ভুয়া জামিননামায় ৪ আসামির মুক্তি, জারিকারক সহ ৩ জনের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযুক্তের সংবাদ সম্মেলন

দেশের খবর
Spread the love
Print Friendly, PDF & Email
image_pdfimage_print

মোছাঃ নিছপা আক্তার হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিদী
হবিগঞ্জে ভুয়া জামিননামা দিয়ে কারাগার থেকে চার আসামি বের হয়ে যাওয়ার ঘটনায় বেরিয়ে এসেছে অজানা তথ্য। এ ঘটনায় কারাগারে যাওয়া আসামি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার এড়ালিয়া গ্রামের মৃত মো: মন্নর আলীর পুত্র হুসাইন মোহাম্মদ আরিফ জামিনে বেরিয়ে এসে ৯ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেন।
তিনি বলেন, কগনিজেন্স কোর্ট- (বানিয়াচং-বাহুবল) এ মৃগী (মাস্টার রোলে) হিসেবে চাকুরি করতেন। উক্ত চাকুরির সুবাদে তাকে নিয়মিত জেলখানায় জামিননামা দিয়ে পাঠানো হতো। গত ৩০ জানুয়ারি তাকে হবিগঞ্জ সদর কোর্ট থেকে ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক ভূয়া জামিনের মামলায় সন্দেহমূলকভাবে আটক করা হয় এবং পরেরদিন মামলার ঘটনার বিষয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন। জবানবন্দী প্রদানের পূর্বে কোর্ট ইন্সপেক্টর নাজমুল হক, কোর্টের জারীকারক-পংকজ ও মাধবপুর কোর্টের সি.এস.আই সুকোমলসহ আরও কিছুসংখ্যক অফিসার তাকে বিজ্ঞ আদালতে ফৌ:কা:বি: ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদানের জন্য চাপ দিতে থাকেন। তাদের শেখানো মতে জবানবন্দী প্রদানের জন্য বলেন। তাদের কথামতো জবানবন্দি দিলে এ মামলায় ৭ দিনের মধ্যে জামিন করাবেন, মামলা দায় থেকে তাকে খালাস করাবেন, মামলার খরচাদি বহন করবেন, তার পরিবারের খরচ বহন করবেন পাশাপাশি তাকে আর্থিকভাবে খুশি করবেন বলে আশ্বস্থ করেন। আর যদি এর বাহির বললে অনেক অফিসারের চাকরি যাবে।
তারা আরিফকে সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রায় দীর্ঘ ১০/১১ ঘন্টা যাবত আটক রাখেন। বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে শারীরিক ও মানসিকভাবে টর্চার করেন।
আরিফ বলেন, প্রথমে রাজি না হলে সুকোমল ও নাজমুল তাকে মারধর করেন। একপর্যায়ে আরিফ তাদের শেখানো মতে জবানবন্দি প্রদানের জন্য রাজি হন। পরদিন শুক্রবার তাদের শেখানো মতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ মোতাবেক জবানবন্দী বিজ্ঞ আদালতে প্রদান করতে গেলে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট আরিফকে বললেন তুমি স্বেচ্ছায় যা বলতে চাও, তা সত্য বল, আর যদি মিথ্যা বল তাহলে তোমাকে রিমান্ডে পাঠানো হবে। এবং চিন্তা-ভাবনার জন্য সময় দেন। পরবর্তীতে আরিফ রিমান্ডের ভয়ে সত্য বলতে রাজি হন এবং সত্য ঘটনা ম্যাজিস্ট্রেট বলে দেন। জবানবন্দী গ্রহণ শেষে তাকে জেলা কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেট।
কিন্তু তাকে জেল হাজতে না পাঠিয়ে কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক নাজমুল, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) জাহাঙ্গীর, মাধবপুর আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের সি.এস.আই সুকোমল ও ডিএসবি হবিগঞ্জ এর এস.আই হানিফ তাকে কোর্ট ইন্সপেক্টরের অফিস রুমে প্রায় ০৪ ঘন্টা আটকে রাখে এবং তাদের শেখানো মতে না বলে সত্য ঘটনা ম্যাজিস্ট্রেটকে বলার কারণে আরিফকে রাত অনু: ৮ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত অনেক মারপিঠ করে এবং হুমকি প্রদান করে যে, আরিফ যদি সুকোমল ও কোর্টের স্টাফ পঙ্কজ নিদোর্ষ দাবী করে ভিডিও সাক্ষাৎকার প্রদান না করে তবে একজন এডিশনাল পুলিশ সুপার আসবে কিছুক্ষণ পর তার সামনে যেন তাদের শেখানো মতে না বলে তাহলে তাকে ও তার ভাইদেরকে ৫ই আগস্টের মোস্তাক হত্যা, রিপন হত্যা ও অন্যান্য পুলিশ বাদী মামলায় জড়িয়ে আরিফের পরিবারকে ধ্বংস করা হবে।
তারপরও আরিফ রাজি না হলে মাদক দিয়ে তার বউকে দুগ্ধজাত সন্তান সহ জেলে পাঠিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করার হুমকি দেয়।
তারা আরিফকে একবার বলে সুকোমলকে বাদ দিয়ে কোর্ট ইন্সপেক্টরের কাছে ভিডিও সাক্ষাৎকার প্রদান করতে আবার বলে পংকজের উপর হালকা অভিযোগ দিয়ে বলতে। আবার কেউ বলে সুকোমল ও পংকজকে বাদ দিয়ে ভিডিও তে বলতে ।
সংবাদ সম্মেলনে আরিফ জানান, একপর্যায়ে আরিফ শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও নিরুপায় হয়ে তাদের কথামতো মোবাইল ক্যামেরার সামনে ৪/৫ বার তাদের শেখানো মতে ভিডিও সাম্মতি প্রদান করতে বাধ্য হন এবং একজন এডিশনাল পুলিশ সুপার এর সামনে তাদের শেখানো মতে বক্তব্য দেন।
রাত ১২ টার সময় তাকে যখন জেলে প্রেরণ করা হয় তখন বলা হয় যে, আমি যেন মামলার ঘটনার বিষয়ে জেল সুপার বা মিডিয়ার কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলি যে, ভুয়া জামিন কাজে কেউ জড়িত না। সে একা করেছে। এবং জেলের কারো কাছে বা সাংবাদিকের কাছে কোনো সময় মুখ খোললে আবার মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে জেলে পাঠানো হবে।
আরিফ জেল সুপারের কাছে সত্য ঘটনা বলেন। জামিনে বের হয়েও আরিফ এখন বাড়িতে থাকতে পারেন না পুলিশি হয়রানির ভয়ে। গত মার্চ মাসের ১২ তারিখ জামিনে বের হওয়ার পর দুইদিন সিভিল পোষাকে কয়েকজন লোক গভীর রাতে তাকে বাড়িতে খুঁজতে যায়। এর পর থেকে আরিফ বাড়িতে থাকেন না । পরিবার নিয়ে নিয়ে তিনি ভয়ে রয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *