ইউএনও জামাল হোসেনের প্রচেষ্টায় সরছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বর্জ্যের ভাগাড়।

দেশের খবর
Spread the love
Print Friendly, PDF & Email
image_pdfimage_print

মো লুৎফুর রহমান রাকিব স্টাফ রিপোর্টার :
দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের ডিভাইডার ও দুই পাশেই বর্জ্য স্তুপ করে ফেলে রাখে পৌরসভার কর্তৃপক্ষ ও বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরা। সড়কের কয়েকটি স্থান যেন মরা পশু, মরা হাঁস-মুরগি আর ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড় হয়ে উঠেছে। বর্জ্য পরিশোধানাগর ব্যবস্থা না থাকায় মারাত্মক পরিবেশ দূষণসহ জনজীবন দূর্বিষহ হয়ে পড়েছে। হুমকির মুখে জীব বৈচিত্র্য। পরিবেশ দূষণ রোধ ও জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মোঃ জামাল হোসেনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অবশেষে মহাসড়ক থেকে সরছে বালুজুড়ি খাল সংলগ্ন সেই ভাগাড়। সোমবার পৌর এলাকার নাটাপাড়া মৌজায় ভাগাড়ের জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। পৌর প্রশাসকের এমন উদ্যোগকে স¦াগত জানিয়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সাংবাদিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
জানা গেছে, বর্জ্য পদার্থের আধুনিক ও নিরাপদ অপসারণ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা বাংলাদেশের অন্যতম পরিবেশগত সমস্যা। পৃথিবীর অষ্টম জনবহুল ও দশম ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে বর্ধিত জনসংখ্যার সঙ্গে সমান তালে বেড়ে চলেছে সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যাও। বর্তমানে বাংলদেশে বর্জ্য সৃষ্টির পরিমাণ প্রতি বছর প্রায় ২২.৪ মিলিয়ন টন, অর্থাৎ মাথাপিছু ১৫০ কিলোগ্রাম। এ হার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০২৫ সালে দৈনিক প্রায় ৪৭ হাজার ৬৪ টন বর্জ্য উৎপন্ন হবে। এতে করে মাথাপিছু হার বেড়ে দাঁড়াবে ২২০ কিলোগ্রাম। এছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ন প্রক্রিয়ায় বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানা। এসব অবকাঠামোর জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বর্জ্য নিষ্কাশনের আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই। ফলে অসংখ্য মানুষের বাসগৃহ থেকে প্রচুর পরিমাণ গৃহস্থালি বর্জ্য প্রতিদিন যত্রতত্র নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। কঠিন বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থাও অত্যন্ত নাজুক এবং সেকেলে। বর্জ্য পদার্থকে রাস্তার পাশে এখানে-সেখানে স্তূপ করে রাখা হয় এবং তা পঁচে-গলে বাতাসকে মারাত্মক দূষিত করে।
মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম অংশ সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চৌদ্দগ্রামের বালুজুড়ি ও মিয়াবাজারে মহাসড়কের ভিাইডার ও দুই পাশে কাঁচাবাজারের ময়লা-আবর্জনা ও বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ফেলার কারণে স্তূপ তৈরি হয়েছে। এসব স্তূপে প্রতিনিয়ত মহাসড়কের দুই পাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা অধিকাংশ হোটেল রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য, পঁচা শাক-সবজি, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠাসহ নানা ধরনের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। আবার কোথাও রাস্তার পিচের ওপর আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এসব ময়লার ভাগাড়ে পশু-পাখি ও কুকুর-বিড়াল খাবারের উচ্ছিষ্ট ভক্ষণ করার সময় এলোমেলো করে মহাসড়কে ছড়িয়ে ফেলছে। সড়কের ওপরের এসব ময়লা-আবর্জনা যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং এসব ময়লা ধুলায় পরিণত হয়ে বাতাসে উড়ছে। বিশেষ করে বাতাসে ময়লা-আবর্জনা ও বিষাক্ত ধুলা উড়ে আশপাশের বাড়িঘরসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ছে। দুর্গন্ধে মহাসড়কে চলাচলকারী হাজার হাজার যানবাহনের চালক, যাত্রী ও পথচারীরা সমস্যায় পড়ছেন। সড়কের পাশের এলাকার বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। মহাসড়কের এসব স্থান দিয়ে চলার সময় নাকে রুমাল চেপে চলতে হয়। এক কথায়-মানুষের পরিবেশ ও স্বাস্থ্য অধিকার ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
সার্বিক পরিস্থিতিতে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মত বাংলাদেশেরও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। বর্জ্য বা অপদ্রব্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বর্জ্য সংরক্ষণ, নিরপেক্ষায়ন, নিষ্ক্রিয়করণ অথবা প্রক্রিয়াজাতকরণ করে ব্যবহারের উপযোগী বিভিন্ন নতুন জিনিস বানানো উচিত। এতে যেমন পরিবেশ লাভবান হবে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে দেশের মানুষ।
চৌদ্দগ্রাম পলিট্যাকনিকেল কলেজের সদ্য বিদায়ী অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে ময়লার ভাগাড়টি সরানোর জন্য ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু সরাবে বলে আর কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়নি কেউ। বর্তমান ইউএনও ময়লার ভাগাড়টি সরানোর ব্যবস্থা করায় সকলের উপকার হবে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মোঃ জামাল হোসেন বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহনে দেশের বিভিন্নস্থান ও বিদেশের মানুষও যাতায়াত করে। মহাসড়ক ও পলিট্যাকনিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ময়লার ভাগাড় হওয়ায় মানুষ দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এ ময়লার ভাগাড় সরাতে সুশীল সমাজের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে সোমবার পৌর এলাকার নাটাপাড়ায় সরকারি জায়গায় নির্দিষ্ট করা হয়েছে। শিগগিরই মহাসড়কের পাশ থেকে ময়লা সরানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *