রাজশাহীর হুন্ডি মুকুলের সৌদিতে দুটি আবাসিক হোটেল

রাজশাহী
Spread the love
Print Friendly, PDF & Email
image_pdfimage_print

নিজস্ব প্রতিবেদক
আবারও আত্মগোপনে রয়েছেন এক সময়ের মুদি দোকানদার রাজশাহীর মখলেছুর রহমান মুকুল ওরফে হুন্ডি মুকুল। গত ৫ আগস্ট থেকেই আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশাপাশি তিনিও পলাতক রয়েছেন। তবে তার কয়েক শ কোটি টাকার সম্পদ পড়ে আছে রাজশাহীতে। হুন্ডি ব্যবসার মাধ্যমে মুকুল এখন অন্তত হাজার কোটি টাকার মালিক। তিনি চড়েন দেড় কোটি টাকা দামের কালো রঙ্গের একটি পাজেরো গাড়ীতে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই মুকুলের রাজশাহী এবং ঢাকায় অন্তত ৪টি বাড়ি রয়েছে। এছাড়াও নগরীল কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় শত কোটি টাকা মূল্যে সাত তলা আবাসিক ভবন রয়েছে। রয়েছে দুটি দামি গাড়ি এবং অন্তত ৪০ বিঘা জমি। এর মধ্যে রাজশাহী শহরেই রয়েছে তার অন্তত ২০ বিঘা জমি। যার আনুমানিক মূল্য অনন্তত ২০০ কোটি টাকা। এছাড়াও রাজশাহী সিটি বাইপাশ গরুর হাটেও রয়েছে মুকুলের বড় অংকের শেয়ার। এই হাটটি নিয়ন্ত্রন করতেন আরেক হুন্ডি ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান কালু। এই কালুও পলাতক রয়েছেন গত ৫ আগস্টের পর থেকে। তাাঁর নামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে মামলাও রয়েছে একটি। একসময়ে মুকুলের অন্যতম সহযোগী ছিলেন কালু।

শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরে সৌদি আরবেও রয়েছে হুন্ডি মুকুলের হোটেল ব্যবসা। হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করে সেখানে দুটি আবাসিক হোটেল কিনেছেন মুকুল। দুটির একটি হলো মদিনায় আরেকটি মক্কাতে। হুন্ডি ব্যবসায়ী মুকুলকে নিয়ে এর আগেও একাধিক অনুসন্ধানী খবর প্রকাশ হয়েছিল। ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট ওই খবর প্রকাশের পর বেশকিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। তবে মাস তিনেক পরে আবারও এলাকায় ফিরে আসেন তিনি। এর পর তাঁর টাকাগুলো হালাল করতে তিনি ঠিকাদারী ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনে সঙ্গে হাত মিলিয়ে মুকুল রাজশাহী সিটি করপোরেশনেরই অন্তত ৪০০ কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেন গত তিন বছরে। এর মধ্যে প্রায় একশ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহীর বন্ধগেট-সিটি বাইপাশ রোডের কাজও বাগিয়ে নেন তিনি।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, মাস চারেক আগে হুন্ডি ব্যবসায়ী মুকুল রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের তৎকালীন এমপি আসাদুজ্জামান আসাদকে একটি পাজেরো গাড়ি কিনে দিয়েছিলেন। কথিত রয়েছে, পবা এলাকার একটি বালুঘাট কম মূল্যে পাইয়ে দেওয়ার জন্য ওই গাড়ীটি উপহার দিয়েছিলেন এমপি আসাদকে। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের সঙ্গেও ছিল মুকুলের সখ্যতা। ডাবলুর হাত ধরেই মুকুল মুলত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে মুকুল গোলাম সারোয়ার নামের এক ব্যবসায়ীর ১০ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ পুলিশ হেডকোয়াটর্সের স্পেশাল ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট শাখা রাজশাহী অঞ্চলজুড়ে গড়ে ওঠা হুন্ডি ও মাদক চোরাকারবারিদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। ওই তালিকায় থাকা চোরাকারবারি ও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রাজশাহীর মখরেছুর রহমান মুকুল। তার সঙ্গে ভারতের অন্যতম চোরাকারবারি এনামুলের ব্যবসায়ীক পার্টনার ছিলেন মুকুল। এনামুলেরই অন্তত ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন মুকুল। অথচ তিনি একসময় ছিলেন মুদি ব্যবসায়ী। নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় ছিল তার মুদির দোকান। ভারতীয় সীমান্ত এলাকা রাজশাহী শহরের এই কাশিয়াডাঙ্গা দিয়ে এক সময় বিপুল চোরাচালান হত। মুদি ব্যবসার আড়ালে একসময় সেই চোরাচালানের সঙ্গে এবং পরবর্তিতে হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন মুকুল। পরবর্তিতে গরু চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে মুকুলের পরিচয় ঘটে ভারতীয় চোরাকারবারি এনামুল হকের সঙ্গে।

ভরত সরকার একসময় নগদ টাকা ধর-পাকড় শুরু করলে এনামুল অন্তত এক হাজার রুপি পাঠিয়েছিলেন রাজশাহীর মুকুলের কাছে। পরবর্তিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে কিছু টাকা এনামুলকে ফেরত দেন আর আর অন্তত ৫০০ কোটি রুপি আত্মসাত করেন মুকুল। সেই থেকে মুকুল অন্তত হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যান। তার চলাচলেও আসেও রাজকীয় ভাব। পালানো আগে দেড় কোটি টাকা মূল্যের গাড়ী ব্যবহার করতেন এই মুকুল।

সূত্র মতে, ২০১৮ সালে করা দেশের হুন্ডি ব্যবসায়ীদের তালিকায় দ্বিতীয় নামটি ছিলো রাজশাহীর মখলেছুর রহমান মুকুলের। আমদানি-রপ্তানির নামের মুন এন্টার প্রাইজ নামে এই মুকুলও বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন ভারতসহ বিভিন্ন দেশে।

নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা আনিসুজ্জামান বলেন, ‘মুকলের তো তেমন কিচুই ছিল না। এখন সেই লোক কিবাবে শত শত কোটি টাকার মালিক হলো বুলতে পারব না। শুনেছি হুন্ডির মাধ্যমে সে এতো টাকার মালিক হওয়্যাছে। তাই এলাকার মানুষ ওকে হুন্ডি মুকুল নামেই চিনে বেশি।’

আরেক বাসিন্দা দেলহাস হোসেন বলেন, ‘একজন মানুষের কি এমন আয় যে কয়েক বছরের মধ্যে কোটি টাকা দামের গাড়িতে ঘুরে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি করে মার্কেট করে কিভাবে? এই মুকুল মাঝে মধ্যেই পালিয়ে থাকে। আবার এলাকায় এসে বিরদর্পে ঘুরে বেড়ায়। প্রশাসন এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। শুনেঠিছ সবাইকে ম্যানেজ করে চলে।’
তবে এসব বিষয়ে যোগাযোগের জন্য চেষ্টা করা হলেও মুকুলকে পাওয়া যায়নি। তার ফোনও বন্ধ রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *