আলুর বস্তার ওজন ৫০ কেজি চান রাজশাহীর হিমাগার মালিকরা

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোল্ড স্টোরেজে হামলার প্রতিবাদ এবং শ্রম আইনের আলোকে আলু সংরক্ষণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
করেছে রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশন।
বুধবার দুপুর ১টায় নগরীর চেম্বার অব কমার্সের মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পাঠে জানোনো হয়,
দীর্ঘ সময় থেকে রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়শেন এ অঞ্চলের কৃষি এবং কৃষকের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। আলু সংরক্ষণে আমরা সবসময় কৃষক এবং ব্যবসায়ীদের চাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করি। কিন্তু সম্প্রতি একটি বিশেষ মহল তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থের জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। কয়েকটি কোল্ড স্টোরেজে ইতোমধ্যে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের মত ভয়াবহ ঘটনাও ঘটিয়েছে। এর ফলে এ শিল্পে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে বলে আমরা গভীরভাবে আশঙ্কা করছি। বিষয়গুলো আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসী এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে অবহিত করতে চাই। আমাদের আহবানে সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার জন্য আপনাদের প্রতি আমরা প্রথমেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
রাজশাহী জেলায় বর্তমানে ৩৬টি কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। কোল্ড স্টোরেজের মালিকরা এ খাতে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। প্রত্যেকটি কোল্ড স্টোরেজে ৪০ জন কর্মকর্তা এবং কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। এ হিসেবে প্রায় দেড় হাজার মানুষের প্রত্যক্ষভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে। শ্রমিক রয়েছেন প্রায় ১১ হাজার। এছাড়া প্রায় দুই লাখ কৃষক এবং ব্যবসায়ী এ কর্মকাণ্ডের সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। রাজশাহীর ৩৬টি কোল্ড স্টোরেজের মোট ধারণক্ষমতা ৯৫ লাখ বস্তা। এ পরিমাণ বস্তায় ৫ লাখ টন আলু সংরক্ষণ করা হয়।

কোল্ড স্টোরেজগুলোর অধিকাংশই জেলার পবা, তানোর, মোহনপুর, বাগমারা ও দুর্গাপুর এলাকায় অবস্থিত। চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৩৭ হাজার ৬৬৭ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। এই পরিমাণ জমি থেকে ১০ লাখ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই চলতি মৌসুমে কোল্ড স্টোরেজগুলোতে সংরক্ষণ করা হবে। আমরা আলু সংরক্ষণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে কোল্ড স্টোরেজগুলো পরিচালনা করছি।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয় কোল্ড স্টোরেজ ব্যবস্থাপনা ব্যয় ইতোমধ্যে কয়েকগুন বেড়েছে। গত আট বছর আগে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিল ছিলো চার টাকা। বর্তমানে সেটি তিনগুন বেড়ে প্রতি ইউনিট হয়েছে ১২ টাকা। কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের বেতনভাতা মাত্র কয়েক বছরে আট হাজার থেকে বেড়ে চারগুন হয়েছে। বর্তমানে একজন কর্মকর্তা এবং কর্মচারীকে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন প্রদান হয়। শ্রমিকের মজুরি কয়েক বছরে বস্তাপ্রতি পাঁচ টাকা থেকে বর্তমানে ৩০ টাকা হয়েছে। ব্যাংকের সুদের হারও গত বছর ছিলো নয় শতাংশ। বর্তমানে এটি ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একারণে কয়েকটি কোল্ড স্টোরেজ বর্তমানে ঋণখেলাপির পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া ডলারের মূল্যমান টাকার বিপরীতে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণে যন্ত্রপাতির দামও বেড়েছে কয়েক গুন। ফলে কোল্ড স্টোরেজ

পরিচালনায় আমরা চরম বেকায়দায় পড়েছি। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমরা অচিরেই আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে পড়ব বলে আশঙ্কা করছি। পাশাপাশি কোল্ড স্টোরেজগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
এমতাবস্থায় আমরা আলু সংরক্ষণে বস্তাপ্রতি ভাড়া সামান্য কিছু বৃদ্ধি করেছি। গত বছর ৫০ কেজির বস্তাতে ৩৪০ টাকা ভাড়া নেওয়া হত। এর ফলে কেজি প্রতি সংরক্ষণে খরচ পড়ত প্রায় সাত টাকা। কিন্তু কোল্ড স্টোরেজ ব্যবস্থাপনা ব্যয় বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ কোল্ড ষ্টোরেজ এসোসিয়েশন (BCSA) চলতি মৌসুমে কেজি প্রতি ভাড়া নির্ধারণ করেছে সর্বোচ্চ আট টাকা। এরপরেও কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত রয়েছে এ এসোসিয়েশনের সদস্যরা এর চেয়েও কম ভাড়ায় তারা নিজস্ব সিদ্ধান্তে আলু সংরক্ষণ করতে পারবেন।

রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজের এ ধরনের সহনশীল সিদ্ধান্তের পরেও সম্প্রতি তানোর উপজেলার ছয়টি কোল্ড স্টোরেজের অন্যায্য দাবি নিয়ে কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের মত ভয়াবহ ঘটনা ঘটিয়েছে। এ অবস্থায় আমরা মাননীয় জেলা প্রশাসককে বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করেছি। সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। এরপরেও তারা আরও ক্ষতিসাধণের জন্য হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় কোল্ড স্টোরেজ মালিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিক ও কৃষকসহ সংশ্লিষ্টরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। এমতা অবস্থায় তদন্তের সাপেক্ষে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে বিচারের জোর দাবি জানাচ্ছি।

ওই স্বার্থান্বেষি মহলটি প্রতি বস্তায় ৫০ কেজির স্থলে ৭০ থেকে ৮০ কেজি আলু সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরেজের মালিকদের অব্যাহত চাপের মুখে রেখেছেন। এটি দেশের প্রচলিত শ্রম আইনের পরিপন্থী। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ৭৪, শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এর বিধি-৬৮ (ট) এবং মহামান্য সুপ্রিম কোটের হাইকোট বিভাগে দায়ের কৃত রিট পিটিশন ১৭৬১/২০১৭ এ প্রদত্ত গত ০৫-০৩-২০১৮ তারিখের রায় মোতাবেক কোন শ্রমিককে তার ক্ষতি হতে পারে এমন কোন ভারী জিনিস উত্তোলন, বহন করা যাবে না। বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এর বিধি ৬৩ অনুযায়ী কোন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিককে ৫০ কেজি ওজনের অতিরিক্ত ওজন বিশিষ্ট কোন দ্রব্য, যন্ত্রপাতি, হাতিয়ার বা সরঞ্জাম কারো সাহায্য ব্যাতিত হাতে বা মাথাই করে উত্তোলন বহন বা অপসারনের উদ্দেশে নিয়োগ না করার বিধান রয়েছে। কিন্তু এ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ওই মহলটি বস্তায় ৫০ কেজির পরিবর্তে ৭০ থেকে ৮০ কেজি সংরক্ষণের জন্য নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে। আমরা শ্রম আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যথাযথ আইনের মধ্যে থেকেই আমরা কোল্ড স্টোরেজগুলো পরিচালনা করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারক মহলের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।