বাদাম বিক্রেতা থেকে অঢেল সম্পদের মালিক মেকাইল

দেশের খবর
Spread the love
Print Friendly, PDF & Email
image_pdfimage_print

সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মহিষালবাড়ি এলাকার মেকাইল ইসলাম। এক সময় গোদাগাড়ী বাজারে বাদাম বিক্রি করতেন। সাথে বিক্রি করতেন আমড়া, খিরা। ছিল খুপড়ি ঘর। মেকাইল ইসলামের বাদাম, আমড়া, খিরা বিক্রি করা আয় ও তার বাবার চায়ের দোকানের আয় দিয়ে তাদের সংসার চললেও সেই মেকাইল এখন অঢেল সম্পদের মালিক। এক যুগ আগেও যে মেকাইলের শোবার ঘর ছিল না, তার এখন বিলাশ বহুল বাড়ি। রয়েছে ফসলি জমি, দামি গাড়ি, ট্রাক, কাপড় ও প্রোপাটিজের ব্যবসা। ভাইদের করেছেন প্রতিষ্ঠিত।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গোদাগাড়ীর মহিষালবাড়ির নজরুল ইমলামের চার ছেলে। তারমধ্যে বড় ছেলে মেকাইল। নজরুল ইসলামের বাড়িতে সদস্য সংখ্যা প্রায় ৮ জন। অভাবের সংসার নজরুল ইসলামের। অভাবের তাড়নায় নজরুল ইসলাম চায়ের দোকান করতেন মহিষালবাড়িতে। আর তার বড় ছেলে মেকাইল গোদাগাড়ীর গোল চত্ত্বরসহ আশপাশে বাদাম বিক্রি করতেন। শুধু বাদাম নয়, সাথে আমড়া, খিরাও বিক্রি করতেন। এতেও তাদের সংসার না চলায় মেকাইল মাঝে মাঝে দিনমজুরের কাজ করতেন। মেকাইলের বাদাম সুস্বাদু হওয়ায় অনেকটাই জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। দিনভর মেকাইল বাদাম বিক্রি করে সন্ধ্যায় চায়ের দোকান থেকে তার বাবা নজরুল ইসলামকে নিয়ে বাসায় ফিরতেন। দুজনার যে আয় হতো তা দিয়ে চলতো তাদের সংসার।

জানা গেছে, মেকাইল অভাবের তাড়নায় বাদাম বিক্রির পাশাপাশি এক সময় হেরোইন ও ইয়াবা বহণের কাজ শুরু করেন। এতে ধীরে ধীরে তার সংসারে স্বচ্ছলতা আসতে শুরু করে। সময়ের ব্যবধানে তিনি বাদাম বিক্রি ছেড়ে দেন। নিজেই শুরু করেন ইয়াবা ও হেরোইনের ব্যবসা। ইয়াবা ও হেরোইন ব্যবসার সুবাদে দুর হয় মেকাইলের সংসারের সকল অভাব। গড়তে থাকেন সম্পদ। মাত্র একযুগে মেকাইল হেরোইন ও ইয়াবা ব্যবসা করে গড়েছেন অঢেল সম্পদ। মাঝখানে তিনি লোক দেখানো গরুর ব্যবসাও করেছেন। এই ব্যবসার আড়ালেও ছিল মাদকের কারবার।

যার বাইসাইকেল কেনার যার সমর্থ ছিল না, বর্তমান তিনি চড়েন দেড় লাখ টাকার মোটরসাইকেলে, মহিষালবাড়িতে রয়েছে ইমরান বিগ বাজার নামে কাপড়ের বড় দোকান, রয়েছে ফসলি জমি, কিনেছেন ট্রাক। শুধু তাই নয়, মেকাইল মাদক ব্যবসা করে নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি তিনভাইকেও প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছেন। বছর ১০ বা ১২ আগেও মেকাইলসহ তার পরিবারের সদস্যদের থাকার মত সম্বল বলতে ছিল কুঁড়ে ঘর। কুঁড়ে ঘর থেকে তিনি করেছেন বিলাশ বহুল বাড়ি।

এছাড়াও বর্তমান মেকাইলের ব্যবসায়ী পার্টনার রয়েছে মোহাম্মদ আলী ও মোস্তাক নামে দুই ব্যক্তি। তারা তিনজন প্লটের ব্যবসা করছেন। মূলত প্লটের ব্যবসায় কোটি কোটি টাকা ছাড়া সম্ভব না। সেই প্লটের ব্যবসার সাথেও জড়িত মেকাইল।

গোদাগাড়ী পৌর এলাকার মহিশালবাড়ীর মেকাইলের মহল্লার আশপাশের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মেকাইল ইয়াবা ও হেরোইন ব্যবসায়ী হিসাবে এলাকায় পরিচিত। মহিষালবাড়ি এলাকায় গিয়ে মেকাইলের নাম বললে যে কেউ তার বাড়ি দেখিয়ে দেন। কারণ এমন রাজকীয় বিলাশবহুল বাড়ি ওই তল্লাটে আর নেই। ছোট থেকে বড় সবাই মেকাইলকে ইয়াবা ব্যবসায়ী বলেই চেনেন, জানেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ীতে মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকায় মেকাইলের নাম ছিল প্রথম সারিতে। বর্তমান মাদক ব্যবসায়ীদের সেই তালিকায় তার নাম নেই। তিনি থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা থেকে তার নামটি সরিয়েছেন। বর্তমান যারা থানার দায়িত্বে রয়েছেন তারা জানেন মেকাইল একজন বড় ব্যবসায়ী।

থানা পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তথ্যমতে- মেকাইল বেশ কয়েকবার মাদকদ্রব্য নিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন। তবে সেখান থেকে ছাড়া পেতে তাকে বেগ পেতে হয়নি। কারণ তিনি মাদকের সবচেয়ে বড় সিন্ডিকেটের প্রধান ছিলো। যার কারণে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আটক হওয়ার পরও ছাড়া পেয়েছে তিনি। আবার কখনো খেটেছেন জেল। বর্তমান গোদাগাড়ী থানা পুলিশের যে গুটি কয়েক সদস্য তার আমলনামা জানেন তাদের ম্যানেজ করেই টিকে আছেন মেকাইল।

বাদাম বিক্রেতা মেকাইল ইসলামের সাথে কথা বলা হলে তিনি মাদকের সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, গরুর ব্যবসা করে তিনি সম্পদের মালিক হয়েছেন। কতদিন ধরে তিনি গরুর ব্যবসা করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি আমার সাথে বসেন তারপর আলাপ করবো। এছাড়াও তিনি বিকাস নম্বর চান।

গোদাগাড়ী থানার অফিসার্স ইনচার্জ আব্দুল মতিন জানান, আমি এ থানায় আসার পর থেকে মেকাইল সম্পর্কে যতটুকু জানি তিনি একজন বড় ব্যবসায়ী। সামান্য কাপড় ব্যসায়ী এতো অঢেল সম্পদের মালিক হলো কি করে সেটি দেখার বিষয়।

তিনি বলেন, কাপড়ের ব্যবসা করে এতো অল্প সময়ে এতো অঢেল সম্পদের মালিক হওয়া সম্ভব না। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য তার উপর নজর রাখা হয়েছে। প্রমান সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *