বগুড়ায় গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ১৮জন সাংবাদিক

দেশের খবর
Spread the love
Print Friendly, PDF & Email
image_pdfimage_print

জন্মভূমি নিউজ ডেস্ক:
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর হত্যাসহ নানা ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় এখন পর্যন্ত বগুড়ার ১৮ জন সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলার জ্যেষ্ঠ চারজন সাংবাদিককে হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। অন্যদের জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর-নাশকতা ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায়ে গ্রেপ্তার ও হয়রানি এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ওই ১৮ সাংবাদিক।

এতে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন হুমকির মুখে পড়েছে এবং পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। এমতাবস্থায় ভুক্তভোগীরা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

জানা যায়, বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শহরের ঝাউতলা এলাকা থেকে সদর থানায় হামলা ও লুটপাটের সময় পুলিশের গুলিতে দুজন নিহত হন। এ ঘটনায় পৃথক হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ৪ জন সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে।

তারা হলেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহ-সভাপতি, ও দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার মাহমুদুল আলম নয়ন, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য ও বাসসের জেলা প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা এএইচএম আখতারুজ্জামান, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান সাংবাদিক হাসিবুর রহমান বিলু এবং বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি জেএম রউফ। অন্যদিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরডটকমের বগুড়ার স্টাফ রিপোর্টার জিয়া শাহীনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

জেলার এই পাঁচ সাংবাদিক ছাড়াও উপজেলা পর্যায়ের আরো ১৩ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে শিবগঞ্জে ৪ জন, সারিয়াকান্দিতে ১ জন, নন্দীগ্রামে ১ জন, সোনাতলায় ৩ জন, আদমদীতে ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

উপজেলা পর্যায়ে মামলার আসামিরা হলেন, দৈনিক কালের কণ্ঠের নন্দীগ্রাম প্রতিনিধি ফিরোজ কামাল ফারুক, দৈনিক কালবেলার সারিয়াকান্দি প্রতিনিধি মনজু মিয়া, যায়যায়দিনের শিবগঞ্জ প্রতিনিধি সোহেল আক্তার মিঠু, ভোরের দর্পণের মোকামতলা প্রতিনিধি আপেল মাহমুদ, দৈনিক উত্তরের দর্পণের মোকামতলা প্রতিনিধি আবু জাফর ইকবাল, দৈনিক জয়যুগান্তরের মোকামতলা প্রতিনিধি হাসান আলী।

এছাড়া দৈনিক ইত্তেফাকের আদমদীঘি প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন, প্রতিদিনের বাংলাদেশের আদমদীঘি প্রতিনিধি জি, আর এম শাহজান, দৈনিক চাঁদনী বাজারের আদমদীঘি প্রতিনিধি মিহির কুমার সরকার, দৈনিক চাঁদনী বাজারের সান্তাহার প্রতিনিধি মতিউর রহমান সাগর, দৈনিক ভোরের দর্পণ ও মুক্তসকাল পত্রিকার সোনাতলা প্রতিনিধি নিপুন আনোয়ার কাজল, দৈনিক প্রভাতের আলোর সোনাতলা প্রতিনিধি মাহমুদুর রশিদ সোহেল এবং দৈনিক ভোরের খবরের সোনাতলা প্রতিনিধি মোস্তাফিজার রহমান পিন্টুকে আসামি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বগুড়া শহরের ঝাউতলা এলাকা থেকে সদর থানায় হামলা করা হয়। থানা ভাঙচুরের পর আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য মালামাল লুট এবং আগুন দেওয়া হয়। এ সময় গুলিতে বগুড়া শহরের দক্ষিণ বৃন্দাবনপাড়ার বাসিন্দা দর্জি শ্রমিক শিমুল সরদার নিহত হন। এ ঘটনায় গত ২৭ আগস্ট রাতে নিহতের স্ত্রী শিমু বেগম বাদি হয়ে থানায় মামলা করেন।

মামলার এজহারে উল্লেখ করেন, বগুড়া শহরের ঝাউতলা এলাকায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে এবং সাবেক এমপি মজিবর রহমান মজনু ও রাগেবুল আহসান রিপুসহ ৪ জনের নেতৃত্বে অন্য আসামিরা পিস্তল, কাটারাইফেল, আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ‘ছাত্র-জনতার’ মিছিলে হামলা চালান। তিন সাংবাদিকসহ এজাহারভুক্ত ৩৩ জন ককটেল ও পেট্রলবোমা নিয়ে হামলা করেন। এ সময় অন্য আসামিদের গুলিতে শিমুল সরদার নিহত হন। পরে ময়নাতদন্ত ছাড়াই শিমুল সরদারের লাশ দাফন করা হয়েছে।’

এ মামলায় তিন সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন, হাসিবুর রহমান বিলু, মাহমুদুল আলম নয়ন এবং জেএম রউফ।

একই দিন ওই স্থানে রিপন ফকির নামে অপরজন গুলিতে নিহত হন। নিহতের স্ত্রী মাবিয়া বেগম গত ১৭ সেপ্টেম্বর সদর থানায় শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, ওবায়দুল কাদের ও বাসসের বগুড়া জেলা প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা এএইচএম আখতারুজ্জামানসহ ১০৪ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৪০৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

সদর থানার সদ্য বিদায়ী ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ জানান, দুটি মামলায় ৪ জন সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে পেশাদার ৪ সাংবাদিককে হত্যা মামলায় আসামি করা এবং একজনের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দেওয়ায় বগুড়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।

বগুড়ার নবাগত পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা জানান, মামলাগুলো তদন্ত করে আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে নিরপরাধ কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সে ব্যাপারে নজর রাখা হয়েছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *