সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
টাকার বিনিময়ে মামলার অভিযোগপত্র থেকে নাম বাদ দেওয়া হবে, আসামির সঙ্গে এমন আলাপের কয়েকটি অডিও ক্লিপ নিয়ে রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলে তোলপাড় চলছে। খোদ নগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাকসুদুর রহমান সৌরভ অডিও রেকর্ডগুলো ছেড়েছেন ফেসবুকে। পরে অবশ্য এগুলো ডিলিট করে দেন তিনি।
তবে যোগাযোগ করা হলে সৌরভ বলেন, আসামির সঙ্গে কথোপকথন ছাত্রদলেরই এক নেতার। এ ব্যাপারে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।
সৌরভ অভিযোগ তুলেছেন, নগরের বোয়ালিয়া (পূর্ব) থানা ছাত্রদলের সদস্য সাইমন রেজা টাকা নিয়ে মামলার অভিযোগপত্র থেকে আসামির নাম কাটাতে চেয়েছেন। আর সাইমন রেজার দাবি, অডিওগুলো ভুয়া, এডিট করা। এগুলো ছড়ানোর কারণে নগর ছাত্রদলের সম্পাদকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রদল নেতা সাইমন রেজা বাদী হয়ে গত ২৭ অক্টোবর নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ ১০৫ জনের নাম উল্লেখ করে বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেন।
এ মামলায় নগরের ১১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাসেলকেও আসামি করা হয়। মামলায় পায়েল নামের আরেক আসামি আছেন, যিনি আওয়ামী লীগ কর্মী ও পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত। দাবি করা হচ্ছে, এই পায়েলের কাছেই টাকা চেয়েছেন সাইমন।
ছাত্রদল নেতা সৌরভ সাতটি অডিও প্রকাশ করেন ফেসবুকে। অডিওগুলোতে শোনা যায়, একটি মোবাইল ফোন থেকে সাইমন রেজার মোবাইলে ফোন করা হচ্ছে। সৌরভের দাবি, সাইমনের সঙ্গেই মোবাইলে ও হোয়াটসঅ্যাপে মামলার বিষয়ে কথা বলেছেন পায়েল। তবে আত্মগোপনে থাকায় পায়েলের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ওই কথোপকথনে শোনা যায়, এক ব্যক্তি বলছেন, ‘কাল তো মঙ্গলবার। কাল আমি লোন লেখাব। ইনশা আল্লাহ আগামী মঙ্গলবার দিয়ে দিব।’
অপরজন বলছেন, ‘সবার কথা হলো, ৫০-এর নিচে আসবে না। আমি কথা বললাম। ওদের সবারই একটা মতামত, আমরা কিছু নামলাম, ওকেও কিছু উঠতে বলো। আর পাঁচটা হাজার টাকা দিয়ে ২৫ করতে বলো। যদি হয় তো বলো, যা করার করে দিচ্ছি। ওর কোনো সমস্যা হবে না।’
আরেকটি অডিওতে একজন বলছেন, ‘আমি ১০ হাজার টাকার মতো রেডি করে ফেলেছি। আর ১৫ হাজার টাকা, আর তো দুই দিন টাইম নেওয়া আছে। আমি যেদিন টাকা দিব, সেদিনই কোর্ট থেকে নামটা তুলে দেবেন না ভাইয়া?’
অপরজন তখন বলেন, ‘আপনার কোনো সমস্যা হবে না। আপনি দোকানে বসবেন। আপনার কোনো সমস্যা হলে আমি আছি।’
আরেক অডিওতে একজন বলছেন, ‘আপনাকে একটা নম্বর দিচ্ছি, ওখানে আপনি ১০ মেরে দিয়েন। আপনি দোকান করবেন। যদি কোনো সমস্যা হয়, আমার নম্বর তো থাকলই। সমস্যা হলে আমাকে কল দেবেন। আপনার নাম অটোমেটিক কাটা হয়ে যাবে। আপনি দেখবেন। কাটা হয়ে গেলে আপনাকে ছবি তুলে দিয়ে দিব।’
অপর প্রান্তের ব্যক্তি বলছেন, ‘তাহলে আমি পরশু দিন ফুল পেমেন্ট দিয়ে দিব।’ তখন অপরজন বলছেন, ‘আজ ১০ হলে ভালো হয়, আমার একটু লাগত।’
আরেকটি অডিওতে জেলে না যাওয়ার আশ্বাস দিয়ে বলা হচ্ছে, ‘আপনার যদি দুদিনের লাইগাও ভিতরে থাকতে হয়, আপনার স্যান্ডেল খুইলে আমার গালে মাইরেন, যান।’
অপর অডিওতে ওই ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি একা না। আরও দুই-তিনজনকে বের করা লাগবে। তোমাকে যেটুকু হেল্প করছি, সেটা আমি ব্যক্তিগতভাবে রিস্কের মধ্যেই করছি।’
যোগাযোগ করা হলে সাইমন রেজা স্বীকার করেছেন আসামি পায়েলের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। আলাপের সময় পায়েল তাঁকে বলেছেন, নগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ তাঁর ঘনিষ্ঠ। তাঁর কোনো সমস্যা হবে না বলে সৌরভ আশ্বাস দিয়েছেন।
সাইমন দাবি করেন, আওয়ামী লীগ কর্মী পায়েলকে আসামি করার কারণেই ভুয়া অডিও বানিয়ে ফেসবুকে ছাড়া হয়েছিল। এগুলো ভুয়া বলেই সৌরভ পরে ডিলিট করেছে। কিন্তু তাতে তাঁর সম্মানহানি হয়েছে। তাই তিনি আইনি পদক্ষেপ নেবেন।
নগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাকসুদুর রহমান সৌরভ বলেন, ‘পায়েল পুলিশের সোর্স ছিল। তার বিরুদ্ধে মামলা করা যেতেই পারে। কিন্তু আমরা টাকা আদায় করতে পারি না। দলের মধ্যে সাইমন কয়েকজনকে নিয়ে একটা সিন্ডিকেট করে এভাবে টাকা আদায় করছে। এত দিন প্রমাণ ছিল না বলে চুপ ছিলাম। প্রমাণ পাওয়ায় এগুলো প্রকাশ করেছি। সবই কেন্দ্র জানে। আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিব।’
ফেসবুক থেকে পোস্ট ডিলিট করার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সবাই বলছিল দলের মধ্যে এগুলো শোভনীয় না। দলেরই বদনাম হয়। তাই ডিলিট করেছিলাম। আবার পোস্ট হচ্ছে।