বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন আরেকটি বছর। পহেলা বৈশাখ আজ, স্বাগত জানিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার মোঃআরিফুজ্জামান সোহেল

Uncategorized
Spread the love
Print Friendly, PDF & Email
image_pdfimage_print

জন্মভূমি নিউজ ডেস্ক

বাঙালির হৃদয়ে প্রকৃতি এক অদৃশ্য সুরে বাঁধা। ষড়ঋতুর লীলাভূমিতে ঝড়-বৃষ্টির দামামা বাজিয়ে, ধুলোবালির মেঘ উড়িয়ে, বজ্রের গর্জনে কাঁপিয়ে বৈশাখ এসেছে এক নবজাগরণের প্রতীক হয়ে। বৈশাখের প্রতীক কৃষ্ণচূড়ার ডালেও লেগেছে আগুন, যেন বলছে-এসেছে উৎসব, এসেছে রঙ, এসেছে বৈশাখ।

বৈশাখে কেবল প্রকৃতিই নয়, জেগে ওঠে বাঙালির হৃদয়। বাঙালির জীবনচক্রে প্রকৃতির মেজাজি সন্তান বৈশাখ যেন অনিবার্য। তাইতো এবারের পহেলা বৈশাখও এসেছে ভিন্ন রূপে। এ বৈশাখ শুধু ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে নতুন বছর শুরু করার নয়, এ একটি নতুন সময়ের সূচনা। স্বৈরশাসকের পতনের পর তারই ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে নতুন বছরে বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখছে একটি আলোকিত ভবিষ্যতের।

পহেলা বৈশাখে কেমন পোশাক পরবেন

অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিজয়ের আবহেই এসেছে এবারের পহেলা বৈশাখ। চারদিকে উৎসবের রঙ, মুখে মুখে শুভেচ্ছা, কিন্তু এর মাঝে রয়েছে এক আশার বার্তা। সে বার্তা বদলে যাওয়ার, নতুন দেশ গড়ে তোলার।

আজ দেশের সব মানুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে উদ্‌যাপন করবে বাংলা নতুন বছর ১৪৩২। পুরোনো সব ব্যর্থতা ভুলে গিয়ে, নতুন আশায় ও সবার মঙ্গল কামনায় জমে উঠবে নববর্ষের উৎসব। নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে চারদিকে ধ্বনিত হবে- ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো…

‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩২’ জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে দেশব্যাপী নেয়া হয়েছে ব্যাপক কর্মসূচি। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। বর্ষবরণে ‘নববর্ষের ঐক্যতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ‘বর্ষবরণ আনন্দ আনন্দ শোভাযাত্রা’ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।

সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ছায়ানট’ পহেলা বৈশাখের ভোর থেকেই রমনা বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু করেছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে চীনা দূতাবাসের কারিগরি সহায়তায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে। আর সন্ধ্যা ৭টা থেকে অনুষ্ঠিত হবে ড্রোন শো।

এছাড়া বিভিন্ন সংগঠন ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থা দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান, কনসার্ট ও বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে।

এক সময় নববর্ষ পালিত হতো আর্তব উৎসব বা ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে। তখন এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কৃষির; কারণ কৃষিকাজ ছিল ঋতুনির্ভর। পরে কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য মুঘল সম্রাট আকবরের সময়ে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন এ বাংলা সাল।

অতীতে বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। এটি পুরোপুরিই একটি অর্থনৈতিক ব্যাপার। গ্রামে-গঞ্জে-নগরে ব্যবসায়ীরা নববর্ষের প্রারম্ভে তাদের পুরোনো হিসাবনিকাশ সম্পন্ন করে হিসাবের নতুন খাতা খুলতেন। এ উপলক্ষে তারা নতুন-পুরাতন খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ করতেন এবং নতুনভাবে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগসূত্র স্থাপন করতেন। চিরাচরিত এ অনুষ্ঠানটি পালিত হয় আজও।

আরও পড়ুন: পহেলা বৈশাখে রাজধানীর যেসব জায়গায় ঘুরবেন

মূলত ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলা বর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।

পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। এ সময় ঢাকায় নাগরিক পর্যায়ে ছায়ানটের উদ্যোগে সীমিত আকারে শুরু হয় বর্ষবরণ।

আমাদের মহান স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে এ উৎসব নাগরিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে। কালক্রমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এখন শুধু আনন্দ-উল্লাসের উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারক-বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *