মোহনপুর পালশা গ্রামে পুড়ে যাওয়া পান বরজ পরিদর্শন করেন কৃষি অফিস

মোহনপুর প্রতিনিধিঃ
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ধুরইল ইউনিয়নের লক্ষীপুর বড় পালশা গ্রামে গতকাল আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পান বরজ পরিদর্শন ও চাষীদের সাথে কথা বলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রাজশাহী জেলার উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা।

শনিবার ১২ ই এপ্রিল দুপুরের দিকে পুড়ে যাওয়া পান বরজ গুলো পরিদর্শন করা হয়েছে।
এই সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি অফিসার কামরুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার এম,এ মান্নান, ধূরইল ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম সহ ক্ষতিগ্রস্ত পান চাষীরা।




রাজশাহীতে আমে ১০ ‘১২ হাজার কোটি টাকা বাণিজ্যের সম্ভাবনা

জন্মভূমি নিউজ ডেক্স
চলতি মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলে আমের বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। যা সব মিলিয়ে প্রায় এবার আমে ১০ ১২ হাজার কোটি টাকা বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এমন আশাব্যঞ্জক মৌসুমের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে জানান আমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে নওগাঁয় ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির বাগানে ৪ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন ও রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর বাগানে দুই লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এই তিন জেলায় আম বাগানে প্রায় ৯৩ হাজার হেক্টর জমি জুড়ে মুকুল ও গুটিতে পরিপূর্ণ আছে। যা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ভালো ফলের আশা জাগিয়ে তুলছে।

আম ব্যবসায়ী নেতারা জানান, বাণিজ্যিক দিক বিবেচনায় বিভাগের আট জেলা; চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, বগুড়া, পাবনা, রাজশাহী এবং সিরাজগঞ্জের আম প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন ও বিদেশে রফতানি প্রক্রিয়া সহজতর হলে আরও লাভবান হওয়া যাবে। এ অবস্থায় কৃষি বিভাগ ও ফল গবেষণার সঙ্গে জড়িতরা ভালো ফলন পেতে বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের নানা পরামর্শ দিচ্ছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমচাষি ও কৃষি বিভাগ জানায়, জেলার আম বাগানগুলোতে প্রায় ৯০ শতাংশ গাছে দেখা গেছে মুকুল। ইতিমধ্যে ৫০ শতাংশ গাছে দেখা দিয়েছে আমের গুটি। এবার আম মৌসুমের অন ইয়ার অর্থাৎ বেশি ফলনের বছর। পাশাপাশি কুয়াশা কম থাকায় মৌসুমের শুরুতেই ব্যাপক হারে মুকুল দেখা দিয়েছে বাগানগুলোতে। গাছে থাকা মুকুল যাতে ঝরে না পড়ে তাই কীটনাশক স্প্রে ও সেচসহ বিভিন্ন পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সদর উপজেলায় আমগাছ আছে ১১ লাখ ৯ হাজার ৯০০টি। এর মধ্যে মুকুল এসেছে ৯০ ভাগ গাছে। এই ৯০ ভাগ গাছে এরই মধ্যে কোনও কোনোটিতে সরিষা দানা আবার কোনও কোনোটিতে মটর দানার মতো আমের গুটি বেরিয়েছে ৫৫ ভাগ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, অন ইয়ারের প্রভাবে জেলার আমবাগানগুলোতে বেশি ফলন হওয়ায় চলতি বছর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে ব্যাপক। তবে এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আমের বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত পণ্য উৎপাদন ও বিদেশে আম রফতানি বৃদ্ধি করতে হবে। তা না হলে বেশি ফলন হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা কৃষকদের

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় যথাসময়ে আমগাছগুলোতে মুকুলিত হয়। যারা আমগাছের পরিচর্যা করেছেন, তাদের গাছে বেশি মুকুল এসেছে এবং টিকেও গেছে। তবে যারা পরিচর্যা করেননি, তাদের গাছগুলোয় কিছুটা মুকুল নষ্ট হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের যথাযথ পরিচর্যা ও যত্ন নিতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, বিভাগের আট জেলায় যে পরিমাণ আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তার বাজার মূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।

আরেক আমচাষি আবদুর রাজ্জাক সক্রিয়ভাবে তার বাগানের পরিচর্যা করছেন। ৯০০টি গাছের মধ্যে ৫০০টিতে গুটি গজিয়েছে। ফসল রক্ষার জন্য তিনি ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় দফায় কীটনাশক স্প্রে করেছেন।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান জানান, যদি কমপক্ষে ৫০% মটরশুঁটির ডাল বেঁচে থাকে, তাহলে আম বড় হবে এবং উন্নত মানের হবে। চারঘাট উপজেলায়ও একই রকম পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, যেখানে পাতার মধ্যে আমের ডাল বের হতে শুরু করেছে।

চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন হাসান জানান, ৫০% মুকুল শুঁটিতে পরিণত হয়েছে। তিনি কৃষকদের তাদের বাগানের যথাযথ যত্ন নেওয়ার এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে বিশেষ করে আমের ফড়িং এবং পুঁচকি পোকার আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা।




জয়পুরহাটে পেঁয়াজের দামে ধস, লোকসানে দিশাহারা কৃষক

সুকমল চন্দ্র বর্মন (পিমল) জেলা প্রতিনিধিঃ
জয়পুরহাটের বিভিন্ন হাটবাজারে ধস নেমেছে পেঁয়াজের দামে। ফলে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন পেঁয়াজ চাষিরা। এতে কৃষকরা এখন দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

হাটবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মণ দরে। বর্তমান বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করে কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে।

শুক্রবার (২১ মার্চ) জয়পুরহাটের হাটবাজারগুলো ঘুরে পেঁয়াজের দামের এ খবর জানা গেছে।

নতুনহাটের পেঁয়াজ বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন জানান, আগের চেয়ে বাজারে পেঁয়াজ বেশি আমদানি হওয়ায় দাম একেবারে কমে গেছে। ২০ দিন আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দামে বিক্রি করেছেন। সেই পেঁয়াজ বর্তমান বাজারে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মহব্বতপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি কাজী হারুন রশিদ জানান, তিনি আজ জামালগঞ্জ চারমাথা হাটে ৪০০ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। পেঁয়াজের ছোট-বড় আকার ভেদে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে চার মাথার হাটে। তার ১ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করে ২০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। এ বছর তিনি গুটি পেঁয়াজের বীজ ১৪ হাজার টাকা মণ দরে কিনেছিলেন। এক বিঘা জমিতে চার মণ পেঁয়াজ বীজ কিনতে তার ৫৬ হাজার টাকা লাগে। সার ও মজুরিসহ ১ বিঘা জমিতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার টাকা।

একই গ্রামের ওমর আলী জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করে ৪০-৫০ হাজার টাকা লোকসান গুনেছেন।

বর্গা চাষি আফজল হোসেন জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করে ২০ দিন আগে ১ হাজার টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। এ ফসল আবাদ করে তিনি কোনো লাভ পাননি।

জয়পুরহাট জেলা কৃষি ও সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে ৮৫০ হেক্টর জমিতে। গত মৌসুমে পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা এবার ৫০ হেক্টর বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেন।

জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম জানান, এ মৌসুমে পেঁয়াজ বীজের দাম বেশি থাকায় কৃষকের পেঁয়াজ চাষে বেশি খরচ হয়েছে। প্রায় এক মাস আগে পেঁয়াজের দাম বেশ ভালোই ছিল। বাজারে নওগাঁ ও রাজশাহী জেলার পেঁয়াজ জয়পুরহাটের হাটবাজারে আমদানি হওয়ায় দাম কমেছে পেঁয়াজের। তবে বর্তমান বাজার মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করে কৃষকদের কিছুটা লোকসান হচ্ছে।




বাঘায় গাছে গাছে আমের মুকুল, কৃষকের চোখে মুখে স্বপ্ন।

সাজ্জাদ মাহমুদ সুইট, রাজশাহী।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার প্রধান অর্থকারী ফসল আম। এ উপজেলার আমের খ্যাতি দেশ সহ বিদেশেও রয়েছে। আমের উপর নির্ভর করে এই উপজেলার অধিকাংশ পরিবারের বাৎসরিক সাংসারিক হিসেব-নিকেশ। আর তাই আম গাছে মুকুল দেখলেই আশাই বুক বাঁধেন আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা। তবে গত কয়েক বছরে উৎপাদন ও দাম নিয়ে হতাশ তারা।

সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, আম বাগানগুলোতে এখন দেখা যাচ্ছে শুধু মুকুল আর মুকুল।আমের বাগানগুলো ভরে উঠেছে মুকুলে মুকুলে। গাছে গাছে দৃশ্যমান সোনালী মুকুলের আভা। মৌমাছিরা আসতে শুরু করেছে মধু আহরণের জন্য। গাছে গাছে মুকুলের সমারোহ দেখে আম চাষীদের প্রাণ যেন ভরে যাচ্ছে। সোনালী স্বপ্নে বিভোর এখন বাঘা উপজেলার আমচাষী আর বাগান মালিকরা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবছর আমের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন তারা। কিছু গাছে ক্ষুদ্র আকারে মুকুল বের হচ্ছে, আবার কিছু গাছে পরিপূর্ণ মুকুল এসে গেছে। এতে করে বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন । এ উপজেলায় আম উপলক্ষে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২০ টি আমের বাজার বসে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, আবহাওয়ার পাশাপাশি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এই বছরে আমের ফলন ভালো হবে। আর সেই সাথে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আম চাষ করলে উৎপাদন যেমন বাড়বে, তেমনি সঠিক ভাবে সংরক্ষণ এবং পরিবহন, রপ্তানি-সহ বাজারজাত করলে কৃষকরা ব্যপক হারে লাভবান হবেন। কয়েক বছর থেকে বাঘার আম বিশ্বের কয়েকটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। গত বছর কৃষি মেলায় প্রায় দুইশ জাতের আম দেখা যায়।

কয়েক জন আম চাষিদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বেশ কয়েক বছর থেকে ভালো আম হয়নি এই অঞ্চলের বাগান গুলোতে। তারপর আবার আমাদের দামও আশানুরূপ না পাওয়ায় বাগান মালিকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মূখে পরেছিলো। বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ীরা এক প্রকার নিঃস্ব হয়ে গেছে।

বাঘা পৌরসভার বাগান মালিক মিজানুর রহমান সাহিন বলেন, আমের উপর নির্ভর করে আমাদের বাৎসরিক সংসারের হিসাব-নিকাশ। গত ৪-৫ বছরে আমের ফলন কম ও দামীও ভালো পাওয়া যায়নি। আমাদের ২৪ থেকে ২৫ বিঘার আম বাগান রয়েছে, যাতে প্রতিবছর পরিচর্যায় কম করে হলেও ৭০-৭৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। গত বছর এই টাকা পরিচর্যা খরচ করে আম বিক্রি করেছিলাম মাত্র দেড় লক্ষ টাকার।

আম ব্যবসায়ী রিপন আলী বলেন, আমের মৌসুমে এ উপজেলায় প্রায় লাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়। এ অঞ্চলের আমের মধ্যে-ফজলি, হিমসাগর, গোপাল ভোগ, ল্যাংড়ার, আড়াজম, আম্রপালি ও আশ্বিনা আমের নাম শোনা যায় সবার মুখে-মুখে। এ ছাড়াও বৌ-ভুলানী, রানী পছন্দ, জামাইখুসি, বৃন্দাবন, লকনা, বোম্বাই খিরসা, মহনভোগ, সেনরি, ব্যানানা, খিরসা পাত, বৃন্দাবনী, ও কালীভোগ-সহ প্রায় দেড়’ থেকে দুইশ জাতের আম রয়েছে।এ বছর আম পাড়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত যদি আবহাওয়া ভাল থাকে এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত থাকে তাহলে এবার যে হারে গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে তাতে করে আম বিক্রি হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ্ সুলতান বলেন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আম চাষ করলে এর উৎপাদন যেমন বাড়বে, তেমনি সঠিক ভাবে সংরণ এবং পরিবহন, রপ্তানি-সহ বাজারজাত করলে কৃষকরা ব্যপক হারে লাভবান হবেন। তিনি এ উপজেলায় যোগদানের পর থেকে কৃষকদের উন্নত পদ্ধতিতে আম চাষ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এর ফলে গত কয়েক বছর থেকে বাঘার আম বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।




রাজশাহী পবা উপজেলা রাস্তায় আলু ফেলে কৃষকদের বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর হিমাগারগুলোতে আলু মজুদের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন কৃষকেরা। আজ বুধবার পবা উপজেলার বায়া এলাকায় সরকার কোল্ড স্টোরেজের সামনে তারা এ বিক্ষোভ করেন। সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে কৃষকেরা রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে ৮ বস্তা আলু ফেলে দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। স্থানীয় বিএনপি এ কর্মসূচিতে একাত্মতা জানিয়েছে।

কৃষকেরা জানান, প্রতি কেজি আলু সংক্ষণের জন্য আগে রাজশাহীর হিমাগারগুলোকে ৪ টাকা ভাড়া দিতে হতো। এবার তা বৃদ্ধি করে ৮ টাকা করা হয়েছে। ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই তারা দ্রুত আগের ভাড়া নির্ধারণের দাবি জানান। হিমাগারে ভাড়া না কমালে এবার তারা প্রয়োজনে আলু ফেলে দেবেন, কিন্তু হিমাগারে রাখবেন না।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে কৃষকেরা ওই এলাকায় পথসভাও করেন। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক শফিকুল হক মিলন। তিনি বলেন, ‘হিমাগার মালিকেরা সিন্ডিকেট করে আলু সংরক্ষণের ভাড়া বৃদ্ধি করেছেন। এ ভাড়া কার্যকর হলে বাজারে আলুর দাম বাড়বে। এটি হতে দেওয়া হবে না।

উল্লেখ্য, আগের বছরগুলোতে আলু সংরক্ষণ করা হতো বস্তা হিসেবে। ৫০ কেজির প্রতি বস্তার জন্য ভাড়া নেওয়া হতো ৩৪০ টাকা। হিমাগার মালিকেরা ৫০ কেজির বস্তাতেই আলু দেওয়ার কথা বললেও ফড়িয়ারা ৮০ কেজির বস্তাতেও আলু রাখতেন। এতে হিমাগার মালিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। তাই তারা এবার নিয়ম করেছেন, কেজি হিসেবে সংরক্ষণ ভাড়া নেওয়া হবে।

হিমাগার মালিকেরা বলছেন, ৫০ কেজির বস্তার জন্য আগে ৩৪০ টাকা নেওয়া হলে ভাড়া পড়তো ৬ টাকা ৮০ পয়সা। কিন্তু ফড়িয়ারা বস্তায় এত বেশি আলু দিতেন যে, ভাড়া পড়ত ৪ টাকা। অথচ বস্তায় ৫০ কেজির বেশি আলু না ঢোকানোর জন্য সরকারের নির্দেশনাও আছে। তা প্রতিপালন না করায় বাধ্য হয়েই তারা কেজি হিসেবে ৮ টাকা করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, ‘ভাড়া কেন্দ্রীয়ভাবেই নির্ধারণ হয়। এবারও সেটাই হয়েছে। ৫০ কেজির বস্তার ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য আমরা এবার কেজি হিসেবে গিয়েছি। কারণ, বেশি ওজনের বস্তা টানা হিমাগারের শ্রমিকদের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা কেজি হিসেবে গেলেও এটা বলছি না যে, ৮ টাকাই দিতে হবে। হিমাগার মালিকেরা যে যার সক্ষমতা অনুযায়ী এ ব্যাপারে ছাড় দেবে।’

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে ভাল হয় এ ব্যাপারে সরকার হস্তক্ষেপ করলে। সরকার তো সব বিষয়ই দেখছে। সবকিছু পর্যালোচনা করে সরকার সবার জন্য একটা যৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেই ভালো হয়। সরকার যদি এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়, আমরা তা মেনে নেব।




রাজশাহীতে ফুটছে আমের মুকুল, ঘন কুয়াশায় ক্ষতির শঙ্কা চাষিদের

জন্মভূমি নিউজ ডেস্ক :
শীতকাল শেষ না হতেই রাজশাহী অঞ্চলের আমবাগানগুলোতে এবার আগাম মুকুল আসতে শুরু করেছে। বাগানগুলোতে পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে আমের মুকুল। অনেক আমবাগান মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে। তবে অতি শীতল আহবাওয়া ও শৈত্যপ্রবাহের পাশাপাশি ঘন কুয়াশায় মুকুলের ক্ষতির শঙ্কা দেখছেন আমচাষিরা।

যদিও উৎকণ্ঠিত চাষিরা শীতের তীব্রতা ও ঘন কুয়াশা থেকে মুকুল বাঁচাতে বাগানগুলোতে বাড়তি যত্ন নিতে শুরু করেছেন। নিয়মিতভাবে আমবাগানগুলোতে ছত্রাকনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষে ছিটানো হচ্ছে পানি। আমগাছের গোড়াতেও পানি দিচ্ছেন চাষিরা।

আমচাষিরা বলছেন, গত মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলের জেলাগুলোতে আমের ফলন আশানুরূপ হয়নি। প্রকৃতির নিয়মানুযায়ী এক মৌসুমে ভালো ফলন হলে পরেরবার আমের ফলন কম হয়। এবার তারা আমের বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেঁধে আছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার রাজশাহী অঞ্চলের বাগানগুলোতে কিছু সময় আগেই মুকুল আসতে শুরু করেছে। তবে রাজশাহীর বাগানগুলো মুকুলিত হলেও পার্শ্ববর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর বাগানগুলোতে দুই-একটি করে মুকুল ফুটতে শুরু করেছে।

রাজশাহীর উপকণ্ঠের কয়েকটি আমবাগান ঘুরে দেখা গেছে, বাগানগুলোতে অধিকাংশ গাছেই মুকুল এসেছে। কোথাও কোথাও ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ আমগাছ মুকুলিত হয়েছে। আবার কোথাও ৫০ শতাংশ গাছে মুকুল ফুটেছে।

কয়েকজন বাগান মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমগাছে মুকুল আসা শুরু হতেই মৌসুমি বাগান ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা মাঠে নেমে পড়েছে। তারা মুকুল দেখে বাগান কেনার জন্য মালিকদের কাছে যাচ্ছেন। তবে এখনো বাগান কেনাবেচা জমে উঠেনি।

রাজশাহীর বড়গাছি এলাকার বাগান মালিক বাবলু সরকার বলেন, এখনো রাজশাহীতে শীতের তীব্রতা ও কনকনে ঠাণ্ডার প্রকোপ কমেনি। সূর্যের তাপ প্রায় নেই বললেই চলে। গত কয়েক দিন ধরে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে প্রকৃতি। এসব কারণে আগাম মুকুল নিয়ে চাষিদের শঙ্কা কিছুটা বেড়েছে। রোদের তাপ না পেলে এবং বেশি সময় ধরে প্রকৃতি কুয়াশায় ঢেকে থাকলে মুকুল ঝরে পড়ার ব্যাপক আশঙ্কা থাকে। এতে আমের ফলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এই শীতের মধ্যে আবার বৃষ্টি হলে দ্রুত কুয়াশা কেটে যাবে। তাতে বরং আমচাষিদের জন্য আশীর্বাদ হবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, এবার বাগানগুলোতে কিছুটা আগে আগেই মুকুল আসতে শুরু করেছে। অনেক বাগানে আমগাছগুলোর অধিকাংশই মুকুলিত হয়েছে। তবে ঘন কুয়াশা বেশি দিন থাকলে মুকুলের ক্ষতির শঙ্কা আছে। শীতের তীব্রতা মুকুলের জন্য কোনো শঙ্কার কারণ নয় তবে ঘন কুয়াশার কারণে মুকুলের ক্ষতি হয়। কুয়াশার কারণে আমগাছে ছত্রাকের সংক্রমণ বাড়ে। মুকুলের ক্ষতি যাতে না হয় সেজন্য চাষিদের ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

রাজশাহী অঞ্চল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলায় ৯৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আনুমানিক প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টন। অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি আম বাগান রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। গত বছর রাজশাহী অঞ্চলে মোট ১২ লাখ ৭ হাজার ২৬৩ টন আম উৎপাদন হয়। এবার আমের ফলন কিছুটা বাড়বে বলে আশা কৃষি বিভাগের।

রাজশাহী আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, বাগানগুলোতে গাছে গাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে। আগাম মুকুল এলে কুয়াশার কারণে ক্ষতির শঙ্কা থাকে। গত মৌসুমে বাগানগুলোতে ভালো মুকুল এলেও তা ঝরে পড়ায় আম উৎপাদন হ্রাস পায়। এবার ভালো ফলনের আশা করছি। কুয়াশা ছাড়াও ঝড় বৃষ্টিতে মুকুলের ক্ষতি হয়। বাকিটা আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। আর সামনে কিছুদিনের মধ্যে বাগান কেনাবেচা শুরু হবে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, এবার বাগানগুলোতে আগাম মুকুল এসেছে। গত বছর মুকুল এলেও কুয়াশার কারণে মুকুলের বেশি ক্ষতি হয়েছিল। ফলে ফলনও কম হয়েছিল। এবার বেশি মুকুল হবে বলে আশা করছি। আর চাষিদের গাছের প্রতি যত্নশীল হওয়ার পরামর্শও দিচ্ছি।

রাজশাহী অঞ্চল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. মোতালেব হোসেন বলেন, প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী বড় আমগাছে কোনো বছর মুকুল কম এলে পরের বছর বেশি আসে। সেই হিসাবে বড় গাছগুলোতে মুকুল এবার বেশি আসার কথা। আর ছোট গাছ যারা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে রোপণ করেন তারা যথাযথ যত্ন নেন। এ কারণে ছোট বাগানগুলোতে সব মৌসুমেই মুকুল বেশি হয়। এবারের আবহাওয়া আমের জন্য এখন পর্যন্ত উপযোগী আছে। আর দীর্ঘ কুয়াশার কবলে পড়লে চাষিদের বাড়তি যত্ন নিতে হবে। এখন আম চাষিরা অনেক বেশি সচেতন। আশা করি তারা মুকুল রক্ষায় প্রতিষেধক ছিটাবেন। এতে মুকুল রক্ষা পাবে। আমের ফলনও ভালো হবে।




রাজশাহীতে কৃষিবিষয়ক আঞ্চলিক কর্মশালা অনুষ্ঠি

নিজস্ব সংবাদদাতা
রাজশাহীতে কৃষি বিষয়ক আঞ্চলিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সকালে মহানগরী নওদাপাড়া এলাকায় একটি সম্মেলন কেন্দ্রে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রাজশাহী অঞ্চল ও এফএও এর আয়োজনে আঞ্চলিক কর্মশালয় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক( ভারপ্রাপ্ত) ড. মো: মোতালেব হোসেন। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নাটোরের উপ-পরিচালক মো: আব্দুল ওয়াদুদ, নওঁগার উপপরিচালক, মো: আবুল কালাম আজাদ, রাজশাহীর উপ-পরিচালক মোছা: উম্মে সালমা। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ড. মো: দিলোয়ার আহমেদ চৌধুরী হোসেন, শস্য উৎপাদন বিশেষজ্ঞ, FAO, বাংলাদেশ ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকারের সভাপতিত্বে কর্মশালায়
কারিগরি সেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. মো: দিলোয়ার আহমেদ চৌধুরী, শস্য উৎপাদন বিশেষজ্ঞ, FAO, বাংলাদেশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কীটনাশকের ব্যবহার অত্যন্ত বেশি। কৃষকদের ও কীটনাশক ব্যবসার সাথে জড়িত কোম্পানি এবং ডিলারকে কীটনাশকের ব্যবহারবিধি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আজকের এই আয়োজন।

কর্মশালায় মাঠ পর্যায়ে খুচরা বালাইনাশকের এক্সেল শিট প্রস্তুতকরণ বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তানজিলা ইসলাম, মনিটরিং ও মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ, FAO বাংলাদেশ।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি ড. মো: মোতালেব হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর স্বউদ্যোগ বালাইনাশকের ডিলার ও কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও সচেতনাবৃদ্ধি করে থাকে। যাতে সঠিক বালাইনাশকের ব্যবহার নিশ্চিত হয়। উপস্থিত সকলকে ব্যবহার বিধি মেনে বালাইনাশক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য আহবান জানান।




নওগাঁর মহাদেবপুরে চিনি আতব ধানের ফলন ও দামে খুশি কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নওগাঁর মহাদেবপুরে চলতি মৌসুমে চিনি আতব ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের ভালো ফলন ও দাম পেয়ে খুশি কৃষকরা। এ ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক-কৃষানিরা। চলতি মৌশুমে এ ধান চাষে আবহাওয়া অনুকূল থাকাসহ সরকারি ভাবে কৃষকদের মধ্যে কৃষি প্রনোদনা প্রদান করায় বাম্পার ফলন হয়েছে বলে স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তর জানায়।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ১০ হাজার ৬ শ’ হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের চিনি আতব ধান চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। এ জমি থেকে ৩৪ হাজার ৯৮০ মেট্রিক টন চিনি আতব ধান এবং এ ধান থেকে ২৩ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন চিনি আতব চাল উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।

উপজেলার উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের চককামাল গ্রামের কৃষক সোহেল বলেন, এ বছর তিনি ২৪ বিঘা জমিতে চিনি আতব ধান চাষ করেছেন। তার চাষকৃত জমিতে বিঘা প্রতি ১২ থেকে ১৪ মন চিনি আতব ধান ফলন হয়েছে। ধানের ফলন হওয়ায় খুশি তিনি। শিবরামপুর গ্রামের কৃষক আবদুল জববার চলতি মৌসুমে ৫ বিঘা ও জয়পুর গ্রামের কৃষক জহুরুল ইসলাম ২ বিঘা জমিতে চিনি আতব ধান চাষ করেছেন। তারা জানান, তাদের জমিতে বিঘা প্রতি ১২ থেকে ১৩ মন চিনি আতব ধানের ফলন হয়েছে। ধানের ভালো ফলন ও বাজারে বেশি দাম পাওয়ায় খুশি তারা।

শনিবার মহাদেবপুর হাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি মন চিনি আতব ধান ২ হাজার ১০০ টাকা ২ হাজার ২০০ টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে। যা ১ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিমন ধানের দাম ১০০ টাকা বেড়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ জানান, অনুকূল আবহাওয়া ও সঠিক পরিচর্যায় এবার চিনি আতব ধানের ফলন ভালো হয়েছে, এ অঞ্চলের চিনি আতব ধানের মান ভালো হওয়ায় দেশব্যাপী এর ব্যপক চাহিদা রয়েছে, এ ছাড়াও এ এলাকার চালের চাহিদা রয়েছে মধ্যপাচ্যের দেশগুলোতে




সার সঙ্কটে রাজশাহীতে ব্যাহত হচ্ছে আলুচাষ, দামও অতিরিক্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা
রাজশাহীতে আলুচাষের ভরা মৌসুম চলছে। তবে সারের তীব্র সংকটের কারণে চাষিরা হয়ে পড়েছেন দিশেহারা। জমি তৈরির পরও বীজ রোপণ করতে পারছেন না অনেকে। ফলে এবার আলু চাষ না করে সরিষাসহ অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকেছেন কৃৃষকরা।

তবে কৃষি বিভাগ বলছে, সারের বরাদ্দ থাকলেও সরবরাহ খুবই কম। এছাড়া পরিবহণ ঠিকাদার ও ডিলার সিন্ডিকেটের কারণেও সারের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন হাতঘুরে সার চলে যাচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীদের দোকানে। এসব সারই কৃষকদের কিনতে হচ্ছে সরকারি দামের চেয়ে বেশি দামে।

কৃষকদের অভিযোগ, জেলা ও উপজেলায় সার মনিটরিং কমিটি থাকলেও ডিলারদের সঙ্গে কৃষি অফিসের মাঠকর্মীদের জোগসাজশ থাকায় অসাধু ডিলারদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। বিভিন্ন উপজেলায় কৃষকরা সারের জন্য হাহাকার করছেন। কোথাও কোথাও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বস্তায় ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, ডিসেম্বরে রাজশাহীতে ডিএপি সারের চাহিদা ছিল ১৭ হাজার ১২৭ মেট্রিক টন। সেখানে বরাদ্দ এসেছে আট হাজার ১২৪ মেট্রিক টন। অন্যদিকে এমওপির (মিউরেট অব পটাশ) চাহিদা ছিল ১৮ হাজার ৩৭২ মেট্রিক টন। বরাদ্দ পাওয়া গেছে চার হাজার ২৭৮ মেট্রিক টন এবং ট্রিপল সুপার ফসফেট-টিএসপির চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ২১৬ মেট্রিক টন। বরাদ্দ এসেছে মাত্র দুই হাজার ৭৩৭ মেট্রিক টন সার। তিনি আরও জানান, ডিসেম্বরের জন্য বরাদ্দ পাওয়া সার জেলার ২১৮ জন ডিলারের মাঝে সরবরাহ করা হচ্ছে। বুধবার পর্যন্ত সরবরাহ এসেছে তিন হাজার ২৫৪ মেট্রিক টন ডিএপি, দুই হাজার ৩৬৪ মেট্রিক টন এমওপি ও দুই হাজার ৫৩৫ মেট্রিক টন টিএসপি। গুদামে মজুত না থাকায় বরাদ্দ করা সার ডিলারদের মাঝে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

জেলার কেশরহাট এলাকার কৃষক রায়হান আলী জানান, গত বছর তিনি আট বিঘা জমিতে আলু করেছিলেন। এবার সার সংকটের কারণে করছেন তিন বিঘায়। কোথাও সার মিলছে না। আবার দামও অনেক বেশি। প্রতি বস্তায় সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দিয়েও সার পাওয়া যাচ্ছে না।

ভুক্তভোগী কৃষকরা আরও জানান, কৃষক পর্যায়ে ৫০ কেজির এক বস্তা ডিএপির সরকারি দাম এক হাজার ৫০ টাকা। এ সার খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪৫০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায়। টিএসপির সরকারি দাম এক হাজার ২৫০ টাকা হলেও খুচরা বিক্রেতারা আদায় করছেন এক হাজার ৭০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত। পটাশের সরকারি দাম এক হাজার টাকা, তবে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় বর্তমানে কৃষকরা কিনছেন এক হাজার ৩৫০ টাকা থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায়। রাজশাহীর তালতলী বাজারের খুরচা সার বিক্রেতা ইব্রাহিম হোসেন জানান, ১৬ ডিসেম্বর তিনি একজন ডিলারের কাছ থেকে কিছু সার কিনেছেন। তার কাছে দাম ধরা হয়েছে ডিএপির প্রতি বস্তায় এক হাজার ৩৫০ টাকা, টিএসপি এক হাজার ৬৫০ টাকা ও এমওপি এক হাজার ২০০ টাকা। তার গাড়ি ভাড়া লেগেছে বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা। এখন কৃষকদের কাছে বিক্রি করছেন বস্তায় ১৫০ টাকা বেশি দামে। গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের বিএডিসির সার ডিলার মেসার্স হিমেল ট্রেডার্সের মালিক হুমায়ুন কবির বলেন, গত ১৫ দিনে বরাদ্দ হওয়া ডিএপির ৪৫ মেট্রিক টনের জায়গায় পেয়েছেন মাত্র সাত মেট্রিক টন, এমওপির ২৮ মেট্রিক টনের স্থলে পেয়েছেন আট মেট্রিক টন এবং টিএসপির ২০ মেট্রিক টনের জায়গায় পেয়েছেন মাত্র পাঁচ মেট্রিক টন। ২ ডিসেম্বরের পর গুদাম থেকে তিনি আর কোনো সারই পাননি। ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী শাখার সভাপতি আবু কালাম বলেন, গোডাউনে সার সরবরাহ নেই। ডিলাররাই যদি না পায় কৃষক পাবেন কীভাবে। কোনো সিন্ডিকেট হচ্ছে না বলে দাবি করেন সার ডিলার সমিতির এই নেতা। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ৩৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হচ্ছে। আলু আবাদকে সামনে রেখে বিভিন্ন ধরনের সারের বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল কিছুটা বেশি। কিন্তু বরাদ্দ অনেক কম পাওয়া গেছে। কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা সার সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, বরাদ্দ ও সরবরাহ কম আসায় এই সংকট।




রাজশাহীতে বিশাল মালটা ও কমলার বাগান

জন্মভূমি নিউজ ডেক্স
রাজশাহী শহর থেকে মাত্র বিশ কিলোমিটার পূর্বে চারঘাট উপজেলা। এই উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের একটি গ্রামে মাল্টা, কমলা ও পেয়ারার বাগান করেছেন হানিফ নামের এক উদ্দ্যেক্তা এবং ব্যবসায়ী। তার পুরো বাগানজুড়ে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে হলুদ রঙের মাল্টা ও কমলাগুলো। যা এক দেখাতেই সবার নজর কাড়বে।

২০১৬ সালে বাবার পেয়ারা বাগান দেখে উদ্বুদ্ধ হন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া হানিফ। সেই পেয়ারা বাগানেই রোপন করেন মাল্টা ও কমলার চারা। বছর দুয়েক না জেতেই ধরা পড়ে মাল্টা ও কমলার। শুরুর বছরে কম আসলেও এখন গাছ ভর্তি মাল্টা আর কমলা সোভা পাচ্ছে। সফল এই উদ্দ্যোক্তা লেখাপড়া শেষ করে চাকুরির পিছনে না ছুটে হাল ধরেছেন বাবার পেয়ারা বাগানের। সেই পেয়ারা বাগানকে সাজিয়েছেন মাল্টা ও কমলা দিয়ে। কয়েক বছর ঘুরতেই বাজিমাত করেছেন তিনি।

এখন তিনি সফল উদ্দ্যেক্তা বা ব্যবসায়ী। শলুয়া ইউনিয়নে মোট ১৬ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ৯ বিঘা জমিতে মাল্টার চাষ শুরু করেছিলেন হানিফ। প্রথমে ১.৫ ফুট উচ্চতার ২০০টি মালটা এবং কমলার চারা লাগিয়ে বাগান তৈরি করেন তিনি। চারাগুলো বিভিন্ন নার্সারী থেকে সংগ্রহ করে বাড়িছেন বাগানের পরিধি। এখন বাগানে রয়েছে ৪০০টির মতো মাল্টা ও কমলার গাছ। তবে ফল ধরেছে ২০০টি গাছে। বাগান থেকেই পাইকারী এবং খুচরাভাবে বিক্রি করছেন এই উদ্যোক্তা। প্রতি কেজি মাল্টা ২০০ টাকা। আর এক মণ মাল্টা ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। হানিফ জানালেন- গাছ রোপনের দুই বছর পর থেকে একটি গাছে কমপক্ষে ৭ থেকে ১০ কেজি মাল্টা পাওয়া যায়। এবং তিন বছরের মাথায় প্রতিটি গাছে ৩৫ থেকে ৪০ কেজি মাল্টা পাওয়া যায়। তবে গাছের পরিচর্যায় কমতি দেওয়া যাবে না