রাজশাহী ও খুলনার প্লটের লটারি ঢাকায়!

Spread the love
Print Friendly, PDF & Email
image_pdfimage_print

জন্মভূমি ডেক্স

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের রাজশাহী ও খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের অধীন দুটি আবাসিক এলাকার পাঁচটি প্লটের আবেদন নেওয়া হয় গত অক্টোবর মাসে। আড়াই শতাধিক আবেদনকারী নির্ধারিত জামানত ও ফিসহ আবেদন জমা করেন। এই পাঁচটি প্লটের আবেদন যাচাই-বাছাই করতে পার হয়ে গেছে চার মাসের বেশি সময়।

প্রসপেক্টাস ও আবেদনে বলা হয়, আবেদনকারীদের উপস্থিতিতে প্লটের লটারি করা হবে নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে। কিন্তু আগামী ৫ মার্চ সকাল ১০টায় জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয় সেগুনবাগিচায় লটারি অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের প্লট বরাদ্দের আবেদন যাচাই-বাছাই ও লটারি পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব গত ২ মার্চ জারিকৃত এক নোটিশে এসব তথ্য জানিয়েছেন। রাজশাহী ও খুলনার প্লটের লটারি ঢাকায় হওয়া নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন একাধিক আবেদনকারী।

প্লট আবেদনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর তেরখাদিয়া সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্পের দুটি ও খুলনা রূপাতলী হাউজিং এস্টেটের তিনটি প্লট বরাদ্দের জন্য গত অক্টোবর মাসে আবেদন নেওয়া হয়। এসব প্লটের জন্য আবেদন করেন আড়াই শতাধিক আবেদনকারী; কিন্তু গত চার মাসের বেশি সময় পার হলেও স্বল্পসংখ্যক আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে লটারি করতে পারেনি জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ।

আবেদনকারীরা আরও বলছেন, মাত্র পাঁচটি প্লটের লটারি শেষ করে বরাদ্দ দিতে এত সময় লাগার কথা নয়; কিন্তু কোনো এক রহস্যজনক কারণে পাঁচটি প্লটের লটারি এতদিন করতে পারেনি জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের রাজশাহী ও খুলনা বিভাগীয় দপ্তর।

ভুক্তভোগী আবেদনকারীরা বলছেন, অকারণে বিলম্ব করা হয়েছে। তাদের জামানতের বিপুল পরিমাণ টাকাও আটকে আছে। জামানতের টাকা ব্যাংকে রেখে সুদ নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। অবশেষে রাজশাহী ও খুলনার প্লটের লটারি জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ঢাকা প্রধান কার‌্যালয়ে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর তেরখাদিয়া সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্পের দুটি অবশিষ্ট প্লট বরাদ্দের প্রসপেক্টাসের দাম ধরা হয় এক হাজার টাকা। দুটি প্লটের জন্য নির্ধারিত সময়ে ১২৩টি আবেদন জমা পড়ে। ৪ দশমিক ১২ কাঠা আয়তনের একটি প্লটের জন্য ৩ লাখ ও ৩ কাঠা আয়তনের অপর প্লটের জন্য ২ লাখ টাকা জামানত নেওয়া হয়। খুলনার রূপাবতী হাউজিং এস্টেটের তিনটি প্লটের জন্য একই শর্তে জামানত নেওয়া হয়েছে আবেদনকারীদের কাছ থেকে।

অন্যদিকে প্লট বরাদ্দের লটারির নোটিশে বলা হয়েছে ৫ মার্চ সকাল ১০টায় জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ৮২, সেগুনবাগিচা প্রধান কার‌্যালয়ের দুই তলার সম্মেলন কক্ষে লটারি অনুষ্ঠিত হবে। এ সময়ে আবেদনকারীদের কেউ আগ্রহী থাকলে তাদের ঢাকায় প্রধান কার‌্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

রাজশাহীর প্লটের একাধিক আবেদনকারী নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, এর আগে রাজশাহী তেরখাদিয়া সাইট অ্যান্ড সার্ভিস প্রজেক্টের শতাধিক প্লট বরাদ্দের লটারি হয়েছিল জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের রাজশাহী বিভাগীয় কার‌্যালয়ে। এবার দুটি প্লটের লটারি করা হবে ঢাকায়।

আবেদনকারীদের আরও অভিযোগ, তারা রাজশাহী ও খুলনা থেকে মোটা টাকা খরচ করে ঢাকায় লটারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন কিভাবে। ঢাকায় লটারি হলে অধিকাংশ আবেদনকারী লটারিতে উপস্থিত থাকতে পারবেন না এটা বুঝে কর্তৃপক্ষ রাজশাহী ও খুলনায় প্লটের লটারি করছেন না। ঢাকায় নিরপেক্ষভাবে লটারি হবে না বলে মনে করেন আবেদনকারীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের রাজশাহী বিভাগীয় কার‌্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু হোরায়রা বলেন, বিষয়টি প্লট বরাদ্দের আবেদন যাচাই বাছাই ও লটারি পরিচালনাকারী কমিটির সিদ্ধান্ত। এজন্য সব আবেদন ফরম ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের কিছু করার নেই।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী ও খুলনার এসব প্লটের সরকারি মূল্য ১০ লাখ টাকা প্রতি কাঠা হলেও এসব প্লটের বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা। এ কারণে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের প্রধান কার‌্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা নিজেদের পছন্দের লোককে প্লট পাইয়ে দিয়ে নিজেরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে প্লটের আবেদনকারীরা লটারির জন্য অপেক্ষা করছেন।

রাজশাহী ও খুলনার প্লট বরাদ্দের লটারি ঢাকায় নেওয়ার যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বিভাগের সদস্য অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ কুদ্দুশ আলী সরকার বলেন, ঢাকার বাইরে আঞ্চলিক ও বিভাগীয় কার‌্যালয়ে প্লটের লটারির ক্ষেত্রে অতীতে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। এতে সুষ্ঠুভাবে লটারি করা কষ্টকর হয়েছে। এ কারণে আমরা বেশ কয়েকটি প্রকল্পের লটারি ঢাকায় করে বেশ সুফল পেয়েছি। কোনো আবেদনকারী উপস্থিত থাকলে তাকে দিয়েই আমরা লটারি তোলার ব্যবস্থা করব। সুষ্ঠু ও নিরক্ষেপতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠার সুযোগ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *