রাজশাহী-৩ আসন নিয়ে দৌড় শুরু, বাড়ছে আলোচনার ঝড়

দেশের খবর
Spread the love
Print Friendly, PDF & Email
image_pdfimage_print

নিজস্ব সংবাদদাতা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও নির্ধারিত না হলেও রাজশাহীতে শুরু হয়েছে নির্বাচনী তৎপরতা। জেলার ছয়টি আসনেই সরব হয়ে উঠেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রস্তুতি বেশ জোরদার। ইতোমধ্যে জামায়াত পাঁচটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে।

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনেও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক গরম বাতাস। মহানগরের উপকণ্ঠে অবস্থিত হওয়ায় আসনটি সব দলের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আওয়ামী লীগের আধিপত্য থাকলেও এবার তৎপরতা বেড়েছে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের।

বিএনপির পক্ষ থেকে তিনজন সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। তারা হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সহসম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রায়হানুল ইসলাম রায়হান এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত অ্যাডভোকেট কবির হোসেনের ছেলে নাসির হোসেন অস্থির।

শফিকুল হক মিলন দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকায় সক্রিয় এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। তিনি ছাত্রদল থেকে রাজনীতি শুরু করে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং এখন কেন্দ্রীয় কমিটিতে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৮ সালে তিনি এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন।

শফিকুল হক মিলন বলেন, ‘‘বিগত ১৭ বছর আওয়ামী লীগ দেশে অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল। দিনের ভোট রাতে হয়েছে। পরিস্থিতি পাল্টেছে। আমরা আশা করছি, একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটিই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে কাজ করছি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আশা করছি, এবারও দলের নীতিনির্ধারণী মহল আমাকে মনোনয়ন দেবেন।’’

রায়হানুল ইসলাম রায়হানও ছাত্রদলের মাধ্যমে রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং বর্তমানে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তিনি জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি ও বিএনপির যুগ্ম আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। রায়হান বর্তমানে দলের ৩১ দফা কর্মসূচির প্রচারে অংশ নিচ্ছেন নিয়মিত। নাসির হোসেন অস্থিরও এলাকায় নিজ অবস্থান দৃঢ় করতে তৎপর।

রায়হানুল আলম বলেন, ‘‘পবা আমার জন্মস্থান। আমি সব সময় পবা ও মোহনপুরবাসীর সুখে-দুখে পাশে আছি। এ আসনে ২০১৮ সালে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু পাইনি। আশা করছি, দল সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে এবার আমাকে মনোনয়ন দেবে। কারণ এলাকায় সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা,পবা-মোহনপুরের নেতৃত্ব দিবে এই এলাকারই মানুষ, বাইরের কেউ নয়।’’

জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ ইতোমধ্যে স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি পাঁচবার হড়গ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। জামায়াত তার প্রার্থিতায় আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে।

অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘‘জামায়াত একটি সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক সংগঠন। দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাদের নেতাকর্মীরা আগাম নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছেন। তারা সম্মিলিতভাবে সে কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। দলের নীতিনির্ধারণী মহল আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আমিও সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছি। আশা করছি এ নির্বাচনে পবা-মোহনপুরবাসী আমার সাথে থাকবেন।’’

জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী আব্দুস সালাম পূর্বে এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তিনি জানান, ‘‘নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হলে তারা অংশগ্রহণ করবে।’’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে দলের জেলা সভাপতি হাফেজ মাওলানা মুরশিদ আলম ফারুকী জানিয়েছেন, ১৩ মে দলের আমীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম রাজশাহী সফরে এসে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করবেন।

তিনি বলেন, ‘‘প্রার্থী চুড়ান্ত না হলেও নেতাকর্মীরা মাঠে রয়েছে। সাংগঠনিক তৎপরতার মাধ্যমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যার অংশ হিসেবে আগামী ১৩ মে রাজশাহীতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।’’

সব মিলিয়ে রাজশাহী-৩ আসনে নির্বাচন ঘিরে জমে উঠেছে রাজনৈতিক মাঠ। নেতাকর্মীরা সক্রিয়ভাবে প্রচারে নেমে পড়েছেন এবং সাধারণ ভোটারদের সাথেও গড়ে তুলছেন যোগাযোগ। এখন দেখার বিষয় এ আসনে বিএনপির হাই কমান্ড কাকে সবচেয়ে উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে মনে করছেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে গঠিত এ আসনে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মেরাজ উদ্দিন মোল্লা (প্রয়াত)। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালে একই দলের আয়েন উদ্দিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে এমপি হন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৬৬১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৮০ জন, নারী ভোটার ২ লাখ ৪৭৮ জন এবং হিজড়া ভোটার ৩ জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *