নাটোরে সোনালী আঁশের সুদিন ফিরছে

Spread the love
Print Friendly, PDF & Email
image_pdfimage_print

জেলায় সোনালী আঁশের দিন ফিরে আসতে শুরু করেছে। বিগত সময়ে পাটের উচ্চ মূল্যের কারণে কৃষকরা পাট চাষে ক্রমশ: আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
নাটোরে বেড়েছে পাটের আবাদি জমি এবং উৎপাদনের পরিমাণ। জমিতে সবুজে ভরপুর পাট রাজ্যে চলছে পাট কাটা। অন্যদিকে জলাশয় ও এর পাড় সংলগ্ন স্থানগুলোতে পাট গাছ ভেজানো, পাটের আঁশ ছড়ানো, পাট শুকানো, পাটকাঠি সংগ্রহ- সব কর্মযজ্ঞই চলছে যুগপৎ ভাবে। সবুজ পাট গাছের রূপান্তর ঘটছে সাদা পাট আর পাটকাঠিতে। রূপালী রৌদ্রকে মেঘে ঢেকে দিয়ে প্রকৃতিতে নামছে শ্রাবণ ধারা। প্রকৃতির সাথে সহাবস্থান করে গ্রামীণ জনপদে কৃষকরা কর্মে মুখরিত হয়েছেন পাট রাজ্যে। নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় ২৮ হাজার ৬৪২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এরমধ্যে সর্বাধিক পাট আবাদ হয়েছে বড়াইগ্রাম উপজেলায়-নয় হাজার ৬৬২ হেক্টর, লালপুরে ছয় হাজার ৮৬৫ হেক্টর, গুরুদাসপুরে চার হাজার ৫০ হেক্টর, নাটোর সদর উপজেলায় দুই হাজার ৫০ হেক্টর, বাগাতিপাড়ায় দুই হাজার ৮১৫ হেক্টর, নলডাঙ্গায় এক হাজার ৬৫০ হেক্টর এবং সিংড়ায় এক হাজার ৫৫০ হেক্টর। বিগত এক দশক আগে জেলায় পাটের আবাদি জমি ছিল চলতি বছরের প্রায় অর্ধেক। পাটের আবাদী জমি বিগত সময়ে ক্রমশ বেড়েছে। চলতি বছরে বিঘা প্রতি উৎপাদন নয় মণ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে আবাদি জমির পাশাপাশি হেক্টর প্রতি পাটের গড় উৎপাদনও বেড়েছে।

সিংড়া উপজেলার লাড়–য়া গ্রামের কয়েক কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশে এবং সংলগ্ন বিল ও ডোবাতে শতাধিক নারী-পুরুষ পাট পঁচানো ও আঁশ ছড়ানোর কাজে নিয়োজিত হয়েছেন। এ কাজে মহিলাদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মত। তারা মূলতঃ পানিতে না নেমেই পঁচানো পাট পাড়ে তুলে এনে আঁশ ছড়াচ্ছেন। আঁশ ছড়ানো কাজে নিয়োজিত জমেলা খাতুন জানান, এ কাজে পুরুষের মজুরি বেশি। তাদের ৩৫০ টাকা আর আমাদের ২০০ টাকা।

কুলসুম বিবি বলেন, আমি পাট কাঠি নেওয়ার শর্তে আঁশ ছড়ানোর কাজ করছি। রাস্তার দু’ধারে বাঁশের আড় টানিয়ে, কালভার্টের রেলিং কিংবা গৃহস্থ্য বাড়ির চারপাশ-সর্বত্রই চলছে পাট শুকানোর কাজ। এসব এলাকা জুড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে পাটকাঠির বোঝা সমৃদ্ধির জানান দিচ্ছে। লাড়–য়া এলাকার কৃষক আনছার আলী বরাবরের মত এবারো তার তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। লাড়–য়া বিলে পাট ছড়ানো শ্রমিকদের কাজ তদারককারী আনছার আলী বলেন, খরা কাটিয়ে গত সপ্তাহে বেশ বৃষ্টি হয়েছে। এ শ্রাবনের বৃষ্টিতে পাট পঁচানোর সুবিধা হয়েছে। আশা করি বিঘা প্রতি দশ মণ করে ফলন পাবো।

নাটোর সদর উপজেলার রাজাপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ বদিউজ্জামান বলেন, এবার এলাকায় আশানুরূপ পাট চাষ হয়েছে। গড় উৎপাদন বিঘা প্রতি নয় মণ। এ ব্লকের জাঠিয়ান এলাকার কৃষক শামসুল আলম এবার সাত বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। তিনি জানান, পাট কাটা শুরু হয়েছে। আশাকরি বিঘায় অন্তত নয় মণ পাট পাওয়া যাবে।
সিংড়া উপজেলার বড়শাঁঐল গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, জমিতে গম বা ডাল উঠে যাওয়ার পর আমন মৌসুমের আগে পাট চাষ করা হলে জমি অনাবাদি থাকে না। চৈত্র মাসের মধ্যে পাট বীজ বোনা হলে আগাম পাট কেটে খুব সহজেই আমন মৌসুম ধরা যায়। নাটোরের আদর্শ কৃষক হাসান আলী বলেন, বিগত কয়েক বছরে কৃষকদের মাঝে পাট চাষে বেশ ভাল আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বাজারের সম্প্রসারণ ঘটছে। এর ফলে দরও ভাল পাওয়া যাচ্ছে।

নাটোরের প্রসিদ্ধ পাটের হাট গুরুদাসপুরের নাজিরপুর, নাটোর সদরের তেবাড়িয়া এবং সিংড়ার হাতিয়ান্দহ হাট ঘুরে দেখা যায়, আগাম ওঠা পাট হাটে কেনাবেচা শুরু হয়েছে। হাতিয়ান্দহ হাটে পাট বিক্রি করতে আসা বাছেদ আলী বলেন, হাটে দুই হাজার টাকা মণ দরে জমির পাট বিক্রি করলাম। দীর্ঘদিন ধরে পাটের ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলাম মেম্বর জানান, আশাকরি পাটের দর ব্যবসায়ী ও কৃষক-উভয়ের জন্যই ভাল হবে। বর্তমানে পাটের দর আড়াই হাজার টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত।
নাটোর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার নীলিমা জাহান জানান, বর্তমানে পাটের গড় উৎপাদন বিঘা প্রতি নয় মণ। তবে খরা কাটিয়ে বৃষ্টি হওয়াতে গড় উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ নাটোর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ বাসস’কে বলেন, গত সপ্তাহের বৃষ্টি পাট জাগ দেওয়ার জন্যে সহায়ক হয়েছে। পরিবেশ বান্ধব বলেই পাটের বহুমুখী ব্যবহার হচ্ছে। এর ফলে দেশে ও বিদেশে পাটের চাহিদা বাড়ছে। বাড়তি মূল্য পাওয়ার কারণে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন, পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি জ্ঞানে কৃষকদের এগিয়ে নিতে কৃষি বিভাগ সবসময় কৃষকদের পাশে থাকছে।(বাসস) 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *