বারিন্দ মেডিকেল কলেজে গিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে অবরুদ্ধ ৪ সমন্বয়ক

রাজশাহী
Spread the love
Print Friendly, PDF & Email
image_pdfimage_print

জন্মভূমি নিউজ ডেক্স
রাজশাহীর বারিন্দ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক এক কেন্দ্রীয় সমন্বয়কসহ চারজন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে তাদের উদ্ধার করে চন্দ্রিমা থানায় নিয়ে যায়। মঙ্গলবার দুপুর থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে ওই মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।

এই চারজন হলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী মিশু, সংগঠনের জেলা কমিটির মূখ্য সংগঠক সোহাগ সরদার, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল বারী ও ছাত্রনেতা আল-সাকিব। এদের মধ্যে মিশু ও সাকিব রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আব্দুল বারী ও সোহাগ সরদার পড়াশোনা করেন রাজশাহী কলেজে।

বারিন্দ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মালিক আওয়ামী সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তার বাবা মো. শামসুদ্দিন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বর্তমানে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

বারিন্দ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. বেলাল উদ্দীন বলেন, ‘এই চারজন সোমবার এসে আমাদের সচিবের সঙ্গে কথা বলে গিয়েছিলেন। আজ আমার সঙ্গে বসার কথা ছিল। কিন্তু আমার সঙ্গে না বসে সরাসরি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কক্ষে যান। তারা বিভিন্ন কথাবার্তা বলছিলেন। এখন আমাদের কলেজেও তো আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আছে। তারা এসবের প্রতিবাদ করে এবং তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে।’

অধ্যক্ষ আরও জানান, তার কলেজে অনুষ্ঠান চলছে। তাই আগে থেকেই পুলিশ ছিল। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পুলিশ সেনাবাহিনীকে খবর দেয়। পরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কুইক রেসপন্স টিমের (সিআরটি) সদস্যরাও আসেন। তারা চারজনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। তবে যাওয়ার আগে তারা আমাদের শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চান। আমিও তাদের ক্ষমা করে দেওয়ার অনুরোধ করেছি।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামসুদ্দিন বলেন, আমার সাথে কঠোর ভাষায় কথাবার্তা বলেছে। অশালিন আচরণ করেছে। আর কিছু না বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

আরএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তাই সন্ধ্যায় ওই চার ছাত্রনেতাকে নগরের চন্দ্রিমা থানা থেকে অন্য ছাত্রনেতাদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।’

এদিকে, এ ঘটনায় রাত ৮টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার ব্যাখ্যা দেন সমন্বয়করা। সেখানে গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী মিশু, সোহাগ সরদার ও আব্দুল বারী স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনানো হয়। লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনার গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী মিশু।

লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘‘প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক এবং ডিজিটাল মিডিয়ার সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা আসসালামু আলাইকুম। আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) রাজশাহীর বারিন্দ মেডিকেল কলেজে ঘটে যাওয়া অনাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এবং অভিযোগ প্রসঙ্গে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে আজকের এই সংবাদ সম্মেলন।

‘‘প্রিয় দেশবাসী,
আপনারা জানেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে দেশের ছাত্র-জনতার উপর গণহত্যার সাথে জড়িত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের আশ্রয় প্রশ্রয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। বেশ কয়েকদিন ধরে নগরীর পদ্মা আবাসিকে অবস্থিত বারিন্দ মেডিকেল কলেজ থেকে আমাদের কাছে বেশকিছু অভিযোগ আসতে থাকে। সেখানে আওয়ামী লীগের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাবার (যিনি শাহরিয়ার আলমের অবর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন) আশ্রয়ে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সেখানে কর্মরত রয়েছেন। চলমান অপারেশন ডেভিল হান্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে আমরা সেখানে তথ্য সংগ্রহ করতে যাই।’’

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির সচিব (ভারপ্রাপ্ত) তাজুল ইসলাম রনির সাথে যোগাযোগ করে আমরা প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল, চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনায় বসি। আলোচনার এক পর্যায়ে সেখানে কর্মরত বেশ কয়েকজন অফিস স্টাফ (যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত) এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী ঢুকে পড়েন এবং আমাদের বাকবিতণ্ডা শুরু করেন। এরমধ্যে রুম এবং প্রতিষ্ঠানটির বাইরে মব তৈরি করে আমাদের আটকে ফেলা হয় এবং ইচ্ছেকৃতভাবে চাঁদাবাজ বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। আমরা এই ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছি। এবং অনতিবিলম্বে ঘটনার সাথে জড়িত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *