কোনো নিত্যপণ্যই শুল্কমুক্ত থাকছে না

Spread the love
Print Friendly, PDF & Email
image_pdfimage_print

জন্মভূমি নিউজ ডেস্ক
চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। ফলে মানুষের ব্যয় ও ভোগের হারও কমেছে। দুই বছর ধরে সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি। মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় অধিকাংশ মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে মানুষের অবস্থা যখন দিশাহারা, এমন সময়ে আমদানি করা কয়েক শ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর বিদ্যমান শতভাগ শুল্কছাড় সুবিধা তুলে দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ কোনো পণ্যই আর শূন্য শুল্কে আমদানি করার সুযোগ থাকছে না। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ ঘোষণা আসতে পারে। এমন ব্যবস্থা রেখে আসন্ন বাজেট তৈরির কাজ প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মানুষের মৌলিক প্রয়োজনীয় বিভিন্ন খাতের অন্তত ৩৩৫টি আমদানি পণ্যে ন্যূনতম ১ শতাংশ হারে শুল্ক বসানো হচ্ছে। এই তালিকায় রয়েছে অপরিশোধিত তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, চাল, গম, ভুট্টা, সরিষা ও সানফ্লাওয়ারসহ বিভিন্ন শাকসবজির বীজ, পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম অয়েল, ভিটামিন, পেনিসিলিন, ইনসুলিন, ওষুধ ও শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ, সার এবং বিভিন্ন ধরনের কৃষি উপকরণ ইত্যাদি।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত বাস্তবায়নে এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে এনবিআর। আইএমএফের শর্ত, কোনো পণ্যেই শূন্য শুল্ক রাখা যাবে না। রাজস্ব বাড়াতেই হবে। এ জন্য সম্ভাব্য সব খাত থেকে কিছু না কিছু কর আহরণ করতে হবে। তাই সংস্থাটির এ শর্ত মানতে গিয়ে আসছে বাজেটে প্রায় সব পণ্যেই ন্যূনতম ১ শতাংশ শুল্ক আরোপের পদক্ষেপ নিয়েছে এনবিআরের শুল্ক বিভাগ।

এ বিষয়ে এনবিআর মনে করে, শুধু রাজস্ব বাড়ানোই লক্ষ্য নয়। দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা, শিল্পের উন্নয়ন, আমদানিনির্ভরতা কমানো প্রভৃতি লক্ষ্যেও এনবিআর কাজ করছে। এ জন্য বিভিন্ন সময় খাতভিত্তিক শুল্ক সুবিধা দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো শিল্পকে লক্ষ্য করে শুল্ক সুবিধা দেওয়া হলে একদল লোক তৈরি হয় এসব সুবিধার অপব্যবহার করার জন্য।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এমনিতে মানুষ মূল্যস্ফীতির কারণে কষ্টে আছে। এর মধ্যে শুল্কমুক্ত পণ্যে শুল্ক আরোপ করলে মূল্যস্ফীতি আরও উসকে যাবে। ব্যবসায়ীরা শুল্কের নামে পণ্যমূল্য আরও বাড়িয়ে দেবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা বহাল রাখার পরামর্শ দেন তারা।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, রাজস্ব বাড়াতে এনবিআর এমন উদ্যোগ নিচ্ছে। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যে শুল্কমুক্ত আমদানির সুবিধা অব্যাহত রাখা উচিত। তা না হলে মানুষের কষ্ট বাড়বে।

জানা গেছে, বর্তমানে ৩৩৫টি পণ্যে ক্ষেত্রবিশেষে সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা উৎসে কর দিতে হলেও কোনো আমদানি শুল্ক দিতে হয় না। মূলত পণ্যগুলো সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা, শিল্পের প্রসার, রপ্তানি পণ্যের বাজার টেকসই করা, স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা ও জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় এসব পণ্যে শুল্কহার শূন্য রাখা হয়।

খাদ্যশস্য আমদানিতে বরাদ্দ বাড়ছে: অন্যদিকে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানির বাজেট বরাদ্দ ৩৪ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মূলত বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন কমে যাওয়া এবং টাকার বিপরীতে ডলারের দর বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্যশস্য আমদানিতে বাজেট বরাদ্দ বাড়াচ্ছে সরকার। খাদ্য নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় তহবিল নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে নেওয়া হচ্ছে এ উদ্যোগ।

নতুন বাজেটে বিদেশ থেকে চাল ও গম আমদানি বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৬ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ৪ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ৬২৩ কোটি টাকা বা ৩৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে সরকার বিদেশ থেকে ৩ হাজার ৮৬২ কোটি টাকার চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। অন্যদিকে বিদেশ থেকে আগামী অর্থবছরে গম আমদানিতে ২ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *