জন্মভূমি নিউজ ডেক্স
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেছেন, মাইনাস টুর ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না। ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপরিহার্য। তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচার সরকার তাদের শাসনামলে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। পাচারকৃত টাকা দিয়ে তারা এখন দেশ অস্থিতিশীল করার চক্রান্তে লিপ্ত।
দেশ স্থিতিশীল করাটাই অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বিএনপি যে কোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। গতকাল দৈনিক আমাদের জন্মভূমি পত্রিকা কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
দৈনিক আমাদের জন্মভূমি পত্রিকা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আপনাদের প্রত্যাশা সম্পর্কে জানতে চাই।
কায়সার কামাল : অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা আকাশসম। মানুষের প্রত্যাশা ছিল বলেই স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। গত ১৬-১৭টি বছর শুধু বিএনপি নয়, দেশের মানুষের ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালানো হয়েছে। দেশের জনগণের দেশের প্রায় সব ক্ষেত্রেই পরিবর্তনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।
এ পরিবর্তনের সূচনা অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে হবে।
দৈনিক আমাদের জন্মভূমি পত্রিকা বিএনপি কোন কোন সংস্কারের প্রতি বেশি গুরুত্ব আরোপ করছে?
কায়সার কামাল : রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ২০২৩ সালের ১১ জুলাই বিএনপি ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এ ৩১ দফার বাস্তবায়ন বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গীকার। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, রাষ্ট্র সংস্কার কোনো স্থিতিশীল বিষয় নয়। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কারেরও পরিবর্তন হয়।
পরিবর্তনশীল সমাজের সঙ্গে যখন যেটা প্রয়োজন সে সংস্কার বিএনপি করবে।
দৈনিক আমাদের জন্মভূমি পত্রিকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘ক্ষমতায় গেলে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। ’ এটা কীভাবে সম্ভব?
কায়সার কামাল : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তারেক রহমান ঘোষণা করেছিলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে ক্রিয়াশীল সব রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে একটা জাতীয় সরকার হবে। ’ গত ১৬-১৭ বছরে দেশ প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। রাষ্ট্র মেরামতের যারা অংশীদার আছে রাষ্ট্র গঠনে তাদের প্রত্যেকের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। শুধু রাজনৈতিক দল নয়, দলের বাইরেও বাংলাদেশে অনেক দেশপ্রেমিক নাগরিক ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব আছেন। তাঁদের সমন্বয়েই দেশ বিনির্মাণ করতে হবে। ১৯৭১-এর স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ যে ভুল করেছিল, ২০২৪-এর দ্বিতীয় স্বাধীনতার পরে তারেক রহমান পুনরায় সে ভুলটা করতে চাইছেন না। এজন্যই তিনি বলেছেন, ইটস আ রেইনবো স্টেট। রেইনবো ন্যাশন।
দৈনিক আমাদের জন্মভূমি পত্রিকা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি উঠছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
কায়সার কামাল : প্রতিটি রাজনৈতিক দল রাজনীতি করে জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে। বাংলাদেশের জনগণ ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছে রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা কাকে চায় আর কাকে চায় না।
দৈনিক আমাদের জন্মভূমি পত্রিকা আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য বিএনপি কতটুকু প্রস্তুত?
কায়সার কামাল : বিএনপি সব সময় দাবি জানিয়ে এসেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের মাধ্যমে নির্বাচন। ২০১১ সালের আগে থেকেই আমরা এ দাবি করে আসছি। বিএনপির এ দাবি যে জনপ্রিয় এবং দেশের স্বার্থে তা প্রমাণিত হয়েছে ২০১৮ ও ২০২৪-এর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বিএনপির দাবি, তারা যেন যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেয়। তারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছে যৌক্তিক সময়টা কতটুকু। বিএনপি একটি গণমুখী দল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বিএনপি যে কোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।
দৈনিক আমাদের জন্মভূমি পত্রিকা বর্তমান সরকারের পক্ষে কি সংবিধান সংস্কার করা সম্ভব?
কায়সার কামাল : সংবিধান পরিবর্তন, পরিবর্ধন এও রাষ্ট্র মেরামতেরই অংশ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংবিধানের পরিবর্তন, পরিবর্ধন হবে। রাষ্ট্র বা মানুষের প্রয়োজনে সংবিধান। তাত্ত্বিকভাবে সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদ প্রয়োজন। নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমেই সংবিধান সংশোধন করা যেতে পারে।
দৈনিক আমাদের জন্মভূমি পত্রিকা ছাত্র-জনতার আন্দোলন আপনি কীভাবে দেখেন? এতে বিএনপির অবদান কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
কায়সার কামাল : বিএনপির অবদান কী ছিল তার বিচার করবে দেশের মানুষ। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন বিএনপি শুরু করেছিল। তার ধারাবাহিকতায় অন্যান্য রাজনৈতিক দল সুসংগঠিত হয়েছে। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালাতে বাধ্য হয়েছেন। অবদানের কথা বলে কাউকে বড়-ছোট করার বিষয় নয়। প্রত্যেকের লক্ষ্য ছিল স্বৈরাচারী শাসনের পতন। এ লক্ষ্য সামনে রেখে কেউ দুই দিন আগে রাস্তায় নেমেছে, কেউ দুই দিন পরে। প্রত্যেকের প্রতিই বিএনপি শ্রদ্ধাশীল।
দৈনিক আমাদের জন্মভূমি পত্রিকা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো কোন পর্যায়ে আছে?
কায়সার কামাল : উনাদের দুজনের বিরুদ্ধে অনেক মামলা করা হয়েছে। প্রতিটি মামলাই মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। প্রচলিত আইন এবং আদালতের প্রতি তাঁদের বিশ্বাস আছে। উনারা আইনগতভাবেই মামলাগুলো নিষ্পত্তি করবেন। কিছু মামলা এরই মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে। প্রতিটি মামলাই আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে। আমরা কৃতজ্ঞ যে, রাষ্ট্র বুঝতে পেরেছে বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি অবিচার করা হয়েছে।
দৈনিক আমাদের জন্মভূমি পত্রিকা তারেক রহমান কবে নাগাদ দেশে ফিরতে পারেন?
কায়সার কামাল : নেতা-কর্মীসহ দেশের লাখো মানুষ তারেক রহমানের প্রতীক্ষায় আছে। প্রত্যেকের প্রত্যাশার প্রতি তারেক রহমান শ্রদ্ধাশীল। দেশে ফেরার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চয়ই তিনি যথাসময়ে নেবেন।
দৈনিক আমাদের জন্মভূমি পত্রিকা ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
কায়সার কামাল : যে-কারও রাজনৈতিক দল গঠনের অধিকার আছে। ছাত্ররা দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে জুলাই বিপ্লব ঘটিয়েছেন। ছাত্ররা তো আর রাজনৈতিক দল করতে পারবেন না। তারা ছাত্রদল করতে পারবেন। তো যেসব ছাত্র এখন আর ছাত্র নেই, অর্থাৎ পড়াশোনা শেষ করেছেন তারা রাজনৈতিক দল করতে পারেন। যারা নিয়মিত ছাত্র জাতীয় রাজনীতিতে তাদের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু এটা দেশের মানুষ বিবেচনা করবে।
দৈনিক আমাদের জন্মভূমি পত্রিকা শেখ হাসিনাসহ বিদেশে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী নেতাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের দাবি তোলা হচ্ছে…
কায়সার কামাল : বিচারের দাবি নয়, বরং রাষ্ট্রের প্রয়োজনে বিচার হতে হবে। কারণ তাঁদের যদি বিচার না হয় ভবিষ্যতে আরেক ফ্যাসিজমের জন্ম হতে পারে। তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হতে হবে, যাতে এ প্রজন্ম তাদের জীবদ্দশায় বাংলাদেশে যেন আর কোনো ফ্যাসিজমের শিকার না হয়।
দৈনিক আমাদের জন্মনি পত্রিকা রাজনৈতিক মহলে মাইনাস টু নিয়ে আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
কায়সার কামাল : রাজনীতিতে সব সময়ই এটা আলোচনার বিষয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন নিশ্চয়ই এর কোনো যথার্থতা আছে। কিন্তু ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান দেশের রাজনীতিতে অপরিহার্য। যারা এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেন তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন। ষড়যন্ত্র করে ওয়ান-ইলেভেনেও লাভ হয়নি, এখনও হবে না ইনশাল্লাহ।
দৈনিক আমাদের জন্মভূমি পত্রিকা আমাদের মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।