আমিরাতে প্রতি বছর চোরা পথে ঢুকছে শত শত টন স্বর্ণ

আন্তর্জাতিক
Spread the love
Print Friendly, PDF & Email
image_pdfimage_print

জন্মভূমি নিউজ ডেস্ক:
মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশ এবং এশিয়ার অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রতি বছর পাচার হচ্ছে শত শত টন স্বর্ণ। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসছে এই স্বর্ণের চালান।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই দাবি করেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক উন্নয়ন সহায়তা ও অ্যাডভোকেসি সংস্থা সুইসএইড। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে আমিরাতে চোরা পথে প্রবেশ করেছে মোট ৪৩৫ টন স্বর্ণ, এবং তার মধ্যে ৪০৫ টনের চালান এসেছে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে। বর্তমান বাজারে এই পরিমাণ স্বর্ণের মূল্য ৩ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি।

এছাড়া গত এক দশকে আমিরাতে চোরাচালানের মাধ্যমে এসেছে ২ হাজার ৫০০ টন স্বর্ণ, যার বর্তমান বাজারমূল্য ১১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। প্রতিবেদনে সুইসএইড বলেছে, ‘আমিরাতে চোরাই পথে ঢোকা এসব স্বর্ণ বৈধভাবে খনি থেকে উত্তোলন করা হয়নি। আইন এবং সরকারি বিধিনিষেধকে ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে (খনি থেকে) আহরণ করা হয়েছে। এর অর্থ বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর অবৈধভাবে যে পরিমাণ স্বর্ণ আহরণ করা হচ্ছে, তার পরিমাণ বৈধভাবে উত্তোলিত স্বর্ণের পায় সমপরিমাণ কিংবা কোনো কেনো ক্ষেত্রে বেশি।’

সুইসএইডের প্রতিবেদন প্রকাশের পর এ প্রসঙ্গে আরও বিস্তারিত জানতে আমিরাতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চোরাই স্বর্ণের প্রবেশ রোধে আমিরাতের সরকার গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বাজারে স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও রত্নের ক্রয়বিক্রয় সংক্রান্ত নতুন কিছু বিধিও জারি করেছে।

এর আগে ২০১৯ সালে স্বর্ণ চোরাচালান সংক্রান্ত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রয়টার্স। সেই অনুসন্ধানেও জানা গিয়েছিল যে আমিরাতে প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার স্বর্ণ চোরাপথে ঢুকছে।

আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, টনের পর টন স্বর্ণ চোরা পথে প্রবেশ করায় একদিকে যেমন আমিরাত বিশাল অঙ্কের কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে এই স্বর্ণ থেকে প্রাপ্ত অর্থ মুদ্রা পাচার, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের মতো অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছে।

সুইসএইডের একজন কর্মকর্তা এবং বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে অন্যতম লেখক মার্ক উমেল জানিয়েছেন এশিয়ার দেশগুলোতে স্বর্ণের চালান পাঠানোর ক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে করিডোর হিসেবে ব্যবহার করছে পাচারকারীরা। এক্ষেত্রে তাদের প্রধান সহায়ক চোরাচালান ইস্যুতে আমিরাতের শিথিল আইন।

‘যদি কোনো দেশে প্রায় প্রতি বছর ৪০০ টনেরও বেশি স্বর্ণ প্রায় বিনা বাধায় পৌঁছায়, কেনা-বেচা হয়– তাহলে বুঝতে হবে স্বর্ণ চোরাচালান প্রতিরোধে ওই দেশে কোনো কঠোর আইন নেই; কিংবা যদি থাকেও তাহলে সেই আইনের বাস্তবায়ন নেই।’

আফ্রিকার থেকে স্বর্ণ আমদানি করে, এমন দেশগুলোর আমদানি সংক্রান্ত তথ্য জাতিসংঘের বৈশ্বিক বাণিজ্যবিষয়ক তথ্যাগার ইউএন কমার্শিয়াল ট্রেড থেকে নিয়েছে সুইস এইড। সেই সঙ্গে সেসব দেশের স্বর্ণের বাজারের অভ্যন্তরীণ বাজারের তথ্যও সংগ্রহ করেছে। সংগৃহীত তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, জাতিসংঘের তথ্যের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ দেশীয় বাজারের তথ্যের মিল নেই। অর্থাৎ জাতিসংঘের তথ্যাগারে প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ ক্রয়কৃত স্বর্ণের যে পরিমাণ উল্লেখ করছে, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ স্বর্ণের বেচা-কেনা হয়েছে সেই দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বাজারগুলোতে।

অর্থাৎ চোরাই স্বর্ণের প্রবেশ ও বাণিজ্য বন্ধে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোর উৎসাহ কম।

এশিয়ার বিভিন্ন দেশে স্বর্ণ চোরাচালানের ক্ষেত্রে আমিরাতকে রুট হিসেবে ব্যবহার করছেন আন্তর্জাতিক চোরা কারবারিরা। তবে আমিরাতের কর্মকর্তরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি বছর বাড়ছে স্বর্ণের দাম। বর্তমানে এই মূল্যবান ধাতুর যে দাম, তা ২০০৯ সালের তুলনায় দ্বিগুণ।

এ অবস্থার সুযোগে বৈধভাবে স্বর্ণ উত্তোলনের পাশাপাশি বাড়ছে অবৈধভাবে উত্তোলনের হারও। সুইসএইডের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে বিশ্বের বিভিন্ন খনি থেকে বৈধভাবে তোলা হয়েছে প্রায় ৫০০ টন স্বর্ণ এবং অবৈধভাবে উত্তোলিত হয়েছে অন্তত ৪৪৩ থেকে ৫৯৬ টন স্বর্ণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *