স্টাফ রিপোর্টার
আজ বুধবার চতুর্থ ধাপে দেশের ৫৮টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন করতে মঙ্গলবারই প্রস্তুতি জোরদার করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় ত্রিস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। নির্বাচন ভবন থেকে সার্বক্ষণিক ভোট পর্যবেক্ষণ করছে ইসি। এজন্য গঠন করা হয়েছে মনিটরিং সেল।
ইসি সূত্র জানায়, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট করতে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পুলিশ ও আনসার বাহিনী নিয়োজিত করার পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং র্যাব ও বিজিবি টহলরত থাকছে। আর সব এলাকায় সাদা পোশাকে থাকছে পর্যাপ্ত গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। যদি কেউ নির্বাচনের আচরণবিধি ভঙ্গ করেন তাহলে নির্বাচন কমিশন আইন অনুসারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
চতুর্থ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ভোটগ্রহণকালে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ১৭ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৯ জন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকছে। আর দুর্গম এলাকায় সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ থেকে ২১ জন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে।
সাধারণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবিও দায়িত্ব পালন করছে। নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনে প্রতি ইউনিয়নে থাকছে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ ছাড়া মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে, বিশেষ করে বিজিবির প্রতিটি মোবাইল টিমের সঙ্গে একজন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকছে। ভোট উপলক্ষে আজ ৫৮ উপজেলায় সাধারণ ছুটি।
চতুর্থ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২৫১ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৬৫ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২০৫ জনসহ মোট ৭২১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ নির্বাচনে ভোটার এক কোটি ৪৩ লাখ ৫৭ হাজার ৮২০ জন। দুর্গম এলাকার ১৯৭টি কেন্দ্রে মঙ্গলবারই ব্যালট পেপার পাঠানো হয়। আর আজ সকালে ভোট শুরুর আগেই ব্যালট পেপার পাঠানো হবে চার হাজার ৯৪৭টি কেন্দ্রে।
উপজেলা নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে চেয়ারম্যান পদে ১ জন, রংপুরের বদরগঞ্জে ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১ জন, টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একজন করে ২ জন এবং ফেনীর ছাগলনাইয়ায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১ জন আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
আজ দেশের ২৪ জেলার ৫৮টি উপজেলার নির্বাচন হচ্ছে। ২৪টি জেলার মধ্যে রয়েছে রংপুর বিভাগের ২টি, রাজশাহী বিভাগের ৪টি, খুলনা বিভাগে ১টি, বরিশাল বিভাগে ৪টি, ঢাকা বিভাগের ৩টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩টি, সিলেট বিভাগের ৩টি ও চট্টগ্রাম বিভাগের ৪টি জেলা। যে ৫৮টি উপজেলায় নির্বাচন হবে তার মধ্যে রয়েছে- রংপুর বিভাগের দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী, পার্বতীপুর ও নবাবগঞ্জ; রংপুর জেলার তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ।
রাজশাহী বিভাগের বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম, শেরপুর ও ধুনট; নওগাঁ জেলার নওগাঁ সদর মান্দা ও মহাদেবপুর, রাজশাহী জেলার চারঘাট ও বাঘা; সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ (ইভিএম) ও রায়গঞ্জ (ইভিএম)। খুলনা বিভাগের খুলনা জেলার রূপসা, দাকোপ ও বটিয়াঘাটা।
বরিশাল বিভাগের বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ, উজিরপুর ও বানারীপাড়া; পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া ও রাংগাবালী; ভোলা জেলার মনপুরা ও চরফ্যাশন; বরগুনা জেলার আমতলী ও তালতলী। ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা ও বোয়ালমারী; টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর, বাসাইল ও সখীপুর; কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর, কুলিয়ার চর ও ভৈরব। ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা, গফরগাঁও ও নান্দাইল, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া এবং জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি।
এ ছাড়া সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ সদর ও মধ্যনগর; সিলেট জেলার জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট; হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট ও মাধবপুর। চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর, বি.বাড়িয়া সদর ও বিজয়নগর, কুমিল্লা জেলার হোমনা, চান্দিনা ও চৌদ্দগ্রাম; ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া, চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী ও লোহাগড়ায়।
দেশে চার ধাপের উপজেলা নির্বাচন শুরু হয় ৮ মে। ৮ মে প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত হয় ১৩৯ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে অনুষ্ঠিত হয় ১৫৬টি উপজেলায় নির্বাচন। তৃতীয় ধাপে ২৯ মে অনুষ্ঠিত হয় ৮৭ উপজেলার নির্বাচন। আর চতুর্থ ধাপে আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৫৮ উপজেলার নির্বাচন। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে স্থগিত হওয়া ২০ উপজেলার ভোট হবে ৯ জুন।
উল্লেখ্য, দেশে প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালে। এরপর ১৯৯০ সালে দ্বিতীয়বার ও ২০০৯ সালে তৃতীয়বার, ২০১৪ সালে চতুর্থবার এবং ২০১৯ সালে পঞ্চমবার উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৯ সালে দেশে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে সময় ৪৮৮টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ৪৫৫টির নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হয়।
বাকি উপজেলাগুলোর নির্বাচন পরে অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৯ সালের ১০ মার্চ প্রথম ধাপে ৮২টি উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৮ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে ১২৩টি, ২৪ মার্চ তৃতীয় ধাপে ১২২টি, ৩১ মার্চ চতুর্থ ধাপে ১০৬টি এবং ১৮ জুন পঞ্চম ধাপে ২২টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
ভোট মনিটরিং সেল: চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার সুবিধার্থে উচ্চপর্যায়ের একটি মনিটরিং সেল গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। এই সেলে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থার প্রতিনিধিদের রাখা হয়েছে। সেলটির নেতৃত্বে রয়েছেন স্মার্টকার্ড তথা আইডিইএ-২ এর প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সায়েম। এই সেল নির্বাচন ভবন থেকে সকাল ৮টা থেকে ভোট পর্যবেক্ষণ করবে। যেখানে অনিয়ম দেখবে সেখানে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেবে।
১৭৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন: চতুর্থ ধাপে উপজেলা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সারাদেশে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ১৭৫ প্লাটুন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম। ৭ জুন পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিজিবি মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে।