নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী অঞ্চলে আম পাকতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই গাছ থেকে আম পাড়তে শুরু করেছে চাষিরা। এবার অফ ইয়ার হওয়ার পরেও রাজশাহী অঞ্চলের আমকে ঘিরে সাত হাজার কোটি টাকার বেশি বাণিজ্যে হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কর্মসংস্থানের জোগান হতে যাচ্ছে লক্ষাধিক মানুষের।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর এই চার জেলায় ৯৩ হাজার ২৬৬ হেক্টর জমিতে আম বাগান আছে। এগুলোতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন। গত বছর এ অঞ্চলে আম উৎপাদন হয়েছিল ১২ লাখ ৭ হাজার ২৬৩ টন। এবার উৎপাদনে ভাটা পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
কৃষি বিভাগের হিসাবে, চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। যা থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের আশা করা যচ্ছে। আম উৎপাদনকারী আরেক জেলা নওগাঁয় এবার বাগান রয়েছে ৩৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। এখানে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর রাজশাহীর ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমির আমবাগান থেকে এবার ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা আশা করছেন। নাটোরে ২ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। যা থেকে এক লাখ টনের মতো আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রাজশাহী অঞ্চলের এই চার জেলা মিলে ১২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিকটন আম উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য ৭ হাজার ২৪২ কোটি টাকা (প্রতি মেট্রিকটনের দাম ৫৭ হাজার ৯৩৭ টাকা ও প্রতি কেজির দাম ৫৮ টাকা ধরে)।
রাজশাহী জেলায় বুধবার (১৫মে) গুটি আম পাড়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে আম সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণ।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ম্যাংগো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২০ আগস্ট ইলামতি আম পাড়ার মধ্যে দিয়ে শেষ হবে আম পাড়ার নিদিষ্ট সময়।
রাজশাহীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মোছা. উম্মে ছালমা বলেন, ইতোমধ্যেই রাজশাহীর আম বাজারজাতকরণ শুরু হয়েছে। এটি পর্যায়ক্রমে চলবে। ম্যাংগো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে পরিপক্ব আম কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বাজারজাত করলে চাষি ও ক্রেতা দুইজনেই উপকৃত হবেন।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, কেউ আগাম আম পেড়ে বাজারজাত করছে কি না বা অসাধু উপায়ে আমের দাম যাতে না বাড়ে সে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে।
চলতি মৌসুমে নওগাঁয় ২২ মে থেকে আম সংগ্রহ শুরু হবে। চলতি বছর নওগাঁয় ৩৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। যা থেকে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টন আম উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন জেলায় আম পাড়ার সময় বেঁধে দিলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার বিপরীত চিত্র। গাছে পাকলেই আম নামিয়ে বিক্রি করা যাবে। আম পাড়ার জন্য কোনো ক্যালেন্ডার ঘোষণা করা হচ্ছে না এবার। চাষিদের সুবিধার্থে স্থানীয় প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার চার লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।
আম পাড়া থেকে শুরু করে কেনাবেচা, প্যাকেটিং, বহন, পরিচর্যা করাকে ঘিরে রাজশাহী অঞ্চলের এ চার জেলার এক লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়ে থাকে। বছরের অন্য সময় এরা সবসময় কাজ না পেলেও পুরো আমের মৌসুমে থাকেন ব্যস্ত। রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগধানী গ্রামের আফজাল হোসেন জানান, একটি বাগান পাহাড়া দেয়া থেকে শুরু করে আম পাড়া, বাজারজাত করা একার পক্ষে সম্ভব হয়না। তাদের গ্রামেও অনেক বাগান আছে। বছরের অন্য সময় বেকার থাকা ছেলেগুলো আমের মৌসুমে কাজ পেয়ে যায়। ৩ থেকে ৪ মাস আমের মৌসুমজুড়ে তারা কাজে লেগে থাকে