মোঃ কাজী আব্দুল হালিম বিভাগীয় প্রধান
রাজশাহীর এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীকে ধর্ষণের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। ওই ব্যবসায়ীর কাছে ২৮ লাখ টাকা দাবী করে বোয়ালিয়া মডেল থানার এসআই আবু তাহের। টাকা না পেয়ে সাদিয়া এবং শিউলি নামের দুইজন মহিলাকে দিয়ে ধর্ষণের মামলা করিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
ধর্ষণ মামলার শিকার ওই ব্যবসায়ীর নাম রেজাউল করিম। তার বাসা বাগমারা উপজেলার বিনোদপুর গ্রামে। তিনি এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের ব্যবসার সাথে জড়িত। গত বছরের ২ জুন বোয়ালিয়া মডেল থানার তৎকালীন এসআই আবু তাহের তার পূর্ব পরিচিত নারীদের দিয়ে রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক কোন ঘটনা ছাড়াই ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন।
মামলার দিনই রেজাউল করিমকে ফোন কলে থানায় ডেকে নেন এসআই আবু তাহের। ফোন পেয়ে থানায় হাজির হন রেজাউল করিম। ওই সময় মামলা থেকে রক্ষা পেতে চাইলে রেজাউল করিমের নিকট ২৮ লাখ টাকা দাবী করেন এসআই আবু তাহের। টাকা না দিলে জেলে প্রেরণ করা হবে বলেও হুমকী প্রদান করা হয়।
সাজানো এবং মিথ্যা মামলা থেকে রক্ষা পেতে ওই সময় কোন টাকা দেননি রেজাউল করিম। টাকা না পাওয়ায় ব্যবসায়ী রেজাউল করিমকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছিল। জেলে পাঠানোর পর এসআই আবু তাহের শিউলি নামের আরেক নারীকে দিয়ে রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে আরেকটি ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন। মামলা দুটির তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এসআই আবু তাহের। মামলার দুই বাদী রাজশাহীতে থাকতেন। সেই মামলার এক বাদীকে দেশের বাইরে পাঠাতে সহযোগিতা করেছেন এসআই আবু তাহের। ওই বাদীর পাসপোর্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও তিনি তা শুনেননি।
পরবর্তীতে রেজাউল করিম মহামান্য আদালতের মাধ্যমে ১৩ দিন সাজাভোগ করে জামিনে মুক্তিপান। এরই মধ্যে ওই দুই নারীর মেডিকেল রির্পোট পাওয়া যায়। সেই রিপোর্টে দেখা যায় ধর্ষণ মামলার দুই বাদীর শরীরে ধর্ষণের কোন আলামত নেই। এদিকে জামিনে বেরিয়ে আসার পর থেকে এসআই আবু তাহের রেজাউল করিমের পিছুৃ লাগে।
দিনের পর দিন মুঠোফোনে একেক সময় বিভিন্ন অংকের টাকা দাবী করেন। ওই মামলাগুলো থেকে ছাড়া পেতে চাইলে বিভিন্ন স্থানে টাকা দিতে হবে বলে জানান তিনি। টাকা না দিলে আরো সমস্যা হবে বলেও হুমকী দেন আবু তাহের। এদিকে ব্যবসায়ীক সুনাম রক্ষার পাশাপাশি তাদের পাতানো জাল থেকে রক্ষা পেতে এসআই আবু তাহেরের ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বর এবং অন্যদিন সরাসরি আর্থিক লেনদেন করেন রেজাউল করিম।
এসআই আবু তাহের চক্রের হাত থেকে রক্ষা পেতে রেজাউল করিম পুলিশের ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেন। পরবর্তীতে পুলিশের ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তদন্ত শুরু হয় এসআই আবু তাহেরের বিরুদ্ধে। সেই সাথে ওই মামলার বাদীদেরকেউ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
তারা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শিকার করে এসআই আবু তাহের তাদের দিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণের মামলা করিয়ে নেন। বিভাগীয় তদন্ত শুরু হলে সমস্যায় পড়ে যায় এসআই আবু তাহের। এদিকে চাকারী বাঁচাতে ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের বাসায় ছুটে আসেন। মামলা দেয়া ঠিক হয়নি বলে ক্ষমা চান রেজাউল করিম সহ তার পরিবারের সদস্যদের কাছে।
এরই মধ্যে এসআই আবু তাহেরের বদলী হন আরএমপির পবা থানায়। মিথ্যা মামলা হলেও ২৮ লাখ টাকা না পাওয়ায় মামলা দুটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেননি। বদলী হলেও ওই ধর্ষণ মামলা দুটি কারো কাছে হস্তান্তর করেননি আবু তাহের। মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল না করায় বিড়ম্বনায় পড়েন ব্যবসায়ী রেজাউল করিম।
কোর্টে হাজিরাও দিয়েছেন অনেক বার। সাজানো ধর্ষণ মামলায় হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পেতে গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টম্বর ২০২৪) আরএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে হাজির হন রেজাউল করিম। ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের নিকট থেকে বিস্তারিত শুনে দ্রুত আরএমপির পবা থানায় কর্মরত এসআই আবু তাহেরকে পুলিশ লাইন্সে ক্লোজের আদেশ দেন।
মামলার বাদী সাদিয়া ব্যবহৃত দুটি ফোন নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়। সে কারণে বাদীর মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশ কমিশনারের জিজ্ঞাসাবাদের সময় সাদিয়া বলেন, আমি রেজাউল করিমের নামে মামলা দিতে চাইনি। আমি অন্য জনের নামে মামলা করতে চাইছিলাম। কিন্তু এসআই আবু তাহের জোর পূর্বক রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে মামলা করে নেন। যার রেকর্ড সংরক্ষিত আছে।
ষড়যন্ত্রমূলক মামলার আসামী ব্যবসায়ী রেজাউল করিম জানান, আমাকে ফাঁসাতে এসআই আবু তাহের নারীদের ব্যবহার করেন। তারা ভেবেছিল আমার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দিলে আমি তাদেরকে ২৮ লাখ টাকা দিয়ে দেবো। ব্যবসায়ীকভাবে আমার মান ক্ষুন্ন করার লক্ষ্যে তারা এই মামলা দুটি দায়ের করে। মামলা দুটি আদালতে বিচারাধিন চলামান। সঠিকভাবে তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানাচ্ছি।
এছাড়াও গত এপ্রিল মাসে রাজশাহী মহানগরীতে দুইজন টিকেট কালোবাজারিকে ধরে ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এসআই আবু তাহেরের বিরুদ্ধে।
এসআই আবু তাহেরের ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগের করা হলে তিনি বলেন, মামলাটি এখনো আমার কাছে আছে। আমি পুলিশ লাইন্সে আছি। মামলাটি দ্রুতই হস্তান্তর করা হবে। সেই সাথে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় যে মামলা রুজু করা হয়েছে তা চলমান আছে বলে স্বীকার করেন এসআই আবু তাহের।
পবা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসআই আবু তাহেরকে পুলিশ লাইন্সে ক্লোজের একটি চিঠি পাওয়ার পরই তাকে সেখানে পাঠানো হয়েছে। কি কারনে এই আদেশ সেটা আমার জানা নেই। আমি সম্প্রতি বদলী হয়ে পবা থানায় এসেছি।
এ ঘটনায় আরএমপির পুলিশ কমিশনার আবু সুফিয়ান জানান, এরই মধ্যে এসআই আবু তাহেরকে পুলিশ নাইন্সে ক্লোজ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।