রাজশাহীতে অনুমোদনহীন গার্মেন্টস কারখানার সন্ধান

Spread the love
Print Friendly, PDF & Email
image_pdfimage_print

জন্মভূমি ডেক্স

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৮নং ওয়ার্ডের আওতাধীন শালবাগান পাওয়ার হাউজ সংলগ্ন এলাকায় একটি অনুমোদনহীন গার্মেণ্ট কারখানার সন্ধান মিলেছে। সিটি করপোরেশন থেকে কোনো ধরণের ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই কারাখানাটি গত তিন বছর ধরে পরিচালনা করা হচ্ছে। অথচ সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স শাখায় এ ব্যাপারে কোনো তথ্যই নেই।

ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে কারখানাটি পরিচালনা করা হলেও করপোরেশনটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন। সাইনবোর্ডে কারখানাটির নাম লেখা রয়েছে- ‘বিটেক্স জার্সি পয়েণ্ট’। এর নিচে লেখা রয়েছে কোয়ালিটি সাবলিমেশন গার্মেণ্টস। নগরীতে অননুমোদিতভাবে গার্মেণ্ট কারখানা পরিচালনা করা হচ্ছে এমন খবর পান সাংবাদিকেরা। পরে শালবাগান পাওয়ার হাউজ সংলগ্ন এলাকায় বিটেক্স জার্সি পয়েণ্ট নামের ওই কারখানায় সরেজমিনে পরিদর্শনে যান বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকের একদল সাংবাদিক।

সেখানে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কারখানাটির মালিকানায় রয়েছেন দুইজন। তারা হলেন- নোমান ও সুমন। এই দুইজনের মধ্যে মালিক নোমান অননুমোদিতভাবে এই কারখানা পরিচালনার কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি দাবি করেন কারখানাটি বর্তমানে কিছুটা লোকসানে রয়েছে। সেখানে কর্মরত রয়েছেন ১৫ জন শ্রমিক। জানা গেছে, বর্তমানে কারখানাটি থেকে জার্সি (কিড), ট্রাউজার, হাফপ্যাণ্ট, ট্রাক স্যুট, টি-শার্ট, পলো-শার্ট, জ্যাকেট (আপার) ও থ্রি কোয়াটারসহ যে কোনো খেলাধুলার পোশাক বিভিন্ন কাস্টমাইজ ডিজাইনে ডিজিটাল প্রিণ্ট ও তৈরি করা হয়। বিষয়টি উল্লেখ করে কারখানাটির ভবনের সাথে লাগোয়া সাইন বোর্ডে পরিষ্কারভাবে লেখাও রয়েছে।

এটিকে গার্মেন্টস কারখানা হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। এসব গার্মেণ্ট সামগ্রী উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাপড় ও অন্যান্য সামগ্রী রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে কিনে আনা হয়। এরপর রাজশাহীর এই কারখানায় জার্সি (কিড), ট্রাউজার, হাফপ্যাণ্ট, ট্রাক স্যুট, টি-শার্ট, পলো-শার্ট, জ্যাকেট (আপার) ও থ্রি কোয়াটারসহ যে কোনো খেলাধুলার পোশাক বিভিন্ন কাস্টমাইজ ডিজাইনে ডিজিটাল প্রিণ্ট ও তৈরি করা হয়। পরে উৎপাদিত গার্মেণ্ট পণ্যগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে অর্ডার অনুযায়ী (চাহিদা মোতাবেক) সরবরাহ করা হয়। কারখানাটির একটি সূত্র দাবি করেছে, প্রতি মাসে গড়ে অন্তত ২০-২৫ লাখ টাকার এসব গার্মেণ্ট সামগ্রী উৎপাদন ও বাজারজাত করা হয়। ট্রেড লাইসেন্স না করে এবং সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে গত তিন বছর ধরে এই ব্যবসা পরিচালানা করে যাচ্ছে বিটেক্স জার্সি পয়েণ্ট নামের এই কারখানাটি।

অথচ এ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা উদাসীন। কারখানাটির বিষয়ে জানতে সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স শাখায় যোগাযোগ করা হয়। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিটেক্স জার্সি পয়েণ্ট’ নামে কারখানাটির ট্রেড লাইসেন্স আছে কিনা তা জানা নেই। অবশ্য কিছুক্ষণ পরে কারখানাটির মালিক নোমানের সাথে মোবাইলে কথা বলেন করপোরেশনের ওই দায়িত্বশীল। এরপর তিনি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন কারখানাটির ট্রেড লাইসেন্স নেই।

আর সিটি করপোরেশনের ট্যাক্সেশন কর্মকর্তা (লাইসেন্স) সারোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। পরে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এ ব্যাপারে জানতে রাজশাহীতে থাকা কর অফিসের সংশ্লিষ্ট শাখায় যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু সেখান থেকেও ‘বিটেক্স জার্সি পয়েণ্ট’ বা এই অননুমোদিত কারখানাটির দুই মালিকের কারো বিষয়েই কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছে।

এদিকে ট্রেড লাইসেন্স না নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে আইনে উল্লেখ রয়েছে। স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯ এর ৯২ ধারায় বলা হয়েছে- পঞ্চম তফসিল অনযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি অপরাধ করে থাকে তবে তাকে সাজা পেতে হবে; পঞ্চম তফসিলে ট্রেড লাইসেন্স না নেওয়া ও কর ফাঁকি দেওয়াকে অপরাধ হিসেবে চিহিৃত করা হয়েছে। তাই ট্রেড লাইসেন্স না করা, রিনিউ না করা ও কর ফাঁকি দেওয়া আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।

স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯ এর ধারা ৯৩ অনুযায়ী- কোনো ব্যক্তি ট্রেড লাইন্স না নিয়ে/রিনিউ না করে ব্যবসা পরিচালনা করলে তাকে প্রথমবার/প্রথমদিনের জন্য পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারে এবং পরবর্তী প্রতিবার/প্রতিদিনের জন্য পাঁচশ’ টাকা করে জরিমানা করতে পারে। আর জরিমানা প্রদান না করলে তার নামে মামলাও হতে পারে। আবার কেউ যদি ট্রেড লাইসেন্স না করে ব্যবসা পরিচালনা করে বা ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেয় সেটা প্রতারণার শামিল হবে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা এবং অন্য দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলাও হতে পারে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *