জন্মভূমি নিউজ ডেস্ক :
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর দুই-একটি বিধান ছাড়া সবগুলো বিধান কর্তৃত্বপরায়ণ সরকার ব্যবস্থাকে স্থায়ী করেছে। পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, সে প্রশ্নে রুলের শুনানিতে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) এ বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চে এ শুনানি চলছে।
পরে শুনানি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শিশির মনির।
এদিন বিএনপির পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনবীজী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। আগের দিন বুধবার রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজামান রুলের ওপর শুনানি করেন।
১৯৯৬ সালে সংবিধানে যুক্ত হওয়া নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান ২০১১ সালের ৩০ জুন বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনে আওয়ামী লীগ সরকার। তার আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবৈধ বলে রায় এসেছিল আদালত থেকে।
সংবিধানের এ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে বাতিল করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্থ করা হয়েছে উল্লেখ করে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে ইলেকশন মেকানিজমকে ধ্বংস করা হয়েছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের যে প্রক্রিয়া, এ প্রক্রিয়াটি ইচ্ছে করেই বাধাগ্রস্থ করা হয়েছে।’
এ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের ‘ইলেকশনকে সিলেকশনে’ রূপান্তরিত করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘পঞ্চদশ সংশোধনী বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধ্বংস করা হয়েছে।
জামায়াতের এই আইনজীবী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রপ্রিয়, এদেশের মানুষ মাল্টি পার্টি ডেমোক্রেসিতে বিশ্বাস করে। বাংলাদেশের মানুষ ভোটকে উৎসব হিসেবে নিতে বিশ্বাস করে। সে উৎসবকে আমরা ধ্বংস করে একটি কর্তৃত্বপরায়ণ সরকার ব্যবস্থা কায়েম করেছি। আমরা ইলেকশন করেছি, কিন্তু কোনো প্রতিযোগিতা নেই। ইলেকশন করেছি কিন্তু ইলেকশন কমিশন ফাংশন করে না।
ইলেকশন করেছি, কিন্তু বিচার বিভাগের কাছে এসে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।’
পঞ্চদশ সংশোধনী সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে শিশির মনির বলেন, ‘বাংলাদেশ সংবিধান একটি ডেমোক্রেটিক পলিটিক্যাল সিস্টেমের কথা বলে। এ সংবিধান কোনো একনায়কতান্ত্রিক কিংবা কর্তৃত্বপরায়ণ সংবিধানের কথা বলে না। এ জন্য পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদে জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্যদের স্বাধীন ভোটাধিকার সীমিত করে দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়া থেকে বিরত রাখে।’
শিশির মনির বলেন, ‘৭০ অনুচ্ছেদে সংসদে নিজের দলের মতামতের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া যাবে না। আমরা বলেছি, এটি এক ধরনের বাক স্বাধীনতাকে খর্ব করে। একজন সংসদ সদস্য উপযুক্ত মনে করলে নিজের দলের বিরুদ্ধেও মতামত পেশ করার স্বাধীনতা রাখেন। এজন্য ৭০ অনুচ্ছেদকেও আমরা বাতিল চেয়েছি।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ১৮ আগস্ট সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ নাগরিক এই রিট আবেদনটি করেন। পরদিন ১৯ আগস্ট রুল হয়ে এ শুনানি চলছে।
এদিকে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বিলুপ্তি করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা পৃথক তিনটি রিভিউ আবেদনের শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ১৭ নভেম্বর দিন নির্ধারণ করেছেন।