রাজশাহী বিমানবন্দর: তল্লাশি শুধু একবার, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

Spread the love
Print Friendly, PDF & Email
image_pdfimage_print

হালিম কাজী রাজশাহী বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান

যাত্রীর চাপ বেড়েছে। কিন্তু ডিপার্চার ও প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ ছোট। এ কারণে অন্যান্য উন্নয়নকাজের সঙ্গে রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম বিমানবন্দরের ডিপার্চার ও প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজও শুরু করেছে। কিন্তু সেই কাজ আর শেষ হচ্ছে না। লাউঞ্জের অনেক কিছুই পড়ে আছে এলোমেলোভাবে। এই অবস্থায় যাত্রীদের একবার তল্লাশি করেই উড়োজাহাজে উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, ডলার-সংকটে বিদেশ থেকে নানা সরঞ্জাম আমদানিতে সমস্যা হয়েছিল। দেখা দিয়েছিল ডিজাইন-সংক্রান্ত জটিলতাও। তাই কাজে ধীরগতি ছিল। তবে অনেক জিনিসপত্রই চলে এসেছে। এখন আবার পুরোদমে কাজ শুরু হবে।

রাজশাহীর নওহাটায় ১৬২ একর জমির ওপর ১৯৮৪ সালে শাহ মখদুম বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। যাত্রীসংকটের কারণে ২০০৭ সালের ২০ জানুয়ারি এই বিমানবন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে ২০১৫ সালে আবার রাজশাহী-ঢাকা রুটে ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়। এখন দেশের তিনটি বিমান পরিবহন সংস্থা এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে রাজশাহী-ঢাকা ও ঢাকা-রাজশাহী রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। প্রতিটি বিমান সংস্থা দিনে দুটি করে সপ্তাহে ৪২টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

বিমানবন্দরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিপার্চার ও প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জের পরিধি বড় করার কাজ করছে ঢাকার ইপিক বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জের কাজ অর্ধেক শেষ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। তাই গত নভেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার সকালে বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে এখন শুধু প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ চালু রয়েছে। এর উত্তর পাশে ডিপার্চার লাউঞ্জে চলছে উন্নয়নকাজ। যাত্রীরা প্রধান ফটক দিয়ে প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জে প্রবেশ করছেন। সেখানে সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তাকর্মীরা তল্লাশি করছেন। স্ক্যানারে ব্যাগও স্ক্যান করা হচ্ছে। এরপর একটি ইলেকট্রিক ডোর পেরিয়ে যাত্রীরা বোর্ডিং পাস নিয়ে প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জে অপেক্ষা করেন। পরে এখান থেকেই তাঁরা সরাসরি উড়োজাহাজে গিয়ে ওঠেন। ডিপার্চার লাউঞ্জে কোনো তল্লাশি করা হচ্ছে না।

বিমানবন্দরের এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, সব বিমানবন্দরেই যাত্রীদের তল্লাশির পর প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জে ঢোকানো হয়। এখান থেকে তাঁরা বোর্ডিং পাস নেন। এরপর ডিপার্চার লাউঞ্জে তাঁদের আবার তল্লাশি করা হয়। সেখান থেকে তাঁরা উড়োজাহাজে গিয়ে ওঠেন। রাজশাহী বিমানবন্দরেও আগে এই ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু ডিপার্চার লাউঞ্জের কাজ শুরুর পর সেখানে তল্লাশি বন্ধ হয়ে যায়। এখন এই বিমানবন্দরে যাত্রীদের শুধু একবার তল্লাশি করা হচ্ছে। যাত্রীরা প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জে প্রবেশের পর কখনো কখনো তাঁরা আবার বের হন। কিন্তু তখন অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের আর তল্লাশি করা হয় না।

রাজশাহীর এই বিমানবন্দর দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আকবর হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রায় দুই বছর আগে যাত্রীদের ডিপার্চার লাউঞ্জ হয়ে উড়োজাহাজে উঠতে হতো। লাউঞ্জ সম্প্রসারণের কাজ শুরু হলে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। এখন যাত্রীদের বাস টার্মিনালের মতো ছোট প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জেই বসতে হয়। দুই বছর ধরে ডিপার্চার লাউঞ্জের ফাইনাল চেকিংও হয় না। এতে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে।’

এ ব্যাপারে বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তা ইনচার্জ কোনো কথা বলতে চাননি। যোগাযোগ করা হলে ডিপার্চার লাউঞ্জের কাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা সিভিল এভিয়েশনের উপসহকারী প্রকৌশলী শাহ সুলতান সবুজ বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কথা বলতে পারবেন না তিনি।

বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক দিলারা পারভীন বলেন, ‘এখন একবার চেকিং হলেও ভালোভাবেই চেক করা হয়। তল্লাশির বাইরে কোনো যাত্রী উড়োজাহাজে উঠতে পারেন না।’ তিনিও এর বেশি কথা বলতে চাননি। উন্নয়নকাজ-সম্পর্কিত কোনো তথ্য দিতেও অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইপিক বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী সোহানুর রহমান বলেন, কাজ শুরুর পর বিভিন্ন জিনিসপত্র বিদেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে জটিলতার মুখে পড়তে হয়। ডিজাইন নিয়েও জটিলতা দেখা দিয়েছিল। তাই এ পর্যন্ত ডিপার্চার লাউঞ্জের সম্প্রসারণের কাজই শেষ করা যায়নি। ডিপার্চার লাউঞ্জের কাজ শেষ হলে এটি চালু করা হবে। তখন প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জের সম্প্রসারণের কাজ শুরু করা হবে। একসঙ্গে ডিপার্চার ও প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ বন্ধ রেখে কাজ করা সম্ভব না। তিনি বলেন, ‘বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চলে এসেছে। ডিজাইন জটিলতাও কেটেছে। আশা করছি, এখন দ্রুত কাজ এগিয়ে যাবে। তবে দুটি লাউঞ্জের পুরো কাজ কবে শেষ হবে, তা আমি এখনই বলতে পারছি না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *