ে তিনি সিলিন্ডারটি বাইরে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেন। এ সময় একটি মাটির চুলার আগুন থেকে সিলিন্ডারের গ্যাসে অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয়। রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী সবাই কমবেশি দগ্ধ হয়েছেন।
দগ্ধ পোশাক শ্রমিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ইফতারের আগে ওই গলিতে অনেক লোকজন চলাচল করছিল। ঠিক তখন সিলিন্ডারটিতে বিস্ফোরণ ঘটে ও আগুন লাগে। সেই আগুনে গলিতে অবস্থানকারী ও চলাচলরত লোকজন দগ্ধ হন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি জানান, তেলিরচালা এলাকায় শফিক খানের বাড়িটি স্থানীয় কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ওই বাড়ির নির্দিষ্ট রান্নাঘরের ভাড়াটিয়া কারখানা শ্রমিকরা রান্না করছিলেন। বুধবার ইফতারের আগ মুহূর্তে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে একটি পরিবারের গ্যাস সিলিন্ডারের গ্যাস ফুরিয়ে গেলে নতুন আরেকটি সিলিন্ডারে সংযোগ দেওয়ার সময় নতুন সিলিন্ডার দিয়ে গ্যাস বের হতে থাকে। এ অবস্থায় সিলিন্ডারটি রাস্তায় ফেলে দেওয়া হলে পাশের মাটির চুলা থেকে আগুন ধরে যায়। পরে বিস্ফোরিত হয়। এতে রাস্তায় থাকা লোকজনও দগ্ধ হয়। যেহেতু এটা শ্রমিক কলোনি, তাই এই অঞ্চলটি খুবই জনবহুল।
কোনাবাড়ী পপুলার হসপিটালের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো. জাহিদ জানান, সিলিন্ডারের আগুনে দগ্ধ ১০ জনের অধিক রোগী এসেছিলেন। তাদের সবার শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে। পরে তাদের গেট থেকেই অ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
দগ্ধদের মধ্যে কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন ওই এলাকার শফিক খান (৪২), মোন্নাফ (১৭), তারেক (১৮), কুদ্দুস মিয়া (৩৫), সোলায়মান (৮), ফাতেমা (১০), মো. কুটি (৪০), রাব্বি (১২), শারমিন (৭), মোতালেব (৪০), সুমন (৩৫), লালন (২০), লাদেন (২২), সাইদুল (২৬), ফারজানা (১০), সুফিয়া (৯), নার্গিস (২২), কমলা বেগম (৫৭), আরিফুল (৩২), তাওহীদ (৬), তাইফা (৩), নাইম (১০), সাকিবুল (৭), নিরব (৯) ও নুরনবী (৮)। অন্যদের পরিচয় জানা যায়নি।