নিজস্ব সংবাদদাতা
রাজশাহীর পবা উপজেলায় দুটি হিমাগারে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে ২৬শ’ বস্তা আলু জব্দ করেছেন। পরে সেগুলো নির্ধারিত দামে খোলা বাজারে বিক্রি করেছে পবা উপজেলা প্রশাসন। তবে এ সময় মজুদদাররা এসে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে সেনাবাহিনী ও অতিরিক্ত পুলিশ ও গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় কয়েকজনকে প্রাথমিকভাবে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, আলুর বাজারে কয়েক দফা মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে চলমান অস্থিরতা ঠেকাতে সম্প্রতি পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। মজুদ করা আলু ৩০ নভেম্বরের পর হিমাগারে রাখা যাবে না- এমন আদেশও দিয়েছে সরকার। কিন্তু পবার কয়েকটি হিমাগারে নির্ধারিত সময়ের পরও বিপুল পরিমাণ আলু মজুদ করে রেখেছিল।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানান, সরকার পাইকারী বাজারের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরেও হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ীরা একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে আলু মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজারে বেশি দামে আলু বিক্রি করছে। এ ব্যাপারে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার হিমাগর খালি করার নির্দেশ দেন। এরপরেও কয়েকটি হিমাগর আলু মজুত রেখেছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন অভিযান চালানো হচ্ছে।
গত রোবার সন্ধ্যায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহিদ হাসান পবা উপজেলার নওহাটা পৌর এলাকার আলাইবিদিরপুর এলাকার আমান কোল্ড স্টোরেজে অভিযান চালিয়ে প্রতিটি ৬০ কোজির ৩০৬ বস্তা আলু খোলা বাজারে ৩৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি দেন। এই টাকা আলুর মালিককে দেওয়া হয়। এরপর তারা একই এলাকার রহমান ব্রাদার্স কোল্ড স্টোরেজ প্রা. লি.- এ অভিযান চালান। তখন হিমাগারের কর্মকর্তারা পালিয়ে যান। ওই সময় ম্যাজিস্ট্রেট ঘোষণা দিয়ে আসেন যে বিজয় দিবসের পরের দিন অর্থাৎ ১৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ফের অভিযান চালানো হবে।
পরের দিন সোমবার ওই হিমাগারে দেখা যায়, আলু বের করে বিক্রি করা হচ্ছে। শ্রমিকেরা রীতিমতো আলু বাছাইয়ের কাজ করছেন। আগের দিন মুঠোফোনে হিমাগারের ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন বলেছিলেন, তাদের হিমাগারে প্রায় ১ হাজার ৬০০ বস্তা আলু রয়েছে। এই আলু কৃষকের। তারা বিক্রি না করলে হিমাগার কর্তৃপক্ষের কিছু করার নেই। অভিযানের সময় পালানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সন্ধ্যার পরে সাধারণত তারা চলে যান। দুইজন কর্মচারী ছিলেন। তাদের আটক করে নিয়ে গিয়ে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সঙ্গলবার দুপুরে অভিযানে গিয়ে দেখা যায়, ওই হিমাগারে বিক্রির পরেও ২ হাজার ২০০ বস্তা আলু মজুত রয়েছে। অভিযান চলাকালে সেখানকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহরাব হোসেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এসময় তিনি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আরেকটি চেম্বার অভিযান চালিয়ে আরও ১০০ বস্তা আলুর মজুত পান। সব মিলিয়ে তাদের হিমাগার থেকে ২ হাজার ৩০০ বস্তা আলু জব্দ করা হয়।
খবর পেয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে আলুর ক্রেতারা এসে আলু কেনার জন্য ভিড় করতে থাকেন। এ সময় জেলার মোহনপুর উপজেলার নন্দনহাটি এলাকার রাশেদুল হক নামের একজন ব্যবসায়ী এসে বাধা দেন। পরে তাকেও পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার এই হিমাগারে ১২ হাজার বস্তা আলু ছিল। সর্বশেষ ১ হাজার ৫০০ বস্তা অবশিষ্ট ছিল। এগুলো তার ৩৪ টাকা কেজি দরে কেনা ছিল। ৪৫ টাকা কেজিতে খরচ পড়েছে। তিনি ৪৮ টাকা থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করছিলেন। তারা তো ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরেই বিক্রি করবেন। তার চেয়ে জনগণকে এই ন্যায্য দামে দিলে তিনি খুশি হতেন।
তিনি বলেন, এর আগে তারা আলুতে লোকসান খেয়ে জমি বিক্রি করে হিমাগারের ভাড়া শোধ করেছেন। তখন তো কেউ দেখেনি।’
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন,‘ আগামীবারও তাই হবে। আমি ৩০০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। এখনই কোনো হিমাগারে বুকিং নিচ্ছে না। এই আলু কোথায় রাখব। ফেলে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পবার ইউএনও মো. সোহরাব হোসেন বলেন, তাদের দায়িত্ব হিমাগারের মজুত খালি করে দেওয়া। কিন্তু তারা যাদের কাছে আলু বিক্রি করেছেন। তাদের ফোন নম্বর রেখে দিয়েছেন। এই আলু যারা কিনেছেন পবা উপজেলার আওতাধীন এলাকায় ভোক্তাদের কাছে খুচরা বাজারে যেন প্রতি কেজি ৪৫ টাকা দরে বা ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করা হয় সে বিষয়টা মনিটর করা হবে। সেখানে তাদের তদারকি করবেন।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত তাদের দায়িত্ব না। তারপরেও তারা আলুর বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাধ্যানুযায়ী কাজ করবেন। ইতোমধ্যে দুটি হিমাগারে যে অভিযান করেছেন। অন্য হিমাগারগুলো মজুত খালি করে ফেলবে। তিনি মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আরেকটি হিমাগারে যাচ্ছিলেন। শুধু রাজশাহী জেলাতেই ৪৩টি হিমাগার আছে। এতে সংরক্ষণ বা মজুত করা যায় প্রায় ৮৫ লাখ বস্তা আলু। প্রতিবস্তায় আলু থাকে ৬০ থেকে ৬৫ কেজি। এখনও কিছু হিমাগারে আলু মজুত করে রাখা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব হিমাগার পরিদর্শনের কথা বলছে প্রশাসন। এই আলু খুচরা বাজারে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। মঙ্গলবার রাজশাহীর শহরের বাজারগুলো থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোথাও এই আলু ৭০ টাকা কেজির কমে বিক্রি হচ্ছে না। নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি।