স্টাফ রিপোটার
২০১৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এক বিতর্কিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মাধবদী পৌরসভার নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রথমবার মেয়র হন মো: মোশাররফ হোসেন। ব্যালট পেপার ছিনতাই,গায়ের জোরে ভোট মারা, গোলাগুলি, ককটেল বিস্ফোরণ, কেন্দ্র বন্ধ এমন কোন ঘটনা নেই যা এই নির্বাচনে ঘটেনি । ২০২১ সালের ১৪ মার্চ আবারো নৌকা প্রতীক নিয়ে বিতর্কিত আরেকটি নির্বাচনে দ্বিতীয় বার মেয়র হন তিনি।ঐ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এনে বিএনপি’র প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। ফলে খালি মাঠে বিপুল ভোটে বিজয় পান তিনি ।
নরসিংদী -১এর স্থানীয় সংসদ সদস্যের আশ্রয়তলে থেকে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় প্রচন্ড দাপটের সাথেই চলছিল তার রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক জীবন। কিন্তু হঠাৎই যেন এক ছন্দপতন। অর্থ আর ক্ষমতার দাম্ভিকতায় দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র হওয়ার পর তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো:নজরুল ইসলাম হিরো (বীর প্রতীক)এর সাথে বিরোধে জড়ান । বিরোধ এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে শেষ পর্যন্ত তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নরসিংদী পৌরসভার সাবেক মেয়র মো:কামরুজ্জামান কামরুলের পক্ষে নির্বাচন করেন। নির্বাচনে হিরু বিপুল ভোটে বিজয়ী হলে উভয় সংকটে পড়ে যান মোশারফ হোসেন। একদিকে নরসিংদীর সর্ববৃহৎ তাঁতিদের সংগঠন সোনার বাংলা সমবায় কটন মিলস লি.এর সভাপতি পদ যাওয়ার পথে, অন্যদিকে তার সোনালী গ্রুপের ঋণ খেলাপির দায়ে সকল কার্যক্রম স্থগিত করেছেন অগ্রণী ব্যাংক প্রিন্সিপাল শাখা । ঋণ খেলাপির দায়ে অপসারিত হতে পারেন মেয়রের পদ থেকেও।
জানা যায়, তাঁতি না হয়েও ২০১৩ সালে উত্তর নওপাড়া দন্তবায় সমবায় সমিতির সদস্য পদ নেন মোঃ মোশারফ হোসেন মানিক। তাকে সদস্য করা কাগজেও রয়েছে ঘষামাজা । কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে এই সমবায় সমিতির কোন কার্যক্রম না থাকলেও দীর্ঘদিন যাবত কাগজে-কলমে টিকিয়ে রাখা হয়েছে এই সমিতিকে। এই সমিতির সদস্য পদ নিয়ে তিনি নরসিংদীর তাঁতিদের সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী সংগঠন সোনার বাংলা সমবায় কটন মিলস লি.এর সভাপতি হয়ে যান । কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে চলতি মাসে এই সমিতিসহ আরো ছয়টি সমিতিকে অবসায়ন করা হয়েছে। অর্থাৎ এই সমিতিগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে মহাবিপদে পড়েছেন মোঃ মোশারফ হোসেন। সমিতির কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ায় তার সোনার বাংলা সমবায় কটন মিলস লি.এর সভাপতি পদটিও এখন চলে যাওয়ার পথে ।
১৯৫১সালে নরসিংদীর প্রকৃত তাতিরা মিলে নি:স্বার্থভাবে প্রতিষ্ঠিত করে সোনার বাংলা সমবায় কটন মিলস লি.সংগঠনটি।বর্তমানে এই সংগঠনের শেয়ারহোল্ডার প্রায় ১৩৬০ জন। ৭টি মার্কেটের ৭০৮টি দোকান থেকে এই সংগঠনের বছরে আয় ৪৮ লাখ টাকা।কিন্তু এখানে রয়েছে বিশাল অনিয়ম। একদিকে এই টাকার হচ্ছেনা সুষম বন্টন। অন্যদিকে ৭০৮ টি দোকানের বেশির ভাগই চলছে সাবলেটে।কিন্তু সাবলেটে দোকান চালানো সম্পূর্ন অবৈধ।এখানে বছরে একটি দোকান থেকে সর্বনিম্ন ৪,৬২০থেকে সর্বোচ্চ ৩৩ হাজার ৪৭২ টাকা ভাড়া বাবদ আয় করলেও একটি দোকান থেকে মাসেই ৫ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকার উপরে ভাড়া উঠে।অতিরিক্ত এই বিশাল অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন স্বার্থনেস্বী সুবিধাভোগী মহল।এতে করে কোটি কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে শেয়ার হোল্ডারদের।ফলে সঠিক মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। দীর্ঘদিন এই সমিতির সভাপতি থাকলেও এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেননি মোশারফ হোসেন ।
এই বিষয়ে মোবাইলে তার বক্তব্য নিতে ফোন দিলে তিনি জানান,সম্পূর্ন অবৈধভাবে উদ্দেশ্যপ্রনোদিত হয়ে এই সমিতিগুলোর কার্যক্রম বন্ধকরা হয়েছে।আমি এর বিরুদ্ধে আপিল করবো।যদি তাতেও সঠিক সমাধান না পাই, তখন আমি হাইকোর্টের শরনাপন্ন হব।
চলবে,,,,,,