সিগারেটের দাম বাড়ানোর আহ্বান জানালেন বিশিষ্টজনরা

জন্মভূমি নিউজ ডেস্ক:
আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সব স্তরের সিগারেটের দাম উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়িয়ে সেই বর্ধিত মূল্যের ওপর যথাযথ করারোপের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন ১৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক। এ বিষয়ে তারা অর্থ উপদেষ্টার কাছে লিখিত অনুরোধ জানিয়েছেন।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয়’র সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আতিউর রহমানের সই করা চিঠি মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বরারব পাঠানো জানানো হয়েছে।

লিখিত অনুরোধ জানানো বিশিষ্ট নাগরিকরা হলেন- টেকসই অর্থনৈতিক কৌশল পুনঃনির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রধান ড. কে এ এস মুরশিদ, সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান, ইউসিএসআই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. এ কে এনামুল হক, আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন, সমাজবিজ্ঞানী ড. মাহবুবা নাসরীন, বিআিইডিএসর গবেষণা পরিচালক ড. এস এম জুলফিকার আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. তৈয়েবুর রহমান, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ, বিআইজিডির ভিজিটিং ফেলো খন্দকার সাখাওয়াত আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগি অধ্যাপক ড. নাজমুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের সহযোগি অধ্যাপক ড. সুজানা করিম, বিএসএমএমইউর সহযোগি অধ্যাপক ডা. খালেকুজ্জামান, বাপার যুগ্ম সম্পাদক মো. আমিনুর রসুল, এএলআডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ন্যাশনাল চর অ্যালায়েন্সের সদস্য সচিব জাহিদ রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক নাজনীন সুলতানা।

চিঠিতে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান ফর দি প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অফ এনসিডিএস’ অনুসারে ২০১০ থেকে ২০২৫ সময়কালে বাংলাদেশে ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী নাগরিকদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৩০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, যা অর্জনে বাংলাদেশ বহুলাংশে পিছিয়ে রয়েছে (২০১০ সালে তামাক ব্যবহারের হার ছিলো ৪৩.৩ শতাংশ, যা বর্তমানে ৩৫.৩ শতাংশ)।

বিপুল সংখ্যক নাগরিক তামাক ব্যবহার করায় এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে যে স্বাস্থ্যগত ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তা অপরিমেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, প্রতিবছর তামাকজনিত কারণে অকালে মৃত্যুবরণ করছেন ১ লাখ ৬১ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক। এছাড়াও তামাক চাষ ও তামাক পণ্য উৎপাদনের কারণে দেশের কৃষি জমি ও পরিবেশেরও অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।

সিগারেট ব্যবহার কমিয়ে আনতে সাম্প্রতিক অর্থবছরগুলোতে বিভিন্ন স্তরের সিগারেটের দাম অল্প অল্প করে বাড়ানো হলেও তা সিগারেট ব্যবহার কমানোর জন্য যথেষ্ট নয়। যেমন: ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ সময়কালে চলতি মূল্যে মাথাপিছু আয় ৫৫ শতাংশ এবং ভোক্তা মূল্যসূচকের মান ৩২ শতাংশ বাড়লেও এসময়ে সিগারেটের দাম বেড়েছে মাত্র ৬ থেকে ২২ শতাংশ।

চিঠিতে আরও বলা হয়, মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় সিগারেটের দামবৃদ্ধি কম হওয়ায়, সিগারেটের প্রকৃত মূল্যবৃদ্ধি ঋণাত্মক। অর্থাৎ প্রকৃত অর্থে সিগারেটের দাম বাড়েনি, বরং কমেছে। শুধু তাই নয়, এ সময়ে সিগারেটে কার্যকরভাবে করারোপ না করায় প্রতি বছর গড়ে ৬,৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার।

এই প্রেক্ষাপটে প্রধানত জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সব স্তরের সিগারেটের দাম উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়ানো এবং ওই বর্ধিত দামের ওপর যথাযথ করারোপ করা দরকার বলে মনে করেন বিশিষ্ট নাগরিকরা।




শুল্ক মওকুফের পরও বেড়েই চলেছে মোটা চালের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
শুল্ক মওকুফের পরও বাজারে বেড়েই চলেছে মোটা চালের দাম। সম্প্রতি নিম্ন আয়ের মানুষের ভরসা মোটা ও মাঝারি ধরনের চালের দাম বেড়েছে। অথচ দেশে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ মোটা ও মাঝারি চাল কেনে। আগে দেশীয় উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে কিংবা আমদানি হলে চালের দাম কমতো। কিন্তু এখন মৌসুম বা আমদানি কোনোটির প্রভাবেই চালের দামে তেমন তারতম্য হচ্ছে না। সম্প্রতি ভারত রফতানি শর্ত ও শুল্ক তুলে নেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ দুই দফায় চাল আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে। এখন ব্যবসায়ীদের চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশের স্থলে মাত্র ২ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের পরও পাইকারি বাজারে পণ্যটির দামে কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি, বরং কয়েক দিনের ব্যবধানে মোটা ও মাঝারি চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) বেড়েছে ৫০-৬০ টাকা। বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) তথ্যমতে গত পাঁচ বছরে দেশে মোটা চালের দাম ৫৬ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ২০২০ সালের মার্চে মোটা চালের গড় দাম ছিল ৩১ টাকা ৪৬ পয়সা। ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯ টাকা ১১ পয়সায়। সাম্প্রতিক আমদানি ঘোষণার পরও দেশের প্রধান পাইকারি বাজারে মোটা চালের দাম বেড়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যানুযায়ী ২০২১ সালের নভেম্বরে দেশে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৪৪-৪৫ টাকায়। এ বছর একই চাল বিক্রি হয়েছে ৫২-৫৫ টাকায়। ঢাকার বাইরে প্রান্তিক অঞ্চলগুলোয় পরিবহন খরচ ও মজুদপ্রবণতার কারণে এ দাম আরো বেশি। সূত্র জানায়, পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি স্বর্ণা সেদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮৫০ টাকায়, আর ভালো মানের স্বর্ণা সেদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৩০০ টাকায়, গুটি স্বর্ণা ২ হাজার ৬০০ ও মোটা সেদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। তবে চিকন জাতের পারি সেদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকায়, মিনিকেট আতপ ৩ হাজার ২০০, মিনিকেট সেদ্ধ ২ হাজার ৯০০, কাটারি সেদ্ধ ৩ হাজার ১০০ থেকে ৪ হাজার ও কাটারি আতপ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৩০০ থেকে ৪ হাজার টাকায়। সূত্র আরো জানায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ৯৫৭ টন চাল আমদানি হয়েছে। সম্প্রতি চাল আমদানিতে শুল্ক কমানোর ফলে আমদানি আরো বাড়তে পারে। পাশাপাশি চলতি মৌসুমে ৪ কোটি ৩৪ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। তবে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ বিলম্বিত বৃষ্টিপাতের কারণে এবার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয় রয়েছে। কিন্তু দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে খাদ্যশস্য হিসেবে চালের চাহিদা বেড়েছে। তবে মধ্য ও উচ্চবিত্তদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং একাধিক বিকল্পের কারণে চিকন চালের বাজারে তেমন অস্থিরতা নেই। মোটা চালের চাহিদা বেশি থাকায় সরবরাহ চেইনে একটু ঘাটতি দেখা দিলেই দাম বাড়তে থাকে। এ প্রসঙ্গে চাক্তাই পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম জানান, দেশে খাদ্যশস্যের চাহিদা বাড়লেও সে অনুপাতে উৎপাদন বাড়ছে না। বিশ্ববাজারেও কয়েক বছর ধরে চালের দাম বেড়েছে। দেশে ডলারের উচ্চমূল্য, উৎস রফতানিকারক দেশগুলোয় ন্যূনতম রফতানি মূল্য ও শুল্কারোপ, আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক ইত্যাদি কারণেই চালের এ মূল্যবৃদ্ধি।




রোজাকে কেন্দ্র করে দ্রব্যমূল্য সহনশীল রাখার চেষ্টা চলছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

জন্মভূমি নিউজ ডেস্ক:
সিয়াম সাধনার মাস রমজানকে কেন্দ্র করে দ্রব্যমূল্য ‘সহনশীল’ রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি সামনে রমজানকে কেন্দ্র করে বাজারকে যতটুকু সম্ভব সহনশীল করতে; চাহিদা এবং জোগানের বিষয়কে যেন একটা সমানুপাতিক হারে রাখতে পারি।’

শনিবার (২৩ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে ডিআরইউর প্রয়াত সদস্যদের সন্তানদের মধ্যে বৃত্তির চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা জানান।

উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশে বিগত ১৫ বছরে একটি ক্রিমিনালাইজেশন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।

রাষ্ট্রের মধ্যে, আমাদের সমাজ অসম্ভবভাবে বিভক্ত ছিল। ভীতসন্ত্রস্ত ছিল প্রত্যেক সেক্টরের লোকজন।’

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি সামনে রমজানকে কেন্দ্র করে বাজারকে যতটুকু সম্ভব সহনশীল করতে; চাহিদা এবং জোগানের বিষয়কে যেন একটা সমানুপাতিক হারে রাখতে পারি।’ এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করেন উপদেষ্টা।

দেশে চিনি, তেল ও পেঁয়াজের দাম কমেছে মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের সকলের সহযোগিতায় চিনির দাম, পেঁয়াজের দাম ও তেলের দাম কিছুটা কমে এসেছে ইতোমধ্যে।’

ডিআরইউ সভাপতি শুকুর আলী শুভর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন, এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচালক ও রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটি চেয়ারম্যান এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. রবিউল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক মহি উদ্দিন।

পরে ডিআরইউর প্রয়াত সদস্যদের সন্তানদের হাতে শিক্ষাবৃত্তির চেক তুলে দেন উপদেষ্টা।




ভারত থেকে এলো ২ লাখ ৩১ হাজার ডিম

জন্মভূমি নিউজ ডেস্ক :
ভারত থেকে আমদানি করা ডিমের ১৩ শতাংশ শুল্কায়নের আরও একটি চালান এলো বেনাপোল বন্দরে। এখন থেকে ২৫ শতাংশের পরিবর্তে ১৩ শতাংশে শুল্কায়ন হবে; যা আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই শুল্ক সুবিধা পাবেন আমদানিকারকরা।

মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৪০ পিস ডিমের এ চালান আসে।

প্রতি পিস ডিম আগে ১ টাকা ৯৬ পয়সা শুল্কায়ন করা হতো। শুল্ক কমানোয় এখন থেকে প্রতি পিস ডিমে মাত্র ৭৫ পয়সা শুল্ককর পরিশোধ করতে হবে। এতে আমদানি করা নতুন চালানের ডিম বাজারে ৯ টাকার মধ্যে বিক্রি করার কথা।

কাস্টমস হাউস সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৫ চালানে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১১ লাখ ৫৯ হাজার ২০০ পিস ডিম আমদানি হয়েছে। এর আগে গত বছরের ৫ নভেম্বরে আমদানিকারক ঢাকার রামপুরার বিডিএস করপোরেশন ৬১ হাজার ৯৫০ পিস ডিম আমদানি করে। পরে আমদানিকারক হাইড্রোল্যান্ড সল্যুশন প্রতিষ্ঠান এসব ডিম আমদানি করেছে। এর বাইরে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সরকারের পক্ষ থেকে আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও এসব প্রতিষ্ঠান এখনও ডিম আমদানি করেনি।

বেনাপোল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক কাজী রতন জানান, কম শুল্কে গত ২১ অক্টোবর ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৪০ পিস ডিম খালাস দেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার রাতে ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৪০ পিস খালাস দেওয়া হচ্ছে। আমদানিকারকের ডিমের চালান খালাসে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে




ব্যাংকিং-জ্বালানি খাত সংস্কারে আর্থিক সহায়তা দেবে বিশ্ব ব্যাংক ও আইএফসি

জন্মভূমি নিউজ ডেস্ক:
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশের আর্থিক খাত সংস্কারে শর্ত সাপেক্ষে সব ধরনের সহায়তা দেবে বিশ্ব ব্যাংক ও ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্স করপোরেশন (আইএফসি)। রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে দুই সংস্থার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি এ কথা বলেন।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকিং খাত, রাজস্ব কাঠামো, ভ্যাট এবং জ্বালানি খাতের সংস্কারে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেবে বিশ্ব ব্যাংক ও আইএফসি। এ অর্থ পাওয়া গেলে ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সংস্কারে ব্যয় হবে। তবে কি পরিমাণ অর্থ সহায়তা দেবে তা এখনও নির্ধারণ হয়নি। এছাড়া কিভাবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় তারা সহায়তা করবে আগামীতে নির্ধারণ করা হবে।

এর আগে গত সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় সাইডলাইন বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বিশ্বব্যাংক সাড়ে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন।




বাংলাদেশের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে স্বর্ণের দাম কমানো সম্ভব?

জন্মভূমি নিউজ ডেস্ক :
বাংলাদেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ী দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে গত মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জুয়েলার্স এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মি. আগরওয়ালার বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছে সিআইডি।

এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে স্বর্ণ ও হীরা আমদানির নামে বিদেশে অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে সিআইডি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বর্ণের বাজারে তথাকথিত ‘সিন্ডিকেট’ ভেঙে দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব কি না, সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলাদেশে বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানি হয় না। ফলে এই খাতে ‘সিন্ডিকেট’র দ্বারা স্বর্ণের মূল্য নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ পুরনো। চোরাচালানের মাধ্যমে যে সব স্বর্ণ আসে, সেগুলো দেশের বাজারে বিক্রি হয় বলে ব্যবসায়ীরাও স্বীকার করেন। ফলে চোরাচালান-কেন্দ্রিক এই খাত নজরদারির বাইরে থাকার সুযোগ নিচ্ছেন তারা।

দাম নির্ধারণের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছেমতো তা নির্ধারণেরও সুযোগ পাচ্ছেন। কারণ সরকার স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করে না, করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন (বাজুস)। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, বাংলাদেশে স্বর্ণ আমদানির নীতিমালা ত্রুটিপূর্ণ। ফলে স্বর্ণ আমদানি হয় না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই খাতে জবাবদিহিতা ও নজরদারি নেই। ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে বিপুল পরিমাণ কর। আর মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক বাজার বা প্রতিবেশী দেশের বাজারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে কি না, তাও দেখা হয় না। ফলে যেভাবে উচ্চহারে দাম নির্ধারণ করা হয় সেটা কতখানি যৌক্তিক, তা নিয়ে প্রশ্ন সব সময়ই ছিল বলে জানান তারা।

তাই পুরো বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা, সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অংশগ্রহণ জরুরি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
এ ছাড়া চোরাচালান ছাড়া বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানি কীভাবে করা যাবে, সে বিষয়গুলো আরো সহজীকরণ করারও আহ্বান জানান তারা।

কেন স্বর্ণ আমদানি হয় না?

সরকার ২০১৮ সালে স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা প্রণয়ন করে। পরে ২০২১ সালে তা সংশোধন করা হয়। স্বর্ণের বাজার ও জুয়েলারি ব্যবসায় স্বচ্ছতা আনতে ওই বছরই একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে স্বর্ণ আমদানির লাইসেন্স দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। শুরুর দিকে পাঁচ-ছয়টি প্রতিষ্ঠান কিছু স্বর্ণ আমদানি করলেও, পরে তা মুখ থুবড়ে পড়ে।

ব্যবসায়ীরা নিজেরাও স্বীকার করছেন, বাংলাদেশে বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানি হয় না। কিন্তু কেন হয় না, এ প্রশ্নে ব্যবসায়ীরা দুষছেন সাবেক সরকারের স্বর্ণ আমদানির নীতিমালাকে।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশনের দাম নির্ধারণ কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আগের সরকারের গোল্ড ইমপোর্টের ক্যাটাগরিটা বেশ ত্রুটিযুক্ত ছিল। আমরা অনেক আবেদন করেছি যে, গোল্ডের ইমপোর্টের যে বিষয়টা লাইসেন্স দিলেন। কিন্তু গোল্ড আমদানি করার কোনো সুযোগ নাই!’

‘কারণ ওখানে ট্যাক্স ক্যাটাগরি যেটা ইমপোজ করা আছে অলমোস্ট ১৮ থেকে ১৯ পারসেন্ট সব কিছু মিলিয়ে। অন দ্য আদার হ্যান্ড এটা ‘হ্যাসেলফুল’ (ঝামেলায় পরিপূর্ণ) ছিল’, বলেন মি. রহমান। এ ছাড়া স্বর্ণ আমদানির পুরো প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হওয়ায় এবং নানা জটিলতায় সেটা আর সামনে এগোতে পারেনি বলে উল্লেখ করেন মি. রহমান।

তিনি জানান, ‘গোল্ড ইমপোর্টের জন্য পারমিশন থেকে শুরু করে অলমোস্ট ফিনিশ করা পর্যন্ত ২৪ থেকে ২৫ দিন পার হয়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কিছু লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। পাঁচ-ছয়জন ইমপোর্টার ইমপোর্ট করেছিল। কিন্তু তারা আর সামনে এগোতে পারেনি এসব বাধাগুলোর কারণে!’

‘শিথিল’ ব্যাগেজ রুলস

ব্যবসায়ীদের দাবি সরকার একদিকে আমদানি নীতিমালা করে স্বর্ণ আমদানি করতে বলে, অথচ ব্যাগেজ রুলসে দেওয়া হয়েছে শিথিলতা। ব্যাগেজ রুলসে এক ভরি স্বর্ণ শুধুমাত্র চার হাজার টাকায় দেশে আনার সুযোগ রয়েছে।

মি. রহমান বলেন, ‘এটা টোটালি কন্ট্রাডিকটরি (স্ববিরোধিতায় ভরা)। ইমপোর্টকে যদি এনকারেজ করতে চান আবার ব্যাগেজ রুলসের আওতায় সুযোগ করে দেন, তাহলে তো ইমপোর্ট হবে না।’

‘এই জটিলতাগুলো নিয়ে আমরা চেয়ারম্যান সায়েম সোবহান আনভীরসহ অনেকবার চেষ্টা করেছি তিন বছর থেকে। কিন্তু তখন এনবিআরের যারা কর্ণধার ছিলেন তারা আমাদের কথায় কান দেননি।’

বিএফআইইউ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এই খাতে আমদানি-রফতানির সুযোগ হলে ২২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হবে। যাতে ১০ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট আহরণ হবে দেশের।
এই প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে মি. রহমান দাবি করেন এই সেক্টরকে ‘এগুতে দেওয়া হয়নি’ এবং এই খাত ‘সরকারের সহযোগিতা পায়নি’।

স্বর্ণের দাম সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি?

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজধানীর তাঁতীবাজারে বুলিয়ান (পোদ্দার) মার্কেট স্বর্ণের যে দাম নির্ধারণ করে সেটা অনুসরণ করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করে। বুলিয়ান মার্কেট হলো যেসব ব্যবসায়ীরা স্বর্ণের ব্যবসা করেন তাদের মার্কেট। বাংলায় একেই পোদ্দার বলা হয়।

যারা স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত তাদের সিন্ডিকেট রয়েছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। বাজুস দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘অসহায়’ বলে দাবি তাদের। কারণ সরকার ডলারের রেট দেয়। কিন্তু স্বর্ণের রেট নির্ধারণ করে না।

মি. রহমান বলেন, ‘সরকার গোল্ড আনেও না, গোল্ড সাপ্লাইও দেয় না। বাজুস দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধতা ধরে রাখার জন্য স্বর্ণের রেট দেয়।’

‘রেট কীভাবে দেয় বাজুস? যেমন ধরুন তাঁতীবাজারের বুলিয়ান মার্কেট। আমরা কিন্তু বুলিয়ান মার্কেটের রেটকে ফলো করি। বুলিয়ান মার্কেট সলিড গোল্ড নিয়ে ডিল করে’, জানান তিনি।

বুলিয়ান মার্কেটে স্বর্ণ কোথা থেকে আনা হয়, এমন প্রশ্নে মি. রহমানের দাবি, ‘সেটা আসলে আমাদের ধারণা নেই। ইট ইজ টোটালি বেইজড অন স্মাগলিং। যেটা আমরা জানি। এদেশের প্রশাসনও জানে।’

এদের একটা সিন্ডিকেট আছে দাবি করে মি. রহমান জানান, দুবাই থেকে ব্যাগেজ রুলসে যেসব স্বর্ণ আসে বা মানুষজন যে স্বর্ণ আনে অথবা ইনফরমাল ওয়েতে যে স্বর্ণ আসে তারা সে সব স্বর্ণের উচ্চ মূল্য মুনাফা নির্ধারণ করে স্বর্ণের রেটকে নিয়ন্ত্রণ করে।

‘যেহেতু বহির্বিশ্ব থেকে দেশে স্বর্ণ আমদানি হয় না, তারা ১০-১২ হাজার টাকা রেট বাড়িয়ে একটা রেট নির্ধারণ করে রাখে। ওইটা ফলো করতে বাজুস বাধ্য’, বলেন মি. রহমান।

বুলিয়ান মার্কেটের সিন্ডিকেট বেশ শক্তিশালী বলে দাবি করেন তিনি। মূলত ওই মার্কেটের রেট অনুসরণ করেই বাজুস দাম নির্ধারণ করে থাকে বলে জানান এই ব্যবসায়ী।

ফলে তাঁতীবাজারের বুলিয়ান মার্কেট যে স্বর্ণের রেট নির্ধারণ করে, তার ভিত্তিতে শুধু দুই দশমিক আট শতাংশ মুনাফা যুক্ত করে দাম নির্ধারণ করা হয় বলে দাবি এই স্বর্ণ ব্যবসায়ীর।

বাংলাদেশে স্বর্ণের গহনা তৈরিতে ১২ শতাংশ ‘ওয়েস্টেজ’ (অপচয়) থাকে যা বাকি বিশ্বের তুলনায় অনেক বেশি। অন্য দেশে এই পরিমাণ ১ থেকে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। বাংলাদেশে সেটা অলংকার তৈরির চার্জ হিসেবে নেওয়া হয় বলে জানান মি. রহমান। এতেও দাম বৃদ্ধি পায়।

স্বর্ণের দাম বাড়তি হওয়ার কারণে বাংলাদেশ থেকে অনেক ক্রেতাই দুবাই, কাতার বা পার্শ্ববর্তী দেশের বাজারে চলে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের দাবি, দেশে এখন যে ধারায় স্বর্ণের ব্যবসা চলছে তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী চলছে না। তারা বলছেন, যারা স্মাগলিং করত তারা এই সিন্ডিকেটের অংশীদার। মূলত ২০০৯ সাল থেকে এ ধারা চলছে বলে দাবি তাদের।

ব্যবসায়ীরা এক্ষেত্রে সাবেক প্রেসিডেন্ট এনামুল হক খান দোলন এবং সাধারণ সম্পাদক দিলীপ আগরওয়ালের দিকেও ইঙ্গিত করছেন। সে সময় স্বর্ণের রেট উচ্চ মাত্রায় ছিল বলে দাবি তাদের।

এদিকে, মি. রহমানের দাবি ওই ধারা থেকে বের হতে তারা ইতিমধ্যেই পাঁচ শতাংশ স্বর্ণের রেট কমিয়েছেন। যদিও তার এই দাবির তেমন কোনো প্রভাব বাংলাদেশের স্বর্ণের বাজারে গত কয়েক মাসেও দেখা যায়নি।

মঙ্গলবার রাতেই সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একই সাথে তার বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালান, অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগের অনুসন্ধানও শুরু করেছে সিআইডি।

এই সিন্ডিকেটের বিপরীতে বাজুস অসহায় বলে দাবি ওই সংস্থার স্বর্ণের দাম নির্ধারণ কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের।

মি. রহমানের দাবি, আগের রেট হলে এখন স্বর্ণের দাম ভরিতে আরেও অন্তত ১০ হাজার টাকা বেড়ে যেতো। দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজার দর বাংলাদেশ জুয়েলারি এসোসিয়েশন বিবেচনায় নেয় না বলেও জানান তিনি।

‘আমাদের তো দেখার সুযোগ নাই। যদি গোল্ড ইমপোর্ট হতো বা রিফাইনারি থেকে বের হতো তাহলে নির্ধারণ করার সুযোগ ছিল। যেহেতু এটা নাই তাই ধারণা নাই’, বলেন মি. রহমান।

বাংলাদেশের ও ভারতের দামে পার্থক্য কত?

বাংলাদেশে বুধবার ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক লাখ ২৬ হাজার ৩২১ টাকা। একই দিনে প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতায় ২২ ক্যারেট এক ভরি স্বর্ণের দাম বাংলাদেশি টাকায় আসে এক লাখ দশ হাজার ৬৫৩ টাকা। অর্থাৎ একই দিনে দুই দেশের স্বর্ণের ভরিতে পার্থক্য ১৫ হাজার ৬৬৮ টাকা।

স্বর্ণ চোরাচালান রোধ কীভাবে সম্ভব?

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের চোরাচালানের মূল হোতাদের চিহ্নিত করে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। একই সাথে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে নীতিমালাকে আইনি কাঠামোতে আনতে হবে। এতে জড়িত শুধুমাত্র বাহকদের নয়, বরং মূল অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

এজন্য আইন প্রয়োগকারী প্রত্যেকটি সংস্থাকে সম্পৃক্ত করে সীমান্ত এলাকা, বিমানবন্দরগুলোতে নজরদারি বাড়ালে চোরাচালান রোধ করা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সমন্বিতভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। স্থায়ী একটা সমন্বয়ের সুযোগ সৃষ্টি করলে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হতে পারে।’

অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হয়-এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন ছাড়া চোরাচালান-কেন্দ্রিক এই খাতকে রক্ষা করা কঠিন বলেও মনে করেন মি. ইফতেখারুজ্জামান।

‘সব চেয়ে বড় কথা যারা চোরাচালানের সাথে জড়িত তাদের যদি দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়, একজন-দুজন নয় পুরো সিন্ডিকেটই যাদের কথা বলা হচ্ছে…আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি সঠিকভাবে ভূমিকা পালন করতে পারে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, অর্থাৎ অপরাধ করলে যে শাস্তি দিতে হয় সেটার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। তাহলেই চোরাচালান রোধ করা সম্ভব হবে’, বলেন তিনি।

চোরাচালান রোধ করতে বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানিকে উৎসাহ দিতেও সরকারকে আহ্বান জানান অর্থনীতিবিদরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপ-উপাচার্য সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘যদি দেখি বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানির জন্য সরকারকে নির্দিষ্ট মূল্য পরিশোধ করে আনা হয়, তাহলে সরকারকে এনকারেজ করতে হবে। অর্থাৎ বৈধ পথে আনার বিষয়কে এনকারেজ করার জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় সরকারের সেটা নেওয়া দরকার।’

‘এ জায়গাটাতে স্বচ্ছতা প্রায় নেই। তাই বৈধ পথে আনার ক্ষেত্রে আরেকটু ফ্লেক্সিবল টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন দেওয়া জরুরি’, বলছিলেন সায়মা হক বিদিশা।




আর কিছুদিন পর বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য শুরু

তিন দিন বন্ধ থাকার পর আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য আবার শুরু হয়েছে। যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি শুরু হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল সাড়ে আটটা থেকে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি শুরু হয়। দুপুর সোয়া দুইটা পর্যন্ত ১১৩ ট্রাক পণ্য রপ্তানি ও ১৫৩ ট্রাক পণ্য আমদানি হয়েছে। আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে স্পঞ্জ আয়রন, কর্ন ডিডিজিএস, কাপড়, ব্লিচিং পাউডার, কোয়ার্টাইজ পাউডার, অ্যালামসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য। এ ছাড়া রপ্তানি পণ্যের মধ্যে আছে তৈরি পোশাক, পাটের সুতা, কাঁচা পাট, খালি সিলিন্ডার, জুতা, আরেকা বাদাম ও ভ্রমণ সামগ্রীর লাগেজ।

বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, সরকারের পদত্যাগের পর থেকে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। এ কারণে গত সোমবার দুপুরের পর থেকে ভারতের পেট্রাপোল থেকে পণ্যবোঝাই কোনো ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি কিংবা কোনো ট্রাক ভারতে যায়নি। শ্রমিকেরা কাজ না করায় বন্দরে পণ্য খালাসও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বেনাপোল ও পেট্রাপোলে দেড় হাজারের বেশি পণ্যবোঝাই ট্রাকের জট বাঁধে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পেট্রাপোল পোর্ট ম্যানেজারসহ সেখানকার বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে বাংলাদেশে নিরাপত্তাঝুঁকি নেই বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। কোনো ক্ষয়ক্ষতি হবে না, এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর তাঁরা আমাদের ওপরে আস্থা রেখেছেন এবং আজ সকাল থেকে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য শুরু হয়েছে।’

বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৭২৪টি ভারতীয় ট্রাকের মধ্যে ১৮৫টি ট্রাক পণ্য খালাস করে ভারতে ফিরে গেছে। তবে দুই বন্দরে এক হাজারের বেশি ট্রাক পণ্য নিয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে। এর মধ্যে পেট্রাপোল বন্দরে ৭৫০টি ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ও বেনাপোল বন্দরে ৩০০টির মতো ট্রাক ভারতে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। আটকে থাকা পণ্যের মধ্যে বেশির ভাগ শিল্পের কাঁচামাল, রাসায়নিক, কাপড় ও যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ।

জানতে চাইলে বেনাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘গতকাল বুধবার পেট্রাপোলে এক হাজারের বেশি ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। এ ছাড়া পচনশীল পণ্যবোঝাই অনেক ট্রাক ভোমরা ও সোনামসজিদ বন্দরের দিকে গেছে। এ কারণে ওপারে ট্রাকের সংখ্যা কমে গেছে। এপারে ৩০০টির মতো ট্রাক রয়েছে, যার অর্ধেকের বেশি আজ ভারতে প্রবেশ করবে।

বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ ট্রাক পণ্য আমদানি ও ২০০ থেকে ২৫০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হয়। ফলে আজই ট্রাকজট অনেকটা কেটে যাবে বলে বন্দর–সংশ্লিষ্টরা জানান।

ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, ‘তিন দিন পর বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য শুরু হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে। এক সপ্তাহ ধরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলে দেশে কী প্রভাব পড়ে, তা আমরা কোভিড মহামারির সময় টের পেয়েছিলাম।’




বাংলাদেশের ঘটনা বিভিন্ন ভারতীয় কোম্পানির ওপর কী প্রভাব ফেলছে

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ভারতের ব্যবসা–বাণিজ্য কী ধরনের প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে, তা নিয়ে সে দেশে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ভারতের যেসব কোম্পনির বাংলাদেশে বড় ধরনের কার্যক্রম রয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেরই কপালে ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে। তবে বাংলাদেশের ঘটনাবলিতে ভারতের পোশাক খাতের সুবিধা হতে পারে বলেও মনে করছেন দেশটির বিশ্লেষকেরা।

ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, বাংলাদেশের অস্থিরতা ভারতীয় বেশ কিছু কোম্পানির ওপর যে প্রভাব ফেলেছে, তা বোঝা যাচ্ছে শেয়ারবাজারে তাদের শেয়ারের দামের দিকে তাকালে। বাংলাদেশের সঙ্গে যেসব কোম্পানির উল্লেখযোগ্য ব্যবসা রয়েছে অথবা বাংলাদেশের বাজারে যাদের উপস্থিতি রয়েছে, সেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে।

শেখ হাসিনা ভারতের একজন ঘনিষ্ঠ মিত্র এ কথা উল্লেখ করে ইন্ডিয়া টুডে বলছে, তাঁদের প্রস্থান এই অঞ্চলের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতি ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

মারিকো: সাফোলা ভোজ্যতেলের জন্য সুপরিচিত মারিকো। এ ছাড়া শ্যাম্পু, শিশু সুরক্ষাপণ্য ও স্কিন কেয়ার পণ্য বিক্রি করে এই কোম্পানি। মঙ্গলবার ইন্ডিয়া টুডে জানায়, এই কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে ৪ শতাংশ। কোম্পানিটি তার আয়ের ১১ থেকে ১২ শতাংশ পায় বাংলাদেশ থেকে। তবে মারিকোর আন্তর্জাতিক ব্যবসার ৪৪ শতাংশই বাংলাদেশে বলে জানায় টাইমস অব ইন্ডিয়া।

বাংলাদেশের গাজীপুর ও চট্টগ্রামে মারিকোর তিনটি কারখানা রয়েছে। বুধবারে স্টক এক্সচেঞ্জে দেওয়া এক প্রতিবেদনে মারিকো জানিয়েছে, বাংলাদেশের বাজারে তাদের কার্যক্রম পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে, তবে তারা চলমান ঘটনার দিকে নজর রাখছে। কোম্পানিটি আরও আশা করছে যে তাদের উৎপাদন কার্যক্রম দ্রুত শুরু হবে।

পার্ল গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিজ: এটি ভারতের একটি পোশাক তৈরির কোম্পানি। পার্ল গ্লোবাল তার আয়ের ২৫ শতাংশের মতো পায় বাংলাদেশ থেকে। কোম্পানিটি জানায়, তাদের শেয়ারের দাম ৩ শতাংশ কমে গেছে। কারফিউর সময় বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

ইমামি: এই কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে ৪ শতাংশ। বাংলাদেশে ইমামির বড় ধরনের উপস্থিতি রয়েছে। অস্থিরতার কারণে এই কোম্পানির কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ইমামি বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি ও বাজারজাত করে, যার বেশির ভাগই ব্যক্তিগত ব্যবহারের পণ্য। এ ছাড়া রয়েছে নানা ধরনের স্বাস্থ্যসুরক্ষা পণ্য।

ইন্ডিয়া টুডে বলছে, আরও যেসব কোম্পানির বাংলাদেশে উপস্থিতি রয়েছে এবং ধকল পোহাচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছে বায়ার কর্প, জিসিপিএল, ব্রিটানিয়া, বিকাশ লাইফকেয়ার, ডাবুর, এশিয়ান পেইন্টস, পিডিলাইট, জুবিল্যান্ট ফুডওয়ার্কস ও বাজাজ অটো।

এ ছাড়া বাংলাদেশের অস্থিরতা ট্রেন্ট, পিডিএসন ও ভিআইপি ইন্ডাস্ট্রিজের জন্য বিশেষভাবে উদ্বেগের। কারণ, এসব ভারতীয় কোম্পানির সরবরাহব্যবস্থার বেশ খানিকটা অংশ বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করে।

এদের মধ্যে ভিআইপি ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশ থেকে সফট লাগেজ, ব্যাকপ্যাক ও ডাফল ব্যাগের মতো পণ্য বাংলাদেশ থেকে সংগ্রহ করে। কোম্পানিটি বলেছে, যদি বাংলাদেশের পরিস্থিতি টান টান থাকে এবং রাজনৈতিক সংকট যদি দীর্ঘমেয়াদে ভারতের জন্য নেতিবাচক হয়, তাহলে তারা পণ্য সংগ্রহের কৌশল পাল্টে সম্ভবত ভারতের দিকেই নজর ফেরাবে।

ভিআইপি ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নীতু কাশিরামকা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘সফট লাগেজের চাহিদা কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বাংলাদেশে আমাদের কার্যক্রম কমিয়েছি।’ এই কোম্পানির সাতটি কারখানা রয়েছে মোংলা এলাকায়। কোম্পানিটি তাদের আয়ের ২০ থেকে ২৫ শতাংশের জন্য বাংলাদেশ থেকে নেওয়া পণ্যের ওপর নির্ভরশীল।

ফেভিকল তৈরির কোম্পানি পিডিলাইট ইন্ডাস্ট্রিজ বলেছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি তাদের ব্যবসার ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলছে, সেটি তারা খতিয়ে দেখছে। তবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি দ্রুতই ভালো হবে বলে আশা করেছেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভারত পুরি। বাংলাদেশে ফেভিকলের কারখানা আছে এবং এ দেশে তারা পণ্য বাজারজাত করে।

ডাবুর বলেছে যে তারাও বাংলাদেশের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে। ডাবুরের বাংলাদেশে উৎপাদনব্যবস্থা রয়েছে এবং কোম্পানিটি এ দেশে পণ্য বিক্রি করে।

বিদ্যুৎ খাত

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রি করে ভারতের এনটিপিসি। তবে ভারতীয় রাষ্ট্রায়াত্ত খাতের এই কোম্পানির বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার খুব সামান্য অংশই তারা বাংলাদেশে বিক্রি করে। বাংলাদেশ বড় পরিমাণ বিদ্যুৎ আমদানি করে আদানি পাওয়ার লিমিটেডের কাছ থেকে। আদানির সঙ্গে করা চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে মনে করে ইন্ডিয়া টুডে।

২০১৭ সালে করা চুক্তির আওতায় আদানি ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশের কাছে ১,৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিক্রি করার কথা। এই প্রকল্প চালু হয় ২০২৩ সালে। তবে আদানির বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রে সরবরাহ করা কয়লার দাম নিয়ে এর আগে প্রশ্ন উঠেছে। ইন্ডিয়া টুডে বলছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর চুক্তি সংশোধন করার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

পোশাক ও বস্ত্রশিল্প

বাংলাদেশের অস্থিরতা ভারতের বস্ত্র ও পোশাকশিল্পের জন্য মিশ্র পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ভারতীয় সুতার বড় গন্তব্য বাংলাদেশ। দেশটিতে উৎপাদিত সুতার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশই বাংলাদেশে যায়। বর্ধমান টেক্সটাইলসের যুগ্ম ব্যবস্থাপনা পরিচালক নীরাজ জৈন বলেন, বর্তমানে রপ্তানিতে খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে না, তবে বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটলে তা হবে তাঁদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

তবে বাংলাদেশের এই পরিস্থিতিতে সুযোগও খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে। ভারতীয় বস্ত্র ও তৈরি পোশাকশিল্প এই সুযোগে তাদের বাজার বাড়াতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আরএসবির ব্যবস্থাপনা অংশীদার চাকরি লোকাপ্রিয়া বলেন, ভারতের কোম্পানিগুলো যদি দ্রুত এগিয়ে আসে, তাহলে তারা বাজারের একটা অংশ দখল করতে পারবে।

গোকালদাস এক্সপোর্টস, কেপিআর মিল, আরভিন্দ লিমিটেড, এসপি অ্যাপারেলস, সেঞ্চুরি এনকা, কিটেক্স গার্মেন্টস ও নাহার স্পিনিংয়ের মতো কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। অর্থাৎ তাদের জন্য বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ইতিবাচক হয়েছে।




ব্যবসায়ীদের গতি ফিরছে রাজশাহীতে

নিজস্ব প্রতিবেদক
স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে রাজশাহীর ব্যবসা-বাণিজ্য। গতকাল বুধবার থেকে কারফিউ শিথিল করায় রাজশাহীতে ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্য। যদিও দেশজুড়ে ব্যাপক নাশকতা ঘটলেও রাজশাহী ছিল এবার শান্ত। ফলে রাজশাহীতে কারফিউ চলাকালীনও তেমন কড়াকড়ি ছিল না। এতে সাধারণ মানুষও ছিলেন অনেকটা স্বস্তিতে। এরই মধ্যে কারফিউ শিথিল হওয়ায় গতকাল সকাল থেকে রাজশাহীর ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোদমে খুলতে শুরু করে। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় কর্মব্যস্ততা। ক্রেতাদেরও ভিড় বাড়তে থাকে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই কয়দিনে রাজশাহীর ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় অন্তত শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে সবজি চাষিদের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এই কয়দিনে পাইকার না থাকায় সবজির দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। এর বাইরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রুয়েট, রাজশাহী কলেজ, মহিলা কলেজের মতো বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজশাহীর ব্যবসাতে পড়ে ভাটা। রাজশাহীর ব্যবসায় ক্রেতাদের একটি বড় অংশ হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। কিন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং রাজশাহী ছেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায় পড়ে ভাটা।

রাজশাহীর সাহেব বাজার এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী ইমরান আলী বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে দোকান বন্ধ থাকায় আমারই অন্তত ৩০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। রাজশাহীর সব ব্যবসায়ীরই ক্ষতি হয়েছে। তবে বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দেওয়ায় আমরা ব্যবসায়ীরা স্বস্তি ফিরে পেয়েছি। আমরা চাই দেশ শান্তিতে থাকুক। আমরা ভালোভাবে ব্যবসা করি। সাধারণ মানুষও শান্তিতে থাকুক।’

রাজশাহীল ফুটপাত ব্যবসায়ী আকছেদ আলী বলেন, ‘আমার চায়ের দোকানও বন্ধ রাখতে হয়েছে কারফিউয়ের কারণে। আমরা দিন আনি দিন খাই। একদিন দোকান বন্ধ থাকলে পেট চলে না। এই কয়দিন অনেকটা কষ্ট হয়েছে সংসার চালাতে। হাজার খানেক টাকা দোকানে বাকিও পড়েছে।’

রাজশাহী চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, ‘আমাদের রাজশাহী ছিল শান্ত। ফলে এখানে কারফিউ তেমন কড়াকড়ি না থাকলেও ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষানগরী রাজশাহীর সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে বেশি। এর বাইরে সবজি চাষিদেরও ক্ষতি হয়েছে। পাইকার না থাকায় সবজির নেমে এসেছে অর্ধেক দামে




বিভিন্ন গন্তব্যের প্রচারের অর্থ

বিভিন্ন গন্তব্যের প্রচারের অর্থ

জন্মভূমি নিউজ ডেক্স
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আমানত কমছে ৫৯৭ কোটি টাকা। আগের বছরে আমানত তুলে নেওয়ার অঙ্ক ছিল সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। ২০২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে টাকা তুলে নেওয়ার তথ্য প্রকাশ হলে প্রশ্ন উঠেছে এ অর্থের নতুন গন্তব্য কোথায়। কোন কারণে তুলে নেওয়া হচ্ছে বিপুল অঙ্কের আমানত, সুইস ব্যাংকের আকর্ষণই বা কমছে কেন। তবে ভূ-রাজনৈতিক ঘটনা এবং তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটালাইজেশনের অগ্রগতির কারণে পাচারের অর্থ এখন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছুটছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে সম্প্রতি প্রকাশিত ‘কেওয়াইসি হাব’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি ও সিঙ্গাপুরে মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা বেড়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পাচারের অর্থ এসব দেশে প্রবেশ করছে। তবে এর মধ্যে মানি লন্ডারিংয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি শাস্তি দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রে। মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনায় ঝুঁকি বেড়েছে এমন দশটি দেশ শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-হাইতি, চাদ, মিয়ানমার, দ্য ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো এবং রিপাবলিক অব কঙ্গো, মোজাম্বিক, গাবন, লাওস, ভেনিজুয়েলা ও গিনি বিসাউ।

অর্থনীতিবিদ ও অর্থ পাচারসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তথ্যপ্রযুক্তির সুবাদে বিকল্প গন্তব্যে পাড়ি দিচ্ছে পাচারের অর্থ। যেখানে শুধু ব্যাংকে টাকা রাখাই নয়, সংশ্লিষ্ট দেশের পাসপোর্ট প্রাপ্তি, সম্পদের (বাড়ি-ঘর) মালিকানা অর্জন এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের আকর্ষণীয় সুবিধা দেওয়া হয়। স্মার্ট অর্থ পাচারকারীরা এখন টাকা শুধু ব্যাংকে ফেলে রাখছে না। এসব অর্থের বিনিময়ে গড়ে তুলছে বিনিয়োগের সাম্রাজ্য। সংশ্লিষ্টদের মতে, সুইস ব্যাংকে তিন শ্রেণির লোক আমানত রাখেন। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত, পাসপোর্ট হোল্ডার যারা বিদেশে থাকে বা ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। এছাড়া দেশ থেকে অর্থ পাচারকারী যারা নিজেদের তথ্য গোপন রাখতে সেখানে অর্থ জমা করেন।

সুইস ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের আমানতকারীদের টাকার অঙ্ক ৫৬ কোটি ২৯ লাখ থেকে লাফ দিয়ে ২০২১ সালে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁতে দাঁড়ায়। এতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় শীর্ষ আমানতকারী দেশ হিসাবে স্বীকৃতি পায় বাংলাদেশ। এরপর ২০২২ সালে অস্বাভাবিক গতিতে কমে আমানত দাঁড়ায় ৫ কোটি ৫২ লাখ ফ্রাঁতে। আর ২০২৩ সালে নেমে আসে ১ কোটি ৭৭ লাখে।

ধারণা করা হচ্ছে, অর্থ পাচারকারীদের কাছে কয়েকটি কারণে সুইস ব্যাংকের আকর্ষণ কমছে। প্রথম আন্তর্জাতিক চাপে সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পৃথিবীর দেশ ভিত্তিক আমানতের হিসাব প্রকাশ করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে যারা সত্যিকার অর্থে পাচারকৃত টাকার তথ্য গোপন রাখতে চায় তারা এখন সুইস ব্যাংককে প্রাধান্য দিচ্ছে না। দ্বিতীয় হচ্ছে সুইস ব্যাংকের প্রতিযোগী দেশগুলো আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে পাচারের অর্থ নেওয়ার ক্ষেত্রে। ফলে পাচারকৃত অর্থ দিয়ে যে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তোলা ও সম্পদের (ঘরবাড়ি) মালিকানা অর্জনের সুবিধা আছে সেখানে চলে যাচ্ছে। এ ধরনের অনেক কোম্পানি দুবাই ও নিউইয়র্কে সন্ধান মিলবে। অনেক দেশে পাচারকৃত অর্থের কর দিতে হয় না, অর্থ ব্যয় করলে সহজে সংশ্লিষ্ট দেশের পাসপোর্ট মেলে এবং সম্পদের মালিক হওয়া যায়। ফলে সুইস ব্যাংকের তুলনায় অন্যান্য দেশ ও গন্তব্যগুলো আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে পাচারকারীদের কাছে। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচারের অর্থ সরিয়ে নেওয়া সহজ হয়ে উঠছে। এসব কারণে আকর্ষণ কমছে সুইস ব্যাংকের।

জানতে চাইলে অর্থ পাচার নিয়ে কাজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক উপদেষ্টা দেবপ্রসাদ দেবনাথ মিডিয়াদেখ বলেন, সুইস ব্যাংকের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শাখা আছে। ফলে যে কোনো দেশে সুইস ব্যাংকের শাখায় বাংলাদেশি কোনো ব্যক্তি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করলে সেটি কেন্দ্রীয় ভাবে সুইস ব্যাংকের হিসাবে গণনায় আসে। কোনো বাংলাদেশি সুইস ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সেটি তাদের এসেটে দেখাবে। রপ্তানি সময় হিসাব নিষ্পত্তি না হলে সেগুলো সুইস ব্যাংকের নষ্ট অ্যাকাউন্টে দেখানো হয়। তবে সুইস ব্যাংকের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কোনো তথ্য দেয় না। এখন আমানত কমে যাওয়ার পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। তার মতে, পাচারকৃত অর্থ সেখান থেকে বের করে নেওয়া হলেও সেটি বোঝার উপায় থাকবে না। কারণ অন্য দেশগুলোতে নেওয়া হচ্ছে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। বিশেষ করে একজন ব্যক্তি আমেরিকায় একটি ব্যবসা করে বছরে এক লাখ ডলার মুনাফা করেন। কিন্তু আয়কর দেওয়ার সময় মুনাফা দেখানো হলো ২০ লাখ ডলার। বাকি ১৯ লাখ ডলার সে দেশে প্রবশে করলেও ধরার উপায় থাকছে না।

এদিকে অর্থ পাচার ও মানি লন্ডারিং শুধু বাংলাদেশ নয় এটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা। এটি বিশ্বব্যাপী হুমকি হয়ে উঠছে। জাতিসংঘের মাদকদ্রব্য ও অপরাধ সংক্রান্ত কার্যালয় (ইউএনওডিসি) অনুসারে প্রতিবছর বিশ্বে পাচার হচ্ছে ৭৬ হাজার ৪৭২ কোটি ডলার। এটি প্রতিবছর বৈশ্বিক জিডিপির ২ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশের সমান। যে কারণে মানি লন্ডারিং বিরোধী কার্যক্রম আরও চাপের মধ্যে পড়েছে। পাশাপাশি ডিজিটালাইশেনের কারণেও বেড়েছে অর্থ পাচারের ঘটনা। কেওইসির প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থ পাচারের বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ ২০২৪ সালের মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাসী অর্থায়ন এবং বিস্তার অর্থায়নের জাতীয় ঝুঁকি মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে অবৈধ আর্থিক হুমকি, দুর্বলতা এবং ঝুঁকিগুলো তুলে ধরা হয়। সেখানে অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়ায় ২০২২ সালে ১৪ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।

দ্বিতীয় অর্থ পাচারের দেশ যুক্তরাজ্য। মাদক পাচারের মাধ্যমে অর্থ পাচারের ঘটনায় শীর্ষ রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। কানাডায়ও বেড়েছে মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা। সেখানে রিয়েল এস্টেট খাতে বেশি আসছে পাচারকৃত অর্থ। একই ভাবে জার্মানি ও সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারের ঘটনা বেড়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে বাংলাদেশেও মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা বেড়েই চলছে। গত অর্থবছরের (২০২২-২৩) তুলনায় চলতি বছরে (২০২৩-২৪) পাচারের ঘটনা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। মূলত ব্যাংক লেনদেন, হুন্ডি ও মোবাইল ব্যাংক এবং গেমিং বেটিংয়ের মাধ্যমেই এসব ঘটনা ঘটছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের সন্দেহে প্রায় সাড়ে ৫শ ব্যাংক হিসাব শনাক্ত করা হয়। সেখানে লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনার জন্য যৌথভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিআইএফইউ) এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে বিনিময় করা হয়। এর আগের অর্থবছরে ২৮৫টি ঘটনার তথ্য বিনিময় হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে আরও প্রায় ১১ হাজার লেনদেনকে সন্দেহজনক তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। পাশাপাশি হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগে ব্যক্তিগত ২৭ হাজার ৬৮০ মোবাইল ব্যাংক (এমএফএস) স্থগিত এবং ৫ হাজার ২৯টি এমএফএস এজেন্টশিপ বাতিল করা হয়েছে।

সূত্রমতে, পাচার হয়ে যাওয়ার ঘটনা সম্পর্কে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৬৫টি চিঠি দিয়েছে বিএফআইইউ। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা মিডিয়াদেক জানান, আমরা আইনি প্রক্রিয়া মেনে সুইস ব্যাংকসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চিঠি দিয়েছি। একইভাবে আমাদের কাছেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ সম্পর্কে তথ্য চেয়েছে। এরই মধ্যে পাচারকৃত অর্থের তথ্য চেয়ে ১৫টি দেশ বাংলাদেশকে অনুরোধপত্র পাঠিয়েছে। আর অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়নের তথ্যাদি চেয়ে এরই মধ্যে বিশ্বের ৬৫টি দেশ থেকে অনুরোধপত্র এসেছে।

অনেক দেশেই অর্থ পাচার করা হচ্ছে

অধ্যাপক মইনুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, নানা কারণে সুইস ব্যাংকের আকর্ষণ কমছে। এখন ঝামেলা ছাড়া নিরাপদে বিশ্বের অনেক দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করা যায়। অর্থ পাচার আগের তুলনায় আরও সহজ হয়েছে। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে পাচারকারীরা আগের তুলনায় আরও বেশি সুবিধা নিতে পারছে। ফলে পাচারকারীরা এখন সুইস ব্যাংকের বিকল্প হিসাবে ইউএসএ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া সুইস ব্যাংক আগের মতো কঠোর নিয়মে চলছে না। তারা এখন বিভিন্ন দেশকে তথ্য দিতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে যারা এক সময় পাচারকৃত অর্থ গোপনে রাখার জন্য সুইস ব্যাংককে নিরাপদ মনে করছে তারা এখন সেখান থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে সুইস ব্যাংকে আগের মতো আমানত বাড়ছে না।

তথ্য গোপন না থাকায় আকর্ষণ কমছে

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর যুগান্তরকে জানান, তিন শ্রেণির লোক সুইস ব্যাংকে টাকা রাখে। প্রথম হচ্ছে সরকারি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থও সেখানে রাখা হয়। দ্বিতীয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত, পাসপোর্ট হোল্ডার যারা বিদেশে থাকে বা বাণিজ্য করছে তারাও সুইস ব্যাংকে টাকা রাখে। এরা রাখে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য। আর তৃতীয় হচ্ছে দেশ থেকে অর্থ পাচারকারী। যারা নিজেদের গোপন রাখতে সেখানে অর্থ জমা করে। তবে সম্প্রতি সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সে ধরনের গোপনীয়তা রাখছে না। কোনো দেশের সরকার চাইলে তথ্য দিয়ে দিচ্ছে ব্যাংকটি। ফলে যারা সত্যিকার অর্থে পাচারকৃত টাকার তথ্য গোপন রাখতে চায় তারা এখন সেখানে রাখছে না।

তিনি আরও বলেন, পাচারকারীরা বিদেশে দুভাবে অর্থ ব্যবস্থাপনা করে। এক শ্রেণি দেশ থেকে টাকা পাচার করে বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তোলে। দুবাই ও নিউইয়র্কে এ ধরনের অনেক কোম্পানির সন্ধান মিলবে। ওইসব পাচারকারী ব্যাংকে বেশি টাকা রাখে না। দ্বিতীয় হচ্ছে ব্যাংকে টাকা না রেখে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে বাড়িঘর ও স্থায়ী সম্পদ ক্রয় করছে। এসব কারণে সুইস ব্যাংকে কোনো গুরুত্ব নেই। এছাড়া দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় সুইস ব্যাংকে সরকারের ডিপোজিটও কমে আসছে। আগে পাচারকৃত অর্থ ব্যাংকে রেখে চলে আসত। এখন পাচারকৃত অর্থ ব্যবহারের বিকল্প অনেক উৎস তৈরি হয়েছে। ফলে ব্যাংকে টাকা রাখার প্রবণতা কমছে।

অর্থ গোপনের সুবিধা আছে নানা দেশে

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশন অব বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে জানান, আগের তুলনায় সুইস ব্যাংক বেশি নিয়মকানুন মানার চেষ্টাসহ তথ্য প্রকাশ করছে। নানা কারণে এ ব্যাংকে টাকা রাখার বিষয়টি নিরুৎসাহিত হচ্ছে। এছাড়া বিশ্বের অনেক দেশে এখন সুইস ব্যাংকের মতো অর্থ রাখার সুবিধা আছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডাসহ অনেক দেশে পাচারকৃত অর্থকে স্বাগত জানার মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শুধু তাই নয়, ওইসব দেশে পাচারকৃত অর্থ দ্বারা সম্পদের মালিকানা অর্জন করা যাচ্ছে। এর সঙ্গে আরও যুক্ত হয়েছে মালয়েশিয়া, হংকং ও সিঙ্গাপুর। আরও আছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে আরব আমিরাত। অর্থাৎ আগে সুইস ব্যাংকের একটি মনোপলি ব্যবসা ছিল সেটি ভেঙে গেছে। কারণ বিকল্প হিসাবে অন্য দেশগুলো প্রতিযোগিতায় এগিয়ে গেছে। ওইসব দেশের সুযোগ-সুবিধা আমাদের দেশের অর্থ পাচারকারীরা নিচ্ছে বলে মনে করি। সুইস ব্যাংকে আমানত কমেছে এর মানে দেশ থেকে অর্থ পাচার কমেছে সেটি বলা যাবে না। বরং দেশ থেকে অর্থ পাচারের ঘটনা বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, অনেক দেশে পাচারকৃত অর্থের কর দিতে হয় না। আবার নতুন দেশ যুক্ত হয়েছে যেমন গ্রিস ও পর্তুগাল-এ ধরনের দেশগুলো আছে এই তালিকায় কিন্তু তাদের নাম আসছে না। যেসব দেশে অর্থ ব্যয় করলে সহজে সংশ্লিষ্ট দেশের পাসপোর্ট মেলে এবং সম্পদের মালিক হওয়া যায়। ফলে সুইস ব্যাংকের তুলনায় অন্যান্য দেশ ও গন্তব্যগুলো আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে পাচারকারীদের কাছে। যে কারণে আকর্ষণ সুইস ব্যাংকের। সুইস ব্যাংক এখন তথ্য প্রকাশ করছে, আগের মতো কড়াকড়ি নেই। এছাড়া প্রতিযোগিতায় থাকা কাছাকাছি দেশগুলো যেমন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং ও আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশে যেখানে যাওয়া আসা ও সম্পদ অর্জন এখন সহজ। এসব দেশ সুযোগগুলো করে দিচ্ছে। ফলে আমাদের দেশের স্মার্ট অর্থ পাচারকারীরা সুযোগগুলো নিচ্ছে। এছাড়া ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডায় শুধু অর্থ পাচার নয়, বাড়িঘরে মালিকানা নিচ্ছে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনি কাঠামো আগের তুলনায় অনেক সক্রিয় হয়েছে। সরকারের সদ্দিচ্ছা থাকলে পাচারকৃত অর্থ শনাক্ত, ফেরত আনা এবং পাচারের সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনা অবশ্য সম্ভব।

চিঠি দিলেই সুইস ব্যাংক বা অন্য কোনো দেশ পাচারের তথ্য দেবে এটি ঠিক নয়। এটি ফাঁকা আওয়াজের মতো। কি প্রক্রিয়ায় চিঠি দেওয়া হচ্ছে, আইন অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা এসব বিষয় সরকারের পক্ষ থেকে খোলাসা করে বলা হয় না।