জেলাপ্রতিনিধি
সম্প্রতি কিছুদিন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও বাংলাদেশের জনকল্যাণে শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের অবদানকে খাটো করতে আমানা গ্রুপের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়িক সম্পর্ক, দেশে সন্দেহজনক প্রক্রিয়ায় একের পর এক শিপিং কোম্পানি গঠন, বিদেশে তার অংশীদারদের নামসর্বস্ব কোম্পানিতে রহস্যময় তৎপরতা ও বিতর্কিত ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটে জড়িত করে বিভিন্ন পত্র/পত্রিকায় প্রকাশের মাধ্যমে প্রকাশ্যে নিয়ে আসার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গণধিক্কৃত, জনবিচ্ছিন্ন, সুযোগসন্ধানী হিসেবে আখ্যায়িত কতিপয় ষড়যন্ত্রকারীরা। সেখানে আমানা গ্রুপকে জামায়াতের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বলা হচ্ছে। এরপর দলীয় কোন্দলের জেরে স্থানীয় এক নেতাকে হত্যার মদদদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনের সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম এ.এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনসহ অন্যদের আসামি করে নতুন হত্যা মামলার ঘোষণা দেন। সবকিছু মিলিয়ে কেন্দ্রে ও রাজশাহী মহানগরীতে এ.এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে মহাবিপদে ফেলতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ষড়যন্ত্রকারীরা। এমন ষড়যন্ত্রে আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও জনগণের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
তারা বলেন যদি আমানা গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ফজলুল করিম জামায়াত হন তাহলে এ ঘটনা আজকে কেন জন্ম নিলো? কেন্দ্রীয় এক নেতা,রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ও সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইসতিয়াক আহমেদ লেমনের সাথে আমানা গ্রুপের চেয়ারম্যানের ঘনিষ্টের বিষয়টি কেন পত্রিকার পাতায় উঠে আসলো না ? তাহলেকি শুধু শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে বেকায়দায় ফেলতে তার বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র ?
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম এর রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় আমানা গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ফজলুল করিমের বাসা। একই এলাকায় বাসা বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদের। তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দেখভালের জন্য রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বেও রয়েছেন।
তিনিও ১৯৬৩ সালর ৫ জুন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ ও আমানা গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ফজলুল করিম সম্পর্কে মামা/ভাগিনা। তাহলে আমানা গ্রুপ জামায়াতের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিষয়টি এতোদিন কেন গোপন রেখেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ ?
এদিকে রাজশাহীতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদের সাথে আমানা গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ফজলুল করিম,বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইসতিয়াক আহমেদ লেমনের একাধিক ছবি হাতে এসেছে সাংবাদিকদের। ধারণা করা যাচ্ছে ছবিগুলো ২০১৯সাল থেকে ২০২১ সালের দিকের।
ছবি গুলোতে দেখা যায় বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ রাজশাহী মহানগরীর কুমারপাড়ায় সরকার টাওয়ারে অবস্থিত আমানা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান “আমানা ফান ভিলে” রেস্টুরেন্টে আমানা গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ফজলুল করিমের সাথে উঠে যাওয়া,রেস্টুরেন্ট পরিদর্শন ও শেষে ড. মুহাম্মদ ফজলুল করিমের সাথে একসাথে বসে খাওয়া দাওয়া করতে। অন্য আরেকটি ছবিতে একটি পুরনো বাসায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ ,রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ও সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইসতিয়াক আহমেদ লেমন,আমানা গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ফজলুল করিম ও মেহেদি হাসান রনি একসাথে বসে নাস্তা করছেন।
অন্যদিকে আমানা গ্রুপকে জামায়াতের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বলা হলেও আমানা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান “আমানা ফান ভিলে” কুমারপাড়ায় সরকার টাওয়ারের ৩য় ও ৪র্থ তলায় রেষ্টুরেন্ট ও ৫ম তলায় বাচ্চাদের গেমিং জোন রয়েছে। আর এই সরকার টাওয়ারটি হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের। রাজশাহীতে বর্তমানে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে মরিয়া ষড়যন্ত্রকারীদের মতে জামায়াতের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান! তাহলে জামায়াতের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে কি কারনে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ভাড়া দিয়েছে এ প্রশ্নের জবাব দেবে কে ?
এখানেই পরিস্কার বোঝা যায় এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের এই মসৃণ পথে কাঁটা ছড়ানোর তৎপরতায় নিজ দলের জেলা ও মহানগরের নেতৃবৃন্দরায়। তাঁর বিরোধিতায় নেমেছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার আমানা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান “আমানা ফান ভিলে” কুমারপাড়ায় সরকার টাওয়ারে ভাড়া দেয়ার বিষয়টি স্কীকার করে বলেন, কোন প্রতিষ্ঠান ভাড়া নেয়ার সময় কি কোথাও উল্লেখ থাকে তাদের প্রতিষ্ঠান জামায়াত এর প্রতিষ্ঠান?
আপনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থেকে জামায়াতের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষ্যাত আমানা গ্রুপকে বিগত ৫বছর থেকে আপনার সরকার টাওয়ার ভবনে ভাড়া দিয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নাটোর থেকে একজন এসে ভাড়া নিয়েছিলেন। আর আমি ব্যবসা করি। আর আপনি কি ভাড়াটিয়াকে ভাড়া দিবেন না? আমি কি তাহলে ব্যবসা করবো না? ভাড়াটিয়ার সাথে আমার চুক্তি আছে সেখানে কি জামায়াতে ইসলাম উল্লেখ আছে কিনা দেখেন।
সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতা হয়ে জামায়াতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষ্যাত আমানা গ্রুপকে ভাড়া দিয়ে জামায়াতের সহযোগীতা ও আমানা গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ফজলুল করিমের সাথে আপনার কিছু ছবি আছে সে বিষয়ে এই প্রতিবেদক জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের সাথে আমার কোন ছবি নেই। আর থাকলে জড়িয়েদেন আমিও জামায়াত করি। আমিতো রাজাকারের পুত্র হয়েছি আবার জামায়াতও করি এটাও জড়িয়ে দেন। রাজশাহী শহরে যারা জামায়াত ইসলাম করছে তারা কি ব্যবসা করে খাচ্ছে না?
জামায়াতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষ্যাত আমানা গ্রুপের বিষয়ে জানার পরে রাজনৈতিক ভাবে আপনার ওপড়ে কোন চাপ বা প্রভাব পরবে কি না প্রতিবেদক জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন কোন বিষয়ে আমার ওপড়ে কোন রাজনৈতিক প্রভাব পড়বে না। তাদের কাছে ৫মাসের মোট ১৬,০০,০০০/ সোলো লক্ষ টাকা ভাড়া পাওনা রয়েছে। কয়েকবার মৌখিক ভাবে তাদের প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। যদি তারা টাকা পয়সা না দেয় তাহলে তাদের মালপত্র নিয়ে পাওনা পরিশোধে হবে বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে আমানা গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম বলেন, আমানা গ্রুপ কোন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান না। অহেতুক আমাদের প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈকি প্রতিষ্ঠান বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। চট্টগ্রাম এর রাঙ্গুনিয়া উপজেলা একই এলাকায় আমার ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদের বাড়ি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্পর্কে আমার মামা হচ্ছেন। তার সাথে অনেক ছবিই তোলা আছে। রাজশাহীতেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ ,রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ও সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইসতিয়াক আহমেদ লেমনসহ যে ছবির কথা বলছেন সেটিও সঠিক।
জানতে চাইলে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে আমানা গ্রুপ একটি কোম্পানি গঠন করেছেন। সরকারিভাবে নিবন্ধনও নিয়েছেন। এখানে আইনের বাইরে কিছু করা হয়নি। আর আমানা গ্রুপের কর্মকর্তারা অন্য কোথায় কী করেছেন, সেটা আমার জানা নেই। আমার ইমেজ নষ্ট করতেই এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ‘যাঁরা বিরোধিতা করছেন, তাঁদের ব্যাপারে আমরা সতর্ক আছি। বিরোধিতা করে কোনো লাভ হবে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, রাজশাহীর এই পুরো বিষয়টি আমি অবগত আছি। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আলোচনা করা হবে। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সিদ্ধান্তে হবে সাংগঠনিক কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমি এরই মধ্যে দলের পুরো রিপোর্ট সংগ্রহ করে রাখবো। দল চাইলে আমি সে রিপোর্ট জমা দিব। দলের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক আমাকে যেভাবে নিদের্শনা দিবেন আমি সেভাবে কাজ করবো।