রাজনীতিতে সাংবাদিকদের নিরপেক্ষ থাকা অপরিহার্য

দেশের খবর
Spread the love
Print Friendly, PDF & Email
image_pdfimage_print

নিজস্ব প্রতিবেদক
আধুনিক সমাজে গণমাধ্যমের গুরুত্ব অপরিশীম।যে কারনে সাংবাদিকদের পেশাদারি মান নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন।নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা,একজন সাংবাদিকের ইমানি দায়ীত্ব।বর্তমানে সময় এসেছে সাংবাদিকতার দিক পরিবর্তনের।তার মধ্যে অন্যতম হলো রাজনৈতিক মুক্ত সাংবাদিক সমাজ গড়া তোলা।বিগত সময়ে প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলনে সাংবাদিক সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।দেশের ক্লান্তিলগ্নে সাংবাদিকরা সব সময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।কিন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ উঠেছে।সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও শেষে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ঘিরে সহিংসতায় ১ হাজার ৪২৩ জন নিহত হয়েছেন এবং ৩০ হাজার আহত হয়েছে।এ ক্ষেত্রে অনেক সাংবাদিক নিহত ও আহত হয়েছেন।তবুও সাংবাদিকদের দোষ যেন কোন ক্রমেই কমছে না।তার মুলে গোটা কয়েক রাজনৈতিক সাংবাদিকের কারনে চরম বিতর্কের মধ্যে পড়েছে গোটা সাংবাদিক সমাজ।ব্যক্তিগত বিদ্বেষ বা রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি-যে কারণেই হোক না কেন সাংবাদিকতায় রাজনীতি মানে চরম ক্ষতিকর। এ ধরনের পরিস্থীতি আমরা কীভাবে ঠেকাব? এখনো চলমান রয়েছে সেই রাজনৈতিক সাংবাদিকতা।সাংবাদিকতায় তিন দশক পার করে এসে এখন আমাকে বলতে হচ্ছে, রাজনীতি থেকে সাংবাদিকতা পৃথকীকরণ প্রয়োজন।কথাটা শুনতে হয়তো কিছুতা সাংবাদিকদের জন্য বেমানান।অনেক আবার বলবে আমি সাংবাদিকদের বিরোধীতা করছি।আসলে তাই না আমি মুল সাংবাদিকতার কিছু সমস্য তুলে ধরছি। সংবাদমাধ্যমের কাজ বিশ্লেষণাত্মক,যুক্তিশীল,অন্তর্ভুক্তিমূলক সহনশীল সমাজ গড়ে তুলতে সহায়তা করা।কিন্তু বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ক্ষমতাবানেরা যে ফাঁদ পেতেছেন, সাংবাদিকেরা তাতে ধরা দিচ্ছেন।বর্তমানে সাংবাদিকদের ভিতরে কোন না কোন রাজনৈতিক দলের মানষিকাতা বিরাজ করায় সততার সাথে সাংবাদিকতা করার জন্য বিরাট এক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।কারণ একজন সাংবাদিক স্থানীয় ভাবে রাজনীতিমুক্ত না থাকলে সংবাদ সংগ্রহ ও সংবাদ পরিবেশনে নানান সমস্যা থেকে যায়।যাঁরা সাংবাদিকতাকে নিরপেক্ষ বা বস্তুনিষ্ঠ পেশা হিসেবে নিজেদের মনোনিবেশ করতে চাই তাদের উচিত রাজনীতি পরিহার করে শুধু সাংবাদিকতাকে বেছে নেওয়া।আমি মনে করি একজন রাজনৈতিকবীদের চেয়ে সাংবাদিকদের ক্ষমতা একে বারে কম নয়।সাংবাদিকরাই নির্ভীক, সৎ এবং সত্যনিষ্ঠ থাকলে হয়তো এটা সম্ভাব।আমরা জানি সমাজ প্রতিটি গাঁটে গাঁটে দুর্নীতি, স্বজনতোষণ, কর্মহীনতা, হিংস্র দারিদ্র্যতা এবং দলীয়করন ব্যবস্থা যেন নাজেহাল পরিস্থীতি তৈরী করেছে। অত্যন্ত রূঢ় বাস্তবতা এটাই, যেটা গত ১৭ বছর ধরে জাতি মুখবুজে সকল অপরাধ নির্যাতন সহ্য করতে বাধ্য হয়েছে। হয়তো অনেকে জীবন-জীবিকার তাগিদে সাংবাদিকেরা স্বধর্মচ্যুত,ক্ষমতার সঙ্গে সখ্যপ্রিয়তা গড়ে তুলতে তৎপর হয়ে উঠছেন। বিগত সকরকারের সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ক্ষমতার পারস্পরিক স্বার্থের সম্পর্ক আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।অনেক সাংবাদিক হয়েও নিজেদের রাজনৈতিক নেতা হিসাবে সুবিধা আদায় করেছে।গড়েছে অঢেল সম্পাদ এবং গোটা সাংবাদিক সমাজকে পদদলিত করেছে। ক্ষমতাপ্রীতি সাংবাদিকতায় একটি রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাংবাদিকেরা যদি ‘প্রয়োজনে যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত’ থাকেন অথবা ‘গৃহীত পদক্ষেপের প্রতি পূর্ণ সমর্থন’ দেন, তবে ক্ষমতা ও সাংবাদিকতার মধ্যে বিভেদ রেখা টানা কঠিন হয়ে যায়।সাংবাদিকতা হলো নির্মোহ বিশ্লেষণ, বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ উপস্থাপনা।তাকে এ ভাবে নষ্ট হতে দেওয়া ঠিক হবে না।এটা জাতির জন্য অত্যন্ত হুমকী স্বরুপ। আপনারা অবশ্যই দেখেছেন দেশের অনেক নাম করা রাজনৈতিক সাংবাদিকরা শেখ হাসিনা পালানোর সাথে সাথে তারাও পালিয়েছে।অনেকে হত্যা মামলার আসামী হয়েছে এবং অনেকে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছে। আজ সাংবাদিকরা পালিয়ে যাচ্ছে,হত্যা মামলার আসামী হচ্ছেন।এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী কিছু দালাল সাংবাদিক।তারা নিজেরাও মরেছে এবং গোটা সাংবাদিক সমাজ কে বিপদে ফেলেছে। কথায় কথায় আজ সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। মিথ্যা মামলা হচ্ছে কিন্ত কোনো প্রতিকার করার উপায় নেই।বর্তমান সরকার হয়তো সাংবাদিকদের বিষয় ভাবছেন।তথ্য উপদেষ্ঠা বলেছেন একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করবেন। সংবাদমাধ্যমের কাজ বিশ্লেষণাত্মক, যুক্তিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক সহনশীল সমাজ গড়ে তুলতে সহায়তা করা।কিন্ত এমটি হলো কেন এই প্রশ্নের জবাব দেবে কে? আমরা জানি গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন তথ্যসমৃদ্ধ জনসমাজ।একটি বিশ্লেষণাত্মক সমাজ গড়া না গেলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে কোথা থেকে? ক্ষমতা ও শাসন চোখে চোখে রাখা সাংবাদিকতার প্রধান কাজ। কারণ, ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের ব্যবহার ও অপব্যবহার এক জনস্বার্থমূলক বিষয়।কিন্ত বিগত ১৭ বছর ধরে কিছু সাংবাদিকরা সাংবাদিকতা কে রাজনৈতিক হিসাবে ব্যবহার করে আজা গোটা সাংবাদিক সমাজকে একটি কঠিন মূহর্তে দাঁড় করিয়েছে।অনেকের কাছে সাংবাদিকতা এখন একটি উপলক্ষমাত্র।বিত্তবৈভব, ক্ষমতা অবস্থান ধরে রাখার বিশেষ কৌশল মাত্র।সাংবাদিকেরা ক্ষমতার কেন্দ্রে গিয়ে কী করেন, মানুষ তা দেখছে। বাংলাদেশের সাংবাদিকতা এক প্রশ্নহীন সময় পার করছে বিগত সরকারের সময়ে। ক্ষমতার সঙ্গে সখ্যপ্রিয়তার কারণে সাংবাদিকতার মান নিয়ে এখন প্রশ্ন আসছে।সাংবাদিকতার ধারণা যথেষ্ট পোক্ত না হলে ক্ষমতার তাপ সাংবাদিকদের নির্বিষ করবেই। ইতিমধ্যে অনেকে নির্বিষ হয়ে পড়ছেন।গত ১৭ বছর ধরে সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষমতার ক্ষুধা লক্ষনীয় তা আগে কখনো দেখা যায়নি।কিন্ত আমি মনে করি সাংবাদিকেরা যত ক্ষমতার কাছাকাছি যাচ্ছেন,তত চোরাবালিতে ঢুকে পড়ছেন, পথ হারাচ্ছেন বা অনেকে হারিয়েছেন। তখন রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম চলেছে দলীয় করন,শাসকগোষ্ঠী খুব দক্ষতার সঙ্গে এক অনুগত বেসরকারি সংবাদমাধ্যম খাত গড়ে তুলেছে।যে কারনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বা ছাত্র জনতা রাগে ক্ষোভে অনেক মিডিয়া অফিস ভাংচুর অগ্নিসংযোগ করেছে। অবশ্যই এটা ঠিক নয়। এখনো অনেকে ভয়ে আতঙ্কে সাংবাদিকতা করতে পারছেন না। সাংবাদিকতার নীতি ও মান ধরে রাখাই আজ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি রাষ্ট্র, যেখানে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আজও বিকশিত হয়নি, ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির চর্চা সীমিত, এখনো সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত।হয়তো সময় এসেছে সাংবাদিকতার এসব জঞ্জল পরিবর্তেনের। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা কারও দয়ার ওপর নির্ভর করে না। সাংবাদিকতা মানুষকেন্দ্রিক একটি পেশা। যত দিন মানুষ আছে, তত দিন এ পেশার অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।সাংবাদিকতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব হলো পেশাটি পরিচ্ছন্ন রাখা, পরিশীলিত রাখা। স্বকীয় ধারায় এগিয়ে নেওয়া।ক্ষমতাকাঠামোর সঙ্গে লেজুড়বৃত্তি বন্ধ করা। রাজনীতি থেকেও সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমকে পৃথকীকরণ একান্ত প্রয়োজন।সাংবাদিকদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন এবং শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ ৬০ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে।কোনো বিচার নেই।শুধু তাই নয়, সরকার গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরতে একের পর এক কালাকানুন তৈরি করছে। বিগত ১৭ বছর ধরে দেশে গণতন্ত্র নেই, মানুষের ভোটাধিকার নেই। মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নেই।ন্যায়বিচার নেই। ভাতের ব্যবস্থা নেই।বস্ত্র,বাসস্থানের ব্যবস্থা নেই। শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। তাও মুখ বুজে সাংবাদিকরা সহ্য করতে বাধ্য হয়েছে।ক্ষমতাশালীদের অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করার জেরে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর অব্যাহত হামলা-মামলা-নির্যাতন ও হত্যা স্বাভাবিকতায় পরিণত হয়েছে এমন রিপোর্ট বার বার মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে তবুও কোন লাভ হয়নি।যখন কোন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানের বা কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়, তখন সেই সংবাদকর্মীর সুরক্ষার জন্য যাওয়ার আর কোন জায়গা থাকে না।ফলে আমি মনে করি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রয়োজন।এক্ষেত্রে অবশ্যই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন এটা সকল সাংবাদিকদের দাবী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *