চট্টগ্রামের মীরসরাইতে অবৈধ বালু ব্যবসার কেলেঙ্কারি: দুই জামায়াত নেতা-কর্মী কে বহিস্কার: এবার বিএনপি’র পালা

দেশের খবর
Spread the love
Print Friendly, PDF & Email
image_pdfimage_print

এম, এ কাশেম, বিশেষ প্রতিনিধি চট্টগ্রাম :: উত্তর চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার অন্তর্গত ফেনী নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে আশপাশের বিভিন্ন মানুষের ঘর-বাড়ি ঐ ফসলি জমি বিলিন করে দেয়ার সিন্ডিকেট ‘রয়্যালিটি কেলেংকারি’র সাথে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগের যথেচ্ছ সত্যতা সাপেক্ষ দুই নেতা-কর্মীর সাথে সম্পর্ক ছিন্নের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশংসায় ভাসছে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি।
সূত্র জানায় আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটার পর পরই বিএনপি’র গুটি কতেক বিপদগামী নেতা-কর্মী এবং জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজন নেতা-কর্মী সমন্বিত একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে ফেনী নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে আসছিলো। এ অবৈধ বালু ব্যবসা করে গত ৮-৯ মাসে লাখোপতি- কোটিপতি বনে গেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্র-সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যপক লেখা লেখি হতে থাকলে তা প্রশাসনের নজরে আসে। মাঝ মধ্যে প্রশাসন নামে মাত্র অভিযান পরিচালনা করে বালু উত্তোলনের সরঞ্জাম জব্দ করে বালু উত্তোলন বন্ধ করার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে আসলে ও তা আলোর মুখ দেখা যায়নি কার্যত। কারণ, হিসেবে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলীয় ব্যানারের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় ওই সব অবৈধ বালু উত্তোলন কারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ও হিমসীম খেতে হয়েছিলো। শেষোতক এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন প্রশাসন ছাড়া ও স্ব স্ব রাজনীতি দলীয় নেতাদের ও হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন। এলাকার বিভিন্ন লোকজনের অভিযোগীয় অনুরোধ ক্রমে মীরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক বিএনপি দলীয় চেয়ারম্যান, মীরসরাই থেকে গত নির্বাচনে বিএনপি থেকে এমপি মনোনয়ন পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কারী ও বর্তমান চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় জেটেব (বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং) নেতা ইঞ্জিনিয়ার ফখরুল ইসলাম সহ অন্যান্য নের্তৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেও তা ও আলোর মুখ দেখেনি। অন্যদিকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক মোঃ নুরুল আমিন সমর্থিত বর্তমান মীরসরাই উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক আবদুল আউয়াল চৌধুরী ও সদস্য সচিব আজিজুর রহমান চৌধুরী ও বিষয়টি ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু, কার্যত কিছুর কিছু-ই হয়নি।
তবে, বালু উত্তোলনের বিষয়টি ব্যাপক আলোচনা-সমালোচলায় ‘টক্ অব দ্য’ জেলা-কান্ট্রিতে পরিনত হওয়ায় অবশেষে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বালু উত্তোলনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে মীরসরাই উপজেলা প্রশাসন।
এদিকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আওয়ামী নেতাদের সাথে বিশেষ সখ্যতার সুবাদে তৎ সময়ে বালু উত্তোলনের ‘নাটের গুরু’ খ্যাত আওয়ামী বালি সিন্ডিকেট এর সাথে জামায়াতে ইসলামীর ক’জন নেতা-কর্মী সখ্যতার সুবাদে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটার পর ওই সব আওয়ামী সিন্ডিকেট বাহিনী পালিয়ে যাওয়ার পর গোপনে তাদের রেখে যাওয়া বালু সিন্ডিকেট পরিচালনার দায়িত্ব নেয় জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজন নেতা-কর্মী। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাহাঙ্গীর হুজুর ও রবিউল হোসেন। প্রত্যেক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, জামায়াতে ইসলামীর উক্ত দুই নেতা-কর্মী জাহাঙ্গীর হুজুর ও রবিউল হোসেন গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মীরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং উপজেলার ১ নং করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন দল থেকে মীরসরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় তারা প্রকাশ্যে তার পক্ষে নির্বাচনে কাজ করে ব্যাপক ভাবে আলোচনা সমালোচনার জন্ম দেয়। আর সে কারণে জামায়াত-শিবিরের কিছু নেতা-কর্মী তাদের ওপর অসন্তুষ্ট ছিলেন। আর সেই সূত্র ধরে বর্তমান সময়ে ব্যাপক কেলেংকারী যুক্ত
অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ উঠায় মীরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের ওই দুই জামায়াত নেতা-কর্মীর সাথে সাংগঠনিক তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত। এমন খবরটি ও রিতিমত মীরসরাই উপজেলার রাজনৈতিকাঙ্গনে ‘হট কেক’ এর মতো হয়ে পড়েছে। আলোচিত-সমালোচিত উক্ত দুই জামায়াত নেতা-কর্মীরা হলেন, মীরসরাই উপজেলার ১ করেরহাট ইউনিয়নের ছত্তরুয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন, প্রকাশ জাহাঙ্গীর হুজুর ও অপরজন হলেন এক- ই ইউনিয়নের জয়পুর পূর্ব জোয়ার গ্রামের রবিউল হোসেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ নিজস্ব তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এ ছাড়া অভিযুক্ত আরো কয়েকজনের ব্যাপারে তদন্ত চলছে বলে ও দলটির বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বিকেলে করেরহাট গণিয়াতুল উলুম হোসাইনিয়া আলিম মাদ্রাসার হল রুমে কর্মী সম্মেলনে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত জামায়াত- শিবির নেতা-কর্মীরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, জামায়াত-শিবিরের কোনো নেতা-কর্মী অবৈধ কোনো কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকল কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে তাদের বিরুদ্ধে।
প্রাসঙ্গিক ক্রমে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জামায়াতের আমির আলাউদ্দিন শিকদার বলেন, যারা সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করেছে এবং করবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা রয়্যালিটি তথা বালুর সিন্ডিকেট এর সাথে যোগসাজশ রেখে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার কাজ লিপ্ত থাকবে তাদের কে কোনো ক্রমেই ছাড় দেয়া হবে না।
তবে, তিনি বলেন, যে বা যারা অবৈধ কর্মকাণ্ড চালাবে তার দ্বায় ভার তারা-ই বহন করবে বাট দল তা বহন করবে না। তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, প্রয়োজনে পাঁচ জন কর্মী নিয়ে সংগঠন চলবে তবুও অবৈধ উপার্জনের সাথে যুক্ত কাউকে জামায়াতে স্থান দেয়া হবে না। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তিনি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নের্তৃবৃন্দকে নির্দেশনা প্রদান করেছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
উক্ত বৈঠকে অবৈধ বালু ব্যবসার সাথে জামায়াতের সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে যারা বালু ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সিন্ডিকেটে যোগ দিয়ে আর্থিক সুবিধা নিয়েছে তাদেরকে অর্জিত সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত দিয়ে সিন্ডিকেট থেকে বেরিয়ে আসার নির্দেশনা ও দেয়া হয়েছে।
সংগঠনের এই সিদ্ধান্তে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। গুটিকয়েক জামায়াত নামধারী সুবিধাবাদী ব্যক্তির কারণে এলাকায় সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ায় সম্প্রতি নেতা-কর্মীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিলো। স্থানীয় কর্মীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরিচালিত সাংগঠনিক তদন্তে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বালু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছ থেকে জামায়াতের পরিচয় ব্যবহার করে অন্যায্য সুবিধা আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
এ প্রসঙ্গে-অভিযুক্ত রবিউল হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বালু ব্যবসায়ের সাথে জড়িত যে তা ঠিক। তবে,তা আমাদের নিজস্ব ব্যবসা এটি। আমরা কোনো সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে রয়্যালিটি নেই নাই। এটা আমাদের ব্যবসায়ের অংশ। এর বেশি কিছু বলতে হলে সাংবাদিকদের সরাসরি এসে কথা বলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি। তারপর সবাইকে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলতে পারবো বলেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় সাংবাদিকরা জাহাঙ্গীর হুজুরকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে ১নং করেরহাট ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মাষ্টার ফখরুল আলম ভূঁইয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ বিষয়ে আমি কোনো মতামত দিতে পারবোনা। এটা আমাদের থানা আমির দায়িত্ব নিয়েছেন। উনি সিদ্ধান্ত নিবেন ও বিস্তারিত বলবেন ‌।
স্থানীয় জোরারগঞ্জ থানা জামায়াতের আমির নুরুল হুদা হামিদী জানান, জামায়াতে ইসলাম কোনো রয়্যালিটি গ্রহণ করে নাই। যারা করছে তারা ব্যক্তিগত ভাবে নিয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে এবং তা প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। এবং তারা এখন জামায়াত-শিবিরের দায়িত্বশীল কেউ নয়। এই বিষয়গুলো বৈঠকে জনশক্তিদের জানিয়ে দিয়েছেন বলে ও জানান তিনি।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জামায়াত তাদের দুই নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ও বিএনপি’র পক্ষ থেকে কোনো নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
সাধারণ মানুষ মনে করছে- জামায়াত তাদের দুই নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ভাবে যে ব্যবস্থা নিয়ে প্রশংসায় ভাসছে অনুরূপ বিএনপি ও যদি অবৈধ বালু উত্তোলন ব্যবসার সাথে জড়িত নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় তাহলে বিএনপি ও প্রশংসায় ভাসবে সবার কাছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *