আমরা কি এমন স্বাধীনতা কি আমরা চেয়েছিলাম’

দেশের খবর
Spread the love
Print Friendly, PDF & Email
image_pdfimage_print

জন্মভূমি নিউজ ডেক্স
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শুরু থেকেই সোচ্চার ছিলেন মহানগর’খ্যাত নির্মাতা আশফাক নিপুন। ছাত্র-জনতার সঙ্গে ছিলেন রাজপথেও। গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে এ সময়ের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটেছে। এসব নিয়েও কথা বলেছেন এই নির্মাতা। আহ্বান জানিয়েছেন, শান্তি বজায় রাখার।

তারই ধারাবাহিকতায় এবার আশফাক নিপুন ‘বিকল্প দেখান!’ শিরোনামে একটি ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যেখানে ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করে সবাইকে দেশ গড়ার আহ্বান জানান এই নির্মাতা।

আশফাক নিপুন লিখেছেন, ‘এটা ছিল পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট রেজিমের একটা চালু হুংকার। তারা জানত এর উত্তর দেওয়া সম্ভব না কারণ বিরোধী সব দল-মতকে তারা এতটাই কোণঠাসা করে ফেলছিল যে, চাইলেও উত্তর দেওয়া যেতনা। এক সময় আমরা অনেকেই, প্রায় সবাই মেনেও নিয়েছিলাম আগামী ৪০ বছরে কোনো পরিবর্তন হবে না। কিন্তু হাসিনাশাহীর পতন হল। কিভাবে? কারণ হাসিনা সরকারকে হঠাতে সবাই এক হয়েছিল। হাসিনাকে হঠাতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, ডানপন্থি, বামপন্থী, সব ধর্মের, সব পোষাকের, সব বর্ণের, বয়সের, পেশার নারী, পুরুষ, মানুষ এক হয়েছিল। যুদ্ধের এটাই নিয়ম। শেখ হাসিনা কতটা শক্তিশালী ছিলেন চিন্তা করে দেখেন আন্দোলনের ৩৬ দিন প্রায় সবাই ব্যক্তিগত মত, ফিলোসফি ভুলে গিয়ে রাস্তায়, অফলাইনে নেমে এসেছিলেন। গুলি খেয়েছেন, মারা গেছেন, আহত হয়েছেন কিন্তু রাস্তা ছাড়েন নাই। এটা বাংলাদেশে এক বিরাট ঘটনা। শেখ হাসিনার প্রতিপক্ষ ছিল ঐক্যবদ্ধ আমরা। আজকে শেখ হাসিনা যদি আবার ক্ষমতায় ফিরতে চান হাজার হাজার লাশের উপর দিয়ে। বিনা বিচারে, তাহলে তিনি কিভাবে আসবেন? সেই ঐক্য ভেঙে দিয়ে।’

এ সময় ঐক্যের প্রয়োজন বেশি দাবি করে নির্মাতা লিখেছেন, ‘আমাদের সাময়িক বিজয় হয়েছে। সাময়িক বিজয়ের পর নানা মতের মানুষ যখন আলাদা হওয়া শুরু করে তখন এই ঐক্যটা থাকে না। না থাকাটাই স্বাভাবিক। সবাই আমরা ধীরে ধীরে আমাদের ব্যক্তিগত এবং দলীয় দাবি আদায়ে অসুবিধা হওয়ায় আওয়াজ তুলছি, বিরক্ত হচ্ছি, ক্ষোভ প্রকাশ করছি। করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা ভুলে যাচ্ছি এই সময় ঐক্যের প্রয়োজন আরো অনেক বেশি। শেখ হাসিনা কিন্তু সেটা ভুলেন নাই। বাংলাদেশের সবচেয়ে বুদ্ধিমান এবং ধুরন্ধর কোনো রাজনৈতিক নেতা থাকলে সেটা তিনিই। তিনি জানেন, আমাদের চরিত্র। তিনি অপেক্ষা করছেন আমরা কবে নিজেরা নিজেরা বিরোধ, মারামারি শুরু করব আর সেই সুযোগে তিনি বিচারের সম্মুখীন না হয়ে আবার ক্ষমতায় ফিরবেন।’

সবাইকে সহনশীল ও সংযত হওয়ার তাগিদ দিয়ে আশফাক নিপুন লিখেছেন, ‘তাকে (শেখ হাসিনা) সেই সুযোগটা দিয়েন না। আমরা ভুল করছি। কোথাও কোথাও মাত্রাও ছাড়াচ্ছি। সেটা না ছাড়াই। আইন নিজের হাতে তুলে না নিই। যারা তুলে নেয় তাদের আইনের হাতে তুলে দেই। বিজয়ীর দায়িত্ব অনেক বড়। বিজয়ীর সমালোচনাও হয় বেশি, হোক। কাজেই সতর্ক হওয়ার প্রয়োজনও বেশি। আমরা সহনশীল, সংযত হই। কারণ এই মুহূর্তে অসহনশীল, অসংযত আমরাই স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় শক্তি। তাকে হাজার হাজার গুম, খুন, দুর্নীতির বিচারের মুখোমুখি করার কাজটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে করতে দেই। ততদিন পর্যন্ত একটু ধৈর্য ধরি? উষ্কানিতে উত্তেজিত না হই? গা না ভাসাই? সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাই দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মনোযোগী হন। ছাত্র-জনতা আপনাদের উপর বিশ্বাস রেখেছে। জানি অনেক সীমাবদ্ধতা আছে কিন্তু দ্রুত সেটার প্রতিফলন দেখানোর চেষ্টা করেন।’

সবশেষে তিনি লিখেছেন, ‘বিকল্প দেখান! এর বিকল্প “এমন স্বাধীনতা কি আমরা চেয়েছিলাম?” যেন না হয়ে উঠে সেদিকে আমরা সতর্ক হই। নাহলে “এমন স্বাধীনতা কি আমরা চেয়েছিলাম”র হাত ধরে অচিরেই আবার “বিকল্প দেখান!” মাথার উপর চেপে বসবে। সেটা কি চাই আমরা?’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *