রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় তিন ফসলি জমিতে সংস্কারের’ নামে চলছে অবৈধ পুকুর খননের মহোৎসব। যখন জেলার অন্যান্য উপজেলায় অবৈধভাবে পুকুর খননের বিরুদ্ধে প্রশাসন ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে, তখন চারঘাটে স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যেই চলছে এই অনিয়ম। এতে প্রশাসনের নির্লিপ্ত ভূমিকা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, কোনো প্রকার তদন্ত ছাড়াই পুরাতন পুকুর দেখিয়ে প্রশাসনের কাছ থেকে সংস্কারের অনুমতি নিচ্ছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। পরে সেই অনুমতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তিন ফসলি জমিতে নতুন করে পুকুর খনন করা হচ্ছে। এমনকি লিখিতভাবে একাধিকবার অভিযোগ জানানো হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন।
সরেজমিনে ইউসুফপুর, শলুয়া, নিমপাড়া ও ভায়ালক্ষিপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে—আমবাগানসহ বিভিন্ন ফলজ বাগান কেটে, কখনও আবার সবুজের সমারোহ তিন ফসলি জমিতে চলছে অবৈধ পুকুর খনন। এক সময়ের উর্বর মাঠ এখন শুধুই পুকুরে পরিণত হচ্ছে।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ইউসুফপুরে প্রায় ১০ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করছেন আজাহার আলী। তার দাবি, প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই কাজ করছেন তিনি। শলুয়া ইউনিয়নের জাগীরপাড়ায় পূর্বে প্রশাসনের অভিযানে অবৈধ পুকুর খনন ধরা পড়লেও পরে সেটিকে ‘পুরাতন পুকুর’ হিসেবে দেখিয়ে সংস্কারের অনুমতি নেওয়া হয়। বর্তমানে সেখানে ১২ বিঘা জমিতে চলছে খনন। এই কাজে জড়িত রয়েছেন বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন, মাসুদ রানা ও নাসির উদ্দিন। যদিও তারা প্রশাসনের অনুমতির কথা বলছেন, এলাকাবাসীর দাবি—আসলে চলছে সম্পূর্ণ নতুন খনন।
শলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের কাছেই প্রায় ৮ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করছেন এক প্রভাবশালী ব্যক্তি শামিউল ইসলাম। ফতেপুরে শফিকুল ইসলাম এবং নিমপাড়ার বালাদিয়াড়ে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যরাও জড়িত রয়েছেন তিন ফসলি জমি খননে। ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিন অভিযোগ করেছেন, পুকুর খনন বন্ধে উদ্যোগ নেওয়ায় তিনি প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন।
ভায়ালক্ষিপুর ইউনিয়নে অভিযোগ উঠেছে, একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট পুকুরের মাটি কেটে শত শত ট্রাকে লালপুরের ইটভাটায় বিক্রি করছে। স্থানীয় বিএনপির এক নেতার নাম ভাঙিয়ে দিনের পর দিন চলছে এই কর্মকাণ্ড।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চারঘাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন বলেন, “পুরাতন পুকুর সংস্কারের অনুমতি দেওয়া হলেও কেউ যদি সেই সুযোগ নিয়ে অবৈধভাবে নতুন করে পুকুর খনন করেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুকুর খননের মাটি অন্যত্র বিক্রিরও কোনো সুযোগ নেই। কেউ আইন ভাঙলে মামলা হবে—এ বিষয়ে প্রশাসন কোনো আপস করবে না।”
স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসনের এমন বক্তব্য সত্ত্বেও বাস্তবে কোনো কঠোর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। ফলে অবৈধ পুকুর খননের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।