ফোনে অন্য বাচ্চার কান্না শুনিয়ে মায়ের কাছে প্রতারকের মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা

দেশের খবর
Spread the love
Print Friendly, PDF & Email
image_pdfimage_print

জন্মভূমি ডেক্স

বাচ্চাকে অপহরণ করা হয়েছে জানিয়ে রাজশাহীতে এক মায়ের কাছ থেকে মুক্তিপণের নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে প্রতারকচক্র। অল্পের জন্য এই প্রতারণা থেকে রক্ষা পান মা। আজ বুধবার দুপুরে রাজশাহী নগরের উপশহরের বাসিন্দা রোখসানা ফাউজিয়া নামের এক নারীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে সন্ধ্যায় তিনি নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

থানায় কথা হয় রোখসানা ফাউজিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, রাজশাহী নগরীর উপশহর এলাকায় তিনি বাস করেন। তাঁর ছেলে একটি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তার বাবা প্রবাসী। তিনি শিশুটিকে নিয়ে একটি বাসায় থাকেন। সেখান থেকে শিশুটি প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যায়।

আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রোখসানার মোবাইলে একটি ফোন কল আসে। ওপাশ থেকে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তাঁর ছেলে কোথায়। রোখসানা বলেন, তাঁর ছেলে স্কুলে গেছে। তখন প্রতারকচক্রের ওই সদস্য বলেন, স্কুলে নয়, তার ছেলে আছে তাদের হেফাজতে। তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অক্ষত পেতে হলে এখনই ৫ লাখ টাকা পাঠাতে হবে।

এ কথা শুনেই বিচলিত হয়ে রোখসানা মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তিনি স্কুলের দিকে যেতে উদ্যত হন। এমন সময় আবার ফোন আসে। এবার রোখসানাকে ‘তুই’ করে সম্বোধন করা হয়। বলা হয়, ‘এই কথা কাউকে বলবি না। বললে এখনই ছেলের হাত কেটে দেব।’ এ সময় রোখসানাকে একটি শিশুকণ্ঠের কান্নার আওয়াজ শোনানো হয়। ওপাশ থেকে শিশুটি বলে, ‘মা, আমি এখানে। আমাকে নিয়ে যাও।’ এ রকম মুহূর্তে ওই নারী বুঝতে পারেননি কান্নার শব্দটি তাঁর ছেলের কিনা। তিনি অস্থির হয়ে ওঠেন।

ওই নারীকে আরও হুমকি দেওয়া হয়, ‘এসব কথা কাউকে জানালে বিকেলে ছেলের লাশ পাওয়া যাবে। তাঁকেও খুন করা হবে।’ তাতে ভয় পেয়ে যান ওই নারী। প্রতারকচক্র ৫ লাখ টাকা চাইলে তিনি বলেন, তাঁর কাছে এখন এত টাকা নেই। বিকেলের মধ্যে ব্যবস্থা করে দেবেন। এখন আপাতত ২ লাখ টাকা দিতে পারবেন। এরপর তিনি ওই টাকা হাতে ছুটে যান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দোকানে। কিন্তু এত টাকা একসঙ্গে পাঠাতে দেখেই সন্দেহ হয় দোকানির। তিনি তাঁকে জাতীয় পরিচয়পত্র আনতে বলেন। রোখসানা আবার ছুটে যান বাড়িতে। এদিকে প্রতারকচক্র সার্বক্ষণিক ওই নারীর সঙ্গে ফোনে সংযুক্ত ছিল। তাঁকে বিষয়টি কারও সঙ্গে আলাপ করার সুযোগই দেওয়া হয়নি।

জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আবার দোকানে ফেরেন রোখসানা। মোবাইলে তোলা হয় নম্বর। টাকার অঙ্কও বসানো হয়। শুধু পাঠানো বাকি। এমন সময় ওই পথ দিয়েই স্কুল থেকে ফিরছিল ওই শিক্ষার্থী। পরিচিত দোকানি চিৎকার করে বললেন, ‘এই যে, আপনার ছেলে। সকালেই তো মোবাইলে টাকা ওঠাতে এসেছিল।’ ছেলেকে দেখামাত্র মা ফোন কেটে দেন। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরই মধ্যে আবার ফোন আসে। এবার ফোন ধরেই বিকাশের দোকানিকে দেন রোখসানা। দোকানি বলেন, ‘আপনি কে বলছেন?’ দোকানির গলা শোনামাত্র ওপাশ থেকে ফোন কেটে দেওয়া হয়। আর যোগাযোগ করা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর বলেন, তিনি থানার বাইরে রয়েছেন। ঘটনা তদন্ত করে প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *