নিজস্ব প্রতিবেদক
পানি উন্নয়ন বোর্ড চত্ত্বরে চাঁদা না দেওয়ায় সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ
রাজশাহীতে চাঁদা না দেওয়ায় সন্ত্রাসীরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চারনেতার ম্যুরাল নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কার্যালয়ের সামনে এই ম্যুরাল নির্মাণ করা হচ্ছে।
সন্ত্রাসীদের ভয়ে ঠিকাদারের শ্রমিকরা কাজ করতে পারছেন না। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের পওর সদর শাখার উপসহকারী প্রকৌশলী সুকেশ কুমার রবিবার (২৬ মে) বিকালে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যা পুলিশ থানার নথিতে জিডি হিসেবে রেকর্ড করেছে।
জিডিতে বলা হয়েছে, ‘রবিবার বেলা ১১টার দিকে ২০ থেকে ২৫ জন ব্যক্তি রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকে আনসার সদস্যদের বাধা উপেক্ষা করে জোরপূর্বক অফিস চত্বরে ঢুকে পড়ে।
এরপর তারা অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে এবং চলমান নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। এতে ৩০-৪০ জন শ্রমিক প্রাণভয়ে কাজ বন্ধ করে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যান।
সোমবার (২৭ মে) প্রাণের ভয়ে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেননি। ফলে নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল। নিরাপত্তার সংকটে ঠিকাদার কাজ শুরু করার সাহস পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ৬৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার এই ম্যুরাল নির্মাণের কাজটি করছেন রাজশাহীর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স খন্দকার কনস্ট্রাকশন। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী খন্দকার হাসান কবির। তিনি বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন।
তাই সরাসরি এই ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তার প্রতিনিধি মো. পলাশ জানান, ১০ দিন আগে তারা কাজ শুরু করেছেন। এরপর থেকেই বিহারী কলোনি, শালবাগান, উপশহর ও সপুরা এলাকার একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী বাহিনী চাঁদা দাবি করছিল। তারা বলেছিল, সংখ্যায় তারা মোট ২৫ জন।
সামনে ঈদ উপলক্ষে তাদের ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। চাঁদার টাকা না দেওয়ার কারণে রবিবার বাহিনীর সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে কাজ বন্ধ করে দেয়।
এ ঘটনার এক সপ্তাহ আগে সন্ত্রাসীরা পাউবো কার্যালয়ে ঢুকে হাঙ্গামা করেছিল। চাঁদা না দিলে পাউবোর এই কার্যালয়ে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হবে বলে সন্ত্রাসীরা সেদিন হুমকি দিয়েছিল।
পাউবোর ঠিকাদাররা জানান, পাউবো অফিস ঘিরে থাকা এই সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ থাকেন কর্মকর্তারা। এছাড়া রেহাই পান না পাউবোর ঠিকাদারেরাও।
এই সন্ত্রাসীরা পাউবো অফিসের আশপাশেই সব সময় আড্ডা দেয়। মাদকসেবনও করে প্রকাশ্যে। আর চাঁদা দাবি করে ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের কাছে। চাঁদা না দিলে তাদের হাতে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লাঞ্ছিতও হতে হয়।
পাউবো রাজশাহীর ঠিকাদার সমিতির সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাহফুজুল আলম লোটন বলেন, ‘এক সপ্তাহে আগে আমি পাউবো অফিসেই ছিলাম। সেখানেই এই সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে গিয়ে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে তারা পাউবো অফিস জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
এটা দেখে আমি ভীষণ ভয় পেয়ে যাই এবং অবাক হই। এখন শুনছি সন্ত্রাসীদের চাঁদা না দেওয়ায় বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চারনেতার ম্যুরাল নির্মাণের কাজটাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চা নেতার ম্যুরাল নির্মাণ কাজ যারা বন্ধ করে দিয়েছে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান বাদশা।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টা আমি শুনেছি। এটা জঘন্যতম একটা কাজ করেছে। যারা বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার ম্যুরাল নির্মাণের কাজে বাধা দিয়েছে, আমি তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘জিডির পর সোমবার সকালে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে পাউবো অফিসে পাঠানো হয়েছিল। তিনি খোঁজখবর নিয়ে এসেছেন। কারা কাজ বন্ধ করেছে সেটা দেখা হচ্ছে। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।