চোরাচালানের ৫০০ কোটি টাকার ভাগ নিয়েই খুন হন আজীম

Spread the love
Print Friendly, PDF & Email
image_pdfimage_print

জন্মভূমি নিউজ ডেক্স
ভাগের টাকা না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয় সিন্ডিকেট
আজীমকে আলটিমেটামও দিয়েছিল পাওনাদাররা
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকান্ডের নেপথ্য ঘিরে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত অঞ্চলের স্বর্ণ চোরাচালান ও মাদক পাঁচারের একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। এই হত্যাকান্ডটি কলকাতা সিআইডি ও বাংলাদেশের ঢাকা মহনগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে। পাশাপাশি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এমপি আনার হত্যাকান্ডের নেপথ্যে কারা জড়িত এবং কি কারণে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে এসব বিষয় অনুসন্ধানে মাঠে রয়েছে।

তাদের অনুসন্ধানে ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালান ও মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। হত্যাকান্ডে জড়িতরা ছিলো নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্য। আজ তারা শত শত কোটি টাকার মালিক। দেশ বিদেশে রয়েছে তাদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ ও ব্যবসা বাণিজ্য। আনার হত্যাকান্ডের নেপথ্য কারণ হিসাবে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে স্বর্ণ চোরাচালানে ৫শ কোটি টাকা লেনদেনের ঘটনা।

চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেটের অন্যতম শক্তিধর সদস্য হলেন আকতারুজ্জামান শাহীন। চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন একাধিক সাবেক সংসদ সদস্য ও এই দেশের শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ এক ডজন লোকের একটি সিন্ডিকেট। লেনদেনের ভাগবাটোয়ারার ৫শ কোটি টাকা এমপি আনার একাই আত্মসাত করেন। এই টাকা নিয়ে শাহীনসহ সিন্ডিকেটের সদস্যদের একাধিক বৈঠক হয়েছে। টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছিলো পাওনাদাররা। কিন্তু এমপি আনার টাকার ভাগ তো দেনই নি উল্টো স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে একক আধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন। এই ঘটনার পর সিন্ডিকেটের সদস্যরা এমপি আনারকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ তিনি বেঁচে থাকলে এই অঞ্চলের পুরো নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে। হত্যাকান্ড বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় এমপি আনারের বাল্যবন্ধু ও ঘনিষ্টজন কোটচাঁদপুরের বাসিন্দা বর্তমান মেয়রের ছোটভাই আকতারুজ্জামান শাহীনকে।

শাহীন দুই মাস আগে থেকেই এমপি আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। হত্যাকান্ডটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় শাহীনের ফুফাতো ভাই খুলনার পূর্ব বাংলা কমিউনিষ্ট পার্টির নেতা ও কুখ্যাত খুনী শিমুল ভুইয়া ওরফে আমানুল্লাহকে। আমানুল্লাহর পরিকল্পনায় খুনের স্থান ঢাকা ও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের পরিবর্তে কলকাতায় নির্ধারণ করা হয়। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যা যা করনীয় শাহীন তার সবটাই করেছেন।

গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনে এমপি আনারকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ অসংখ্য টুকরা করে ছোট ছোট শপিং ব্যাগে ভর্তি করে। হত্যাকারীরা সেই ব্যাগগুলো গার্ডেনের সামনের খালে ফেলে দেয়। স্মরণকালে নিষ্ঠুরতম এমপি আনার হত্যাকান্ডটি হিন্দি সিনেমাকেও হার মানিয়েছে বলে একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গাসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তি এলাকা দিয়ে ১৯৮৬ সাল থেকে স্বর্ণ চোরাচালানসহ মাদক পাচার হয়ে আসছে।

দীর্ঘ তিন যুগের অধিককাল এই স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে জিরো থেকে হিরো হয়েছেন এমপি আনার ও হত্যাকান্ডে জড়িত শাহীনের মত অনেকেই। অনেকেই হয়েছেন দেশের নামীদামি ব্যবসায়ী। কারো বাবা ছিলেন মত্স্য ব্যবসায়ী আবার সাধারণ কৃষক। তাদের এখন রাজধানী ঢাকাসহ দেশ বিদেশে রয়েছে বিপুল ধন সম্পদ। কেউ কেউ দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী। কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও চুয়াডাঙ্গা এলাকার বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতা এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলাপকালে এই স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তাদের চোখের সামনে এই স্বর্ণ চোরাচালান ও মাদক পাচার হচ্ছে। এই বাসিন্দারা এটাও দেখছেন যে এই স্বর্ণ পাচারের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেনীর কর্মকর্তা, প্রশাসনের কর্মকর্তা, কাস্টমস কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলের এক শ্রেনীর নেতারা এই চোরাচালান সিন্ডিকেট থেকে নিয়মিত মোটা অংকের টাকা পাচ্ছেন। প্রশাসনের সহযোগিতাকারীরাও কোটিপতি বনে গেছেন। দুবাই এবং সিঙ্গাপুর হতে ঢাকা ও সিলেট বিমানবন্দর হতে বেশিরভাগ স্বর্ণ পাচার হয়। এই বিমানবন্দর থেকে শুরু করে বাসযোগে নিরাপদে সীমান্তের ওপার পর্যন্ত পৌছে দেওয়া পর্যন্ত ওই সকল কর্মকর্তা অতন্দ্র প্রহরীর মত সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।

মাঝে মাঝে দু’একটি চালান বিমানবন্দরে ধরা পড়লেও ৯৯ ভাগ স্বর্ণের চালানই বিনা বাধায় বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে যায়। স্বর্ণ চোরাচালান ও ভাগ বাটোয়ারা দ্বন্দ্বে কিংবা সহযোগিতা না করার কারণে ওই অঞ্চলে এমপি আনার ছাড়াও চুয়াডাঙ্গার সিএনএফের এজেন্ট সাইফুল ছাড়াও অনেকেই হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। নিখোঁজও হয়েছেন অনেকে। তাদের আর কোন হদিস মেলেনি। এ ধরনের তথ্য ওই অঞ্চলের এলাকাবাসী , রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছেও রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *