কাটাখালীর মেয়র হতে শাটারিং মিস্ত্রি শামা লড়ছেন নারী প্রার্থী মিতুর সঙ্গে

Spread the love
Print Friendly, PDF & Email
image_pdfimage_print

মোঃ হালিম কাজী রাজশাহী
রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র পদের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত যাচ্ছে আগামী ২৮ এপ্রিল। এই নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন মোট আটজন। তাঁদের তাঁদের মধ্যে আবু শামা নামের এক শাটারিং মিস্ত্রিও আছেন। তিনি পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদেও আছেন। তাঁকে লড়তে হচ্ছে সাবেক মেয়র ও পৌর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আব্বাস আলীর স্ত্রী রাবেয়া সুলতানা মিতুর সঙ্গে। মূলত মিতুর সঙ্গেই লড়াই হবে শামার। তবে শামার বিতর্কিত নানা কাণ্ডে ক্ষুব্ধ পৌরবাসী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আবু শামা ও তাঁর ভাই শরীয়ত আলী সৈকতের বিরুদ্ধে জমি দখল, অপহরণ, চাঁদাবাজি, বোমাবাজিসহ নানা অভিযোগ আছে। সব মিলিয়ে চারটি মামলাও আছে তাঁদের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ রয়েছে, শামার ভাই শরীয়ত পৌর সহ-সভাপতি। বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করে আবু শামা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তবে তা হয়নি। ফলে তাঁকে লড়তে হচ্ছে নারকেল গাছ প্রতীক নিয়ে।

এদিকে, আবু শামা মেয়র প্রার্থী হওয়ায় উদ্বিগ্ন কাটাখালীর অনেকেই। শনিবার বিকালে রাজশাহী পাটকলের সামনের একটি চায়ের দোকানে এ নিয়েই আলাপ করছিলেন স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা। বরকত আলী নামের এক ব্যক্তি বললেন, ‘শামা পড়াশোনা জানেন না। দলের প্রভাব খাটিয়ে স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি হয়েছেন। এখন মেয়র হতে চান।’

পুলিশ জানিয়েছে, আবু শামার বিরুদ্ধে কাটাখালী ও মতিহার থানায় চারটি মামলা রয়েছে। ২০১০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে মামলাগুলো হয়েছে। সবশেষ ২০২০ সালে কাটাখালী থানার মামলাটি হয়েছিল বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে। শামার ভাই শরীয়তের বিরুদ্ধেও কাটাখালী থানায় তিনটি ও মতিহার থানায় একটি মামলা আছে। তাঁর বিরুদ্ধেও বিস্ফোরক আইনের মামলা চলমান। দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন আনারকে কুপিয়ে হত্যারও অভিযোগ আছে। এ নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। ২০১৯ সালে নজরুল ইসলাম নামের এক বালু ব্যবসায়ীকে গুলি করেন শরীয়ত। এ ঘটনারও মামলা আছে।

এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন ২০২২ সালের ২১ মার্চ শাটারিং মিস্ত্রি আবু শামাকে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি করেন। আর পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ভাই শরীয়তকে সহ-সভাপতি করেন শামা। শরীয়ত রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। দলে পদ পেয়ে দুই ভাই কাটাখালী এলাকায় রামরাজত্ব শুরু করেন। নিরিহ মানুষের জমি দখল, ব্যক্তিগত কার্যালয়ে আটকে রেখে চাঁদা আদায়, মাছের আড়ৎ থেকে টাকা তোলাসহ নানা অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। প্রভাব খাটিয়ে পৌরসভার বালুমহালও নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন শরীয়ত।

সর্বশেষ গত বছরের ৩ নভেম্বর আবু শামা অটোরিকশা থেকে নামিয়ে তাইজুল ইসলাম নামের এক কলেজছাত্রকে তাঁর কার্যালয়ে আটকে রাখেন। এরপর তাইজুলের বাবাকে ফোন করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। তাইজুলের বাবা আবদুল হালিম ছেলেকে ছাড়িয়ে আনতে গেলে তাঁকেও আটকে রাখা হয়। মারধর করা হয় বাবা ও ছেলেকে। পুলিশের হস্তক্ষেপে সেদিন বাবা-ছেলে মুক্তি পেলেও ভয়ে তারা মামলা করতে পারেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আয়েন উদ্দিন মনোনয়ন পাননি। দলের মনোনয়ন পেয়ে এমপি হয়েছেন আসাদুজ্জামান আসাদ। আবু শামা ভোটের পর এমপি আসাদের কাছে ভিড়ে গেছেন। তবে সুবিধা করতে পারেননি। বর্তমান এমপি তাঁর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সাঁয় দিচ্ছেন না।

মেয়র হতে আওয়ামী লীগের এই নেতা বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গেও আপস করে বসেছিলেন। এই নির্বাচনে মোট আটজন প্রার্থী রয়েছেন। এরমধ্যে মনোনয়ন ফরম বিতরণের সময় শেষেও উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ৮ এপ্রিল প্রার্থিতা পান রাবেয়া সুলতানা মিতু। তাই আওয়ামী লীগ নেতা আবু শামা, জামায়াত নেতা আমীর আবদুল হাই, সাবেক শিবির নেতা মিজানুর রহমান, বিএনপির কর্মী জিয়াউর রহমানসহ অন্য সাত প্রার্থী সেদিনই রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে যান। তাঁরা দাবি করেন, মিতুকে প্রার্থিতা দেওয়া যাবে না। তারা সাত প্রার্থীর মধ্যে ছয়জন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন। একজনকে যেন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত ঘোষণা করে দেওয়া হয়। সেসময় রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, এটি সম্ভব নয়। এ সময় আবু সামা রিটার্নিং কর্মকর্তা আজাদুল হেলালের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেন। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম প্রামানিকের সামনেই এ ঘটনা ঘটান তিনি। এ ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ নিতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনা চান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। পরে অবশ্য এ নিয়ে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জানতে চাইলে মেয়র প্রার্থী রাবেয়া সুলতানা মিতু বলেন, ‘শামা এবং তার লোকজন নানাভাবে উস্কানী দেওয়ার চেষ্টা করছে। ভয়ভীতি ও হুমকিও দিচ্ছেন সাধারণ ভোটারদের। তবে সাধারণ ভোটাররা ভোটের দিন সেটির জবাব দিতে প্রস্তুত আছেন। আমি শুধু বিষয়গুলো নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করে রেখেছি। আর নিজের প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি।’

তবে জানতে চাইলে আবু শামা এসব বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি। তবে তিনি দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো মিথ্যা। তিনি কোন চাঁদাবাজি, জমি-দখলের সঙ্গেও জড়িত নন। শামার ভাই শরীয়ত আলী বলেন, ‘আমি বিশ^বিদ্যালয়ে ছোট চাকরি করি। পাশাপাশি বালুঘাটে শেয়ার নিয়েছি। ভাইয়ের সঙ্গে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাসা-বাড়ির কাজ করি। এটাই আমাদের আয়ের উৎস। চাঁদাবাজি-জমি দখলের সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *