রাজশাহী সিটি হাট: টোকেনে দেশি গরুতেও চাঁদা তুলছেন আ.লীগ কর্মীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা
রাজশাহী মহানগরীর সিটি বাইপাস গরুর হাটে খামারি ও ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে ব্যাপক হারে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নির্ধারিত টোল বা হাসিলের বাইরে প্রতিটি দেশি গরু থেকেও ছাড় বা বিজিবি টোকেনের নামে ২০০ টাকা করে চাঁদা তোলা হচ্ছে। আর হাসিল আদায় করা হচ্ছে ৭০০ টাকা করে। তবে অতিরিক্ত ২০০ টাকা চাঁদা না দিলে ভারতীয় গরু বলে গরু আটক কর দেয়া হবে বলে ভয়ভীতি দেখানো হয় ব্যবসায়ী ও খামারীদের। এ চাঁদা তুলছেন আওয়ামী লীগের কর্মীর। ভাগ খাচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরাও।
বাধ্য হয়ে ভারতীয় গরু না হলেও বাড়িতে পালনকৃত দেশী গরুতেও ২০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হচ্ছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে গত রবিবার কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে হাতাহাতিতেও জড়িয়ে পড়েন চাঁদা আদায়কারীরা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সপ্তাহে রবিবার এবং বুধবার দুইদিন গরু কেনাবেচা হয় এই সিটি হাটে। আর প্রতি হাটে সরকারি নির্ধারিত টোলের বাইরে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করা হচ্ছে এখানে। গত ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগ নেতারা জিম্মি করে চাঁদা আদায় করতেন ব্যবসায়ী ও খামারীদের নিকট থেকে। এখন আওয়ামী লীগ-বিএনপি মিলেমিশে চাঁদাবাজি করছেন। পাঁচ আগস্টের পরে মাঝে কয়েকদিন দেশি গরু থেকে দেশি গরু থেকে অতিরিক্ত ২০০ টাকা করে চাঁদা তোলা বন্ধ ছিল। কিন্তু গত মাসখানেক ধরে আবারও সেই চাঁদা তোলা হচ্ছে
একটি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নাম করে। অথচ আদৌ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বা সরকারি কোষাগারে কোনো টাকা তারা জমা দেন না চাঁদা আদায়কারীরা। এর বাইরে ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের নামে আদায় হচ্ছে ট্রাকপ্রতি ৩০০ টাকা করে। এছাড়াও হাসিলের নামে গরুপ্রতি বিক্রেতার নিকট থেকে ২০০ টাকা এবং ক্রেতার নিকট থেকে ৫০০ টাকা করে নেয়া হয়। সবিমিলিয়ে এ হাটে গরুপ্রতি শো টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। এসব পুরো টাকায় হাটে নিয়ন্ত্রণকারী আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতাকর্মীরা ভাগ-বাটোযারা করে নেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশী গরু থেকে ২০০ টাকা করে চাঁদার নিয়ন্ত্রণ করছেন পবার দামকুড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলামের ভাই আওয়ামী লীগ কর্মী শরীফুল ইসলাম। তার নেতৃত্বে প্রতিদিন এ হাট আসা খামারে বা বাড়িতে পালনকৃত দেশি গরু থেকেও জোর করে চাঁদা তোলা হচ্ছে।
গত রবিবার এই হাটে গরু বিক্রি করতে আসা পবার দারুশা এলাকার হযরত আলী বলেন, আমি হাটে দুটি গরু নিয়ে অ্যাসেছিলাম বিক্রি করতে। প্রতিটি গরুর জন্য আমাকে ২০০ টাকা করে হাটের ইজারাদারকে হাসিল দিতে হয়েছে। আমার মত শত শত খামারি ও ব্যবসায়ীরা দেশি গরু পালন করে বা গ্রাম থেকে কিনে এনে এ হাটে বেশি দামের আশায় বিক্রি করতে আসেন গরু। কিন্তু সমস্ত দেশি গরুর থেকেও এখন অতিরিক্ত ২০০ টাকা করে চাঁদা তোলা হচ্ছে ছাড় বা বিজিবি টোকেনের নামে । গরুর ক্রেতারা এই চাঁদা দিলেও মূলত সেটির প্রভাব গিয়ে খামারি বা বিক্রেতার ঘাড়েই পড়ছে। কারণ ওই ২০০ টাকা চাঁদা না দিতে হলে সেটি বেশি পেতেন বিক্রেতা। চাঁদার কারণে সেটি মাথায় রেখে গরু কিনেন ক্রেতারা।’
আরেক গরু বিক্রেতা মনসুর রহমান বলেন, হাটে এখন ভারতে গরুর আসে না বললেই চলে। তারপরেও প্রতিদিন যেসব গরু আসে সেসব গরু থেকে ভারতীয় গরুর নাম করে জোর করে ২০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
খামারী আজিজুল ইসলাম বলেন, দুই বছর ধরে বাড়িতে পালন করা একটা গরু নিয়ে আসি সিটি হাটে বিক্রি করতে। বিক্রি করার পর আমার ওই গরুও ভারতের গরু বলে ২০০ টাকা চাঁদা নিছে ব্যবসায়ীর কাছ। ওই চাঁদা না দিলে আমি ২০০ টাকা বেশি পেতাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘মাঝে কয়েকদিন বিজিবি টোকেনের নামে ২০০ টাকা আদায় বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন আবার জোর করে নেয়া হচ্ছে। কেউ কিছু বলার নাই। ‘
শরিফুল ইসলাম দেশি গরুর থেকেও টোকেনের নামে ২০০ টাকা করে চাঁদা তোলার কথা স্বীকার করে বলেন, এই টাকা হাটের নিয়ন্ত্রণকারীদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা হয়। এখানে আমার একক কর্তৃত্ব থাকে না।’
হাটের নিয়ন্ত্রণকারী অন্যতম ইজারাদার ও বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘হাটে একেক জন একেক ভাবে টাকা তুলছে। সব বিষয়ে আমাদের মাথায় আসে না। তবে বিজিবি টোকেনের নামে ২০০ টাকা করে চাঁদা তোলা হলে সেটি আমি দেখব। এই টাকা আমরা তুলি না।’
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজিবি একজন কর্মকর্তা জানান, হাট থেকে গরুর টোকেনের নামে কোন টাকা আদায়ে বিজিবি কোনোভাবেই জড়িত নয়। এটি যারা করছে, তারা মূলত চাঁদাবাজ।