নিজস্ব প্রতিবেদন
সোমালিয়া জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের প্রধান প্রকৌশলী সাইদুজ্জামান ৩৩ দিন পর বাড়ি ফিরেছেন। তার বাড়িতে এখন বইছে উৎসব।
গত ১২ মার্চ এডেন উপসাগরে বাংলাদেশী মালিকানাধীন সমদ্রগামী এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটি কয়লা নিয়ে মোজাব্বিক থেকে ডুবাই যাচ্ছিছিলেন। পথিমধ্য জাহাজটিতে হামলা চালিয়ে নিয়ন্ত্রন নেয় সোমালিয়া জলদস্যুরা। মঙ্গলবার বিকেলে নওগাঁ পৌর সভার আরজি-নওগাঁ এলাকার তার বাড়িতে কথা হয়। তার বর্ণনায় উঠে এেেসছে দুর্বিসহ জিম্মিদশার ৩৩ দিন।
প্রধান প্রকৌশলী সাইদুজ্জামান বলেন, জলদস্যুরা আমাদের জিম্মি করার পর প্রথমে উদ্ধারে এগিয়ে আসে ইটালিয়ান নেভাল ফোর্স। তাদের ড্রোন দিয়ে আমাদের জাহাজটি মনিটরিং করা হয়। একটি ড্রোনের চার্জ শেষ হয়ে গেলে অন্য একটি ড্রোন পাঠিয়ে দেয়া হতো আমাদের নজরদারির জন্য।
তিনি আরোও বলেন, একটি হেলিকপ্টারের ওপর থেকে বার বার ঘোষণা দেয়া হয়- তাদের ( সোমালিয়ান ভাষা) ভাষায় জলদস্যুরা তোমরা আত্মসমর্পন করো। নয়তো আক্রমন করা হবে। এমনকি তোমাদের অন্য দস্যুদেরকে আমরা ছার দেয়া হবে না। তাদের কথাগুলো কর্ণপাত করতেন না জলদস্যুরা।
দুর্বিসহ জিম্মিদশার দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, দস্যুরা প্রতিদিন তাদের অস্ত্র আমাদের দিকে তাক করে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাতো। ২৩ জন নাবিকের মধ্য একজন করে তাদের অস্ত্রের সামনে নিয়ে গিয়ে কোনো ধরনের অপারেশন করা হলে আমাদের ওপর আক্রমন হবে বলে ভয় দেখানো হতো। এ সময় দুশ্চিতায় আমরা কেউ ঘুমাতে পারতাম না। পরবর্তিতে জাহাজে ভারি অস্ত্র নিয়ে এসে জমা করা হতো। প্রায় অস্ত্র থেকে ফাঁকা ফায়ার করা হতো। যেহেতু আমরা একটি কেবিনে আটক ছিলাম। সেসময় ছিল রোজার দিন। শুধু পানি খেয়ে ইফতারি ও সেহেরী করতাম।
জলদস্যুরা যেভাবে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের মালিকের সাথে যোগাযোগ করেন এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমডি স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হতো। এমডি সরাসরি সরকারের সাথে যোগাযোগ করেন। বাংলাদেশ সরকার ইটালিয়ান নেভাল ফোর্সের হেড কোয়াটার ও ইউনাইটেড হেড কোয়াটারে যোগাযোগ করেন। যোগাযোগের এক ঘন্টার মধ্য ইটালিয়ান নেভাল ফোর্সের হেড কোয়াটার ও ইউনাইটেড নেভাল ফোর্স হেলিকপ্টার ও যুদ্ধ জাহাজ আমাদের জাহাজ থেকে দেড় থেকে দুই মাইল দূরে অবস্থান করছিল। এতে সোমালিয়া জলদস্যুরা ভয় পেয়ে যায়। পরবর্তিতে সরকার থেকে নির্দেশ আসে, আমাদের রক্ষায় কেউ যেন অপারেশন না চালান। এভাবে প্রতিদিন দূর থেকে নেভাল ফোর্স আমাদের নজরে রাখতেন।
সাইদুজ্জামানের স্ত্রী মানহা তাহরি সতধা বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায় যে আমার স্বামী পরিবারের কাছে সুস্থ্য ভাবে ফিরে এসেছে।
উল্লেখ্য- মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টায় জাহাজটি নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জাহাজটিতে ৫৫ হাজার টন কয়লা ছিল। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি। জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রæপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন।
সাইদুজ্জামান ২০ ধরে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দেশি বিদেশী বিভিন্ন কোম্পানির জাহাজে কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামের গ্রæপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন জাহাজে কাজ করছে। এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজ এস আর শিপিং লিমিটেড কোম্পানির একটি জাহাজ।