সাজ্জাদ মাহমুদ সুইট, রাজশাহী।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার প্রধান অর্থকারী ফসল আম। এ উপজেলার আমের খ্যাতি দেশ সহ বিদেশেও রয়েছে। আমের উপর নির্ভর করে এই উপজেলার অধিকাংশ পরিবারের বাৎসরিক সাংসারিক হিসেব-নিকেশ। আর তাই আম গাছে মুকুল দেখলেই আশাই বুক বাঁধেন আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা। তবে গত কয়েক বছরে উৎপাদন ও দাম নিয়ে হতাশ তারা।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, আম বাগানগুলোতে এখন দেখা যাচ্ছে শুধু মুকুল আর মুকুল।আমের বাগানগুলো ভরে উঠেছে মুকুলে মুকুলে। গাছে গাছে দৃশ্যমান সোনালী মুকুলের আভা। মৌমাছিরা আসতে শুরু করেছে মধু আহরণের জন্য। গাছে গাছে মুকুলের সমারোহ দেখে আম চাষীদের প্রাণ যেন ভরে যাচ্ছে। সোনালী স্বপ্নে বিভোর এখন বাঘা উপজেলার আমচাষী আর বাগান মালিকরা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবছর আমের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন তারা। কিছু গাছে ক্ষুদ্র আকারে মুকুল বের হচ্ছে, আবার কিছু গাছে পরিপূর্ণ মুকুল এসে গেছে। এতে করে বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন । এ উপজেলায় আম উপলক্ষে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২০ টি আমের বাজার বসে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, আবহাওয়ার পাশাপাশি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এই বছরে আমের ফলন ভালো হবে। আর সেই সাথে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আম চাষ করলে উৎপাদন যেমন বাড়বে, তেমনি সঠিক ভাবে সংরক্ষণ এবং পরিবহন, রপ্তানি-সহ বাজারজাত করলে কৃষকরা ব্যপক হারে লাভবান হবেন। কয়েক বছর থেকে বাঘার আম বিশ্বের কয়েকটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। গত বছর কৃষি মেলায় প্রায় দুইশ জাতের আম দেখা যায়।
কয়েক জন আম চাষিদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বেশ কয়েক বছর থেকে ভালো আম হয়নি এই অঞ্চলের বাগান গুলোতে। তারপর আবার আমাদের দামও আশানুরূপ না পাওয়ায় বাগান মালিকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মূখে পরেছিলো। বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ীরা এক প্রকার নিঃস্ব হয়ে গেছে।
বাঘা পৌরসভার বাগান মালিক মিজানুর রহমান সাহিন বলেন, আমের উপর নির্ভর করে আমাদের বাৎসরিক সংসারের হিসাব-নিকাশ। গত ৪-৫ বছরে আমের ফলন কম ও দামীও ভালো পাওয়া যায়নি। আমাদের ২৪ থেকে ২৫ বিঘার আম বাগান রয়েছে, যাতে প্রতিবছর পরিচর্যায় কম করে হলেও ৭০-৭৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। গত বছর এই টাকা পরিচর্যা খরচ করে আম বিক্রি করেছিলাম মাত্র দেড় লক্ষ টাকার।
আম ব্যবসায়ী রিপন আলী বলেন, আমের মৌসুমে এ উপজেলায় প্রায় লাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়। এ অঞ্চলের আমের মধ্যে-ফজলি, হিমসাগর, গোপাল ভোগ, ল্যাংড়ার, আড়াজম, আম্রপালি ও আশ্বিনা আমের নাম শোনা যায় সবার মুখে-মুখে। এ ছাড়াও বৌ-ভুলানী, রানী পছন্দ, জামাইখুসি, বৃন্দাবন, লকনা, বোম্বাই খিরসা, মহনভোগ, সেনরি, ব্যানানা, খিরসা পাত, বৃন্দাবনী, ও কালীভোগ-সহ প্রায় দেড়’ থেকে দুইশ জাতের আম রয়েছে।এ বছর আম পাড়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত যদি আবহাওয়া ভাল থাকে এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত থাকে তাহলে এবার যে হারে গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে তাতে করে আম বিক্রি হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ্ সুলতান বলেন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আম চাষ করলে এর উৎপাদন যেমন বাড়বে, তেমনি সঠিক ভাবে সংরণ এবং পরিবহন, রপ্তানি-সহ বাজারজাত করলে কৃষকরা ব্যপক হারে লাভবান হবেন। তিনি এ উপজেলায় যোগদানের পর থেকে কৃষকদের উন্নত পদ্ধতিতে আম চাষ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এর ফলে গত কয়েক বছর থেকে বাঘার আম বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।