জন্মভূমি নিউজ ডেক্স
রাজশাহীর অভিজাত উপশহর এলাকায় একটি সাত তলা ভবন ভাড়া নিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলছে সৃষ্টি বেসরকারী (ব্যক্তি উদ্যোগে) সেন্ট্রাল স্কুলের পাঠদান। প্লে থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত এখানে পাঠদান করানো হলেও প্রাথমিকের কোনো অনুমোদন নাই। ফলে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষার সময় অন্য কোনো স্কুলে ভর্তি দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া হয়। এতে করে সৃষ্টি সেন্ট্রাল স্কুলের শিক্ষার্থী হলেও এএসসির সদনে লিখা হয় তখন অন্য কোনো স্কুলের নাম।
এভাবেই পরের ওপর দিয়ে স্কুলটি পরিচালনা হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। আবার নতুন কারিকুলামে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা না থাকলেও সেটিও মানছে না এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তারা নিজেদের ইচ্ছামতো পরীক্ষা নিচ্ছে। এরই মধ্যে প্লে থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের প্রথম সাময়িক মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া শুরু করেছে এ প্রতিষ্ঠানটি। আর এসব অনিয়ম নিয়ে চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মাঝে। কয়েকজন অভিভাবক এ নিয়ে গণমাধ্যমের কাছে একটি অভিযোগও মেইল করে পাঠিয়েছেন। এতে তারা উল্লেখ করেছেন, রাজশাহীর উপশহরে অবস্থিত সৃষ্টি সেন্ট্রাল স্কুলে আগামী শনিবার নতুন শিক্ষাব্যবস্থা বর্হিভূত প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
সরকারি মূল্যায়ন এবং তার সাথে সেমিস্টার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করে শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই অবস্থায় একজন অভিভাবক হিসেবে আপনাদের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের সহায়তা কামনা করছি। ওই অভিযোগের সূত্র ধরে প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে আরও নানা অনিয়মের অভিযোগ।
সূত্র মতে, গত প্রায় ১২ বছর ধরে রাজশাহীতে সৃষ্টি সেন্ট্রাল স্কুলের কার্যক্রম চলছে। এই সময়ে এখন পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর জন্যেও কোনো অনুমতি নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। অথচ প্রতি বছর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে প্লে-৫ম শ্রেণি পর্যন্ত অন্তত এক হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি করে। ভাড়া করা ভবনের একেকটি কক্ষে গাদাগাদি করে পাঠদান করানো হয়। প্লে-৫ম শ্রেণি পর্যন্ত একেকটি কক্ষে দেড়-দুইশ শিক্ষার্থী বসিয়ে পাঠদান করানো হয়। শিক্ষা নগরী রাজশাহীতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের চাহিদা মতো মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকার সুযোগে সৃষ্টি সেন্ট্রাল স্কুলে হুমড়ি খেয়ে পড়ের অভিভাবকরা। সেই সুযোগটিই কাজে লাগিয়ে বেসরকারী এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার নামে মূলত বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। কোনো ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এখানে প্লে-দশম শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমানে অন্তত আড়াই হাজার শিক্ষার্থী পাঠদান করানো হচ্ছে একটি মাত্র ভবনে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেই সংখ্যা নিয়েও চালায় প্রতারণা।
শিক্ষার্থীর সংখ্যা জানতে চাইলে এ প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে সবমিলিয়ে এক হাজার থেকে এগারশ শিক্ষার্থী আছে। এসব শিক্ষার্থীদের আমরা মূল্যায়ন পরীক্ষা নিচ্ছি। গত মাস থেকে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তবে তীব্র দাবদাহের কারণে এখন পরীক্ষা স্থগিত আছে। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী স্কুল চালু হলেই আবার পরীক্ষা নেওয়া হবে।’
তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভিতরের দেয়ালে সাটানো সিট বিন্যাশ থেকে দেখা যায়, শুধুমাত্র প্লে থেকে ৭ম শ্রেণি পর্যন্তই এখানে শিক্ষার্থী আছে প্রায় দুই হাজার। এর পর অস্টম-দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী আছে আরও ৫ শতাধিক।
এ নিয়ে কথা প্রশ্ন করা হলে অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘কিছু শিক্ষার্থী বেশি আছে। তবে আপনি অফিসে আসেন। সামনা-সামনি কথা বলবো।’
অভিযোগ, সূত্রে জানা গেছে, এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে মাসিক বেতন নেওয়া হয় সর্ব নিম্ন ১২শ টাকা। ভর্তির সময় নেওয়া হয় ৮-২০ হাজার টাকা। এখন নিয়ম বর্হিভূতভাবে প্রথম সাময়িক সেমিস্টার পলীক্ষা নিয়ে পরীক্ষার্থীদের নিকট থেকে আদায় করা হচ্ছে ২০০-৫০০ টাকা হারে ফি। তবে সরকারি নতুন কারিকুলামে প্লে থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা নেওয়া যাবে না উল্লেখ থাকলেও মূল্যায়নের নামে বছরে তিনটি করে পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে গত মাসের ২০ তারিখ থেকে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মাঝে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে হাসনাত আলী নামের একজন অভিভাবক বলেন, রাজশাহীতে গুণগত মাণের প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে সৃষ্টি সেন্ট্রাল স্কুল যাচ্ছে-তাই করে যাচ্ছে। এরা শিশুদের ওপর মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে একের পর এক পরীক্ষা নিয়ে। আবার একই ক্লাসে এক থেকে দুইশ শিক্ষার্থীরও পাঠদান করানো হচ্ছে। গাদাগাদি করে। কেউ কেছিু বলার নাই।’
আরেক অভিভাবক হযরত আলী বলেন, ‘একটি মাত্র ভবন ভাড়া নিয়ে সৃষ্টি সেন্ট্রাল স্কুল হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে গাদাগাদি করে পাঠদান করাচ্ছে। এদের নাকি কোনো অনুমোদনও নাই। তাহলে কিভাবে চলছে এ প্রতিষ্ঠানটি।’
জানতে চাইলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত অনুমোদন নেওয়া আছে। এর পরে অনুমোদন নাই। এখান থেকে শিক্ষার্থীরা পড়লেও এসএসসিতে গিয়ে অন্য স্কুলে ভর্তি দেখিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।’
তবে রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, ‘সৃষ্টি সেন্ট্রাল স্কুলের কোনো অনুমোদন নাই। ওরা কিভাবে পাঠদান করাচ্ছে-তা বলতে পারব না। তবে আমাদেও কাছে কোনো কাগজ নাই।’
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডেও স্কুল পরিদর্শক জিয়াউল হক বলেন, ‘সৃষ্টি সেন্ট্রাল ছাড়াও বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজশাহীতে আছে, তাদের অনুমোদন নাই। আমরা এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। এরা কোনোভাবেই শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পাওে না। কিন্তু তার পরেও শত শত শিক্ষার্থী কিভাবে ভর্তি করিয়ে পাঠদান করাচ্ছে, সেটি বোধগম্য নয়।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নতুন কারিকুলামে তো তৃতীয় শ্রেণি পর্যস্ত কোনো পরীক্ষায় নাই। তাহলে সৃষ্টি সেন্ট্রাল স্কুল কিভাবে পরীক্ষা নিচ্ছে? এদেও লাগাম টানতে হবে।