এম, এ কাশেম, বিশেষ প্রতিনিধি চট্টগ্রাম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই অংশে ৬০ কিলোমিটার জুড়ে তিন চাকার বাহনের কারণে দুর্ঘটনা বেড়ে চলেছে। আর তাতে ঝরে যাচ্ছে অনেক গুলো তাজা প্রাণ। এতে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব ও বরণ করে অভিশপ্ত জীবন পার করছেন অনেকে। কাগজে কলমে মহাসড়কে তিন চাকার বাহন চলাচল নিষিদ্ধ থাকলে ও বাস্তবে তার উল্টো চিত্র।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মীরসরাই উপজেলার ধুমঘাট থেকে চট্টগ্রাম শহরের প্রবেশদ্বার সীতাকুন্ড উপজেলার সিটি গেইট পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার এলাকায় অবাধে চলাচল করছে সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা, নসিমন ও করিমন। এতে করে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ। বিশেষ করে সড়কের ইউটার্নগুলোতে রাস্তা পার হওয়ার সময় ও উল্টো পথে চলাচলের কারণে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে।
শুক্রবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় মীরসরাই উপজেলার বড়তাকিয়া বাইপাসে এলাকায় রাস্তার পার সময় দ্রুতগামী বাসের ধাক্কায় ব্যাটারিচালিত রিক্সার যাত্রী সাাদিয়া আফরীন জুঁথি নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত হয়। একই দিন দুপুরে মীরসরাই পৌর সদর বাইপাসে ব্যাটারিচালিত রিক্সাকে বাঁচাতে গিয়ে যাত্রীবাহী একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা লাগে। এসময় বাসে থাকা ১৫ যাত্রী আহত হন। অতি সম্প্রতি উপজেলার মস্তাননগর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় জসীম উদ্দিন নামে এক অটোরিক্সা চালক নিহত হন। মোটরসাইকেল ও উল্টোদিক থেকে আসা একটি সিএনজিচালিত অটো রিক্সার সংঘর্ষে মোটরসাইকেলে থাকা আরোহী লক্ষ্মীপুর জেলার শমসেরাবাদ লামছড়ি এলাকার মৃত জামাল উদ্দিনের পুত্র শাহাদাৎ হোসেন (৫৫) মাসড়কের মাঝে পড়ে নিহত হন।
এর আগে নয়দুয়ারি এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিক্সর সাথে ধাক্কা লেগে সাইফুল ইসলাম নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। বড়তাকিয়া এলাকায় অবস্থিত খৈয়াছরা ঝরণার রাস্তার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা সিএনজিচালিত অটোরিক্সকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলে একই পরিবারের ৩ জন সহ ৫ জন নিহত হন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত এবং অতি ব্যস্ত এই মহাসড়কে প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার গাড়ি চলাচল করে থাকে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়কপথে পণ্য নেয়ার একমাত্র রাস্তা এটি। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এসব পরিবহন অনেক সময় উল্টো পথেও ছুটে চলছে। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, যাচ্ছে প্রাণ অথবা পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে অনেককে। পুলিশের অভিযানের কারণে কিছুদিন বন্ধ থাকলেও আবারও বেড়েছে এসব গাড়ির দৌরাত্ম্য।
জানা গেছে, মহাসড়কে চলাচলরত: থ্রি-হুইলারকে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ চিহ্নিত করে আইন প্রণয়নের মধ্য দিয়ে ২০১৬ সালের আগস্ট মাস থেকে স্থায়ীভাবে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। ওই নিষেধাজ্ঞায় প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতে প্রায় ৮ বছর মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল অনেকটাই বন্ধ ছিলো। মহাসড়কে নিষিদ্ধ ওই সব যানবাহন আটক, জব্দ ও জরিমানা করা হাইওয়ে পুলিশের নিত্যকর্মের অংশে পরিণত হয়। পুলিশের ভয়ে রিক্সা চালকরাও মহাসড়কে কম উঠতো।
কিন্তু, জুলাই-আগস্ট পরবর্তী সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই অংশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা কিছুটা স্থবির হয়ে পড়ায় নিষিদ্ধ এসব যানবাহনের ফের বেপরোয়া চলাচল শুরু হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পুলিশের চোখের সামনেই অবাধে চলছে এসব থ্রি-হুইলার।
সচেতন মহল বলছে, হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজ না করলে এসব গাড়ি মহাসড়কে চলাচল করে কী ভাবে। কিছু দালাল চক্রের টোকেনের সহযোগিতায় মহাসড়কে চলছে এসব সিএনজি ও অটোরিক্সা।
জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমাদের অভিযান শুরু করা হয়েছে। কিন্তু কোনো ভাবেই থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধ করা যাচ্ছে না। এখন অভিযানে মামলা দিতে গেলে বা থ্রি-হুইলার আটক করতে গেলেও পুলিশের সাথে চালকরা উগ্রতা দেখায়। রিক্সা বা থ্রি-হুইলার চালকরা আইন অমান্য করছে, কিন্তু, আমরা অভিযান পরিচালনা করলে পুলিশ নাকি বাড়াবাড়ি করছে- এমন কথাও শুনতে হচ্ছে। তারপরও আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে এবং থাকবে বলে জানান দেন হাইওয়ে থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন।
